শওকতআলী: আর মাত্র ৬ দিন পর মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই তো চাঁদপুরের কামারপাড়াগুলোয় ব্যস্ত সময় পার করছেন সবাই। দেখে মনে হয় দম ফেলারও সময় নেই। দিন-রাত দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি বানাতে নির্ঘুম ব্যস্ততায় সময় কাটছে তাদের। চাহিদামতো নির্দিষ্ট সময়ে এসব কামার সরঞ্জামাদি ক্রেতাদের হাতে তুলে দিতে যেন ঘুম নেই কারো চোখে। একটানা চাঁদরাত পর্যন্ত চলবে এ ব্যস্ততা।
শহরঘুরে দেখা যায়, শহরের তালতলা, বিষ্ণুদী, কুমিল্লা রোড, উকিলপাড়া, বকুলতলা রোড ও পুরানবাজারের বিভিন্ন এলাকার কামারপাড়াগুলোয় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কামার শিল্পীরা দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি বানানোর কাজে ব্যস্ত। রাত-দিন টুং-টাং শব্দে মুখরিত এসব এলাকা। কারিগররা স্থানীয় বাজার থেকে লোহা কিনে সেগুলো পুড়িয়ে দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতি ইত্যাদি তৈরি করছেন। এ ছাড়া ক্রেতাদের চাহিদামতো পুরনো সরঞ্জামাদিও মেরামতে ব্যস্ত তারা। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দিন চললেও কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প।
এছাড়া মতলব উত্তরের চেঙ্গাচর বাজার, লুতুরদি, কালিপুর, কালিপুর বাজার, সুজাতপুর, আনন্দবাজার ও হাজীগঞ্জের রামপুরসহ কামার পাড়াগুলোতেও ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে। তবে মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হওয়ায় ওইসব এলাকায়ও আগের তুলনায় কামার শিল্পে কিছুটা ধস নেমেছে বলে কামার শিল্পীরা জানান।
শহরের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার চাঁদপুর কর্মকার স্টোরের রবি কর্মকার ও তালতলার শংকর স্টোরের গোপাল চন্দ্র কর্মকার জানান, বংশপরম্পরায় তারা কামারের কাজ করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, দক্ষ শ্রমিকের অভাব ও পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে নিম্নমানের এসব সরঞ্জামাদি চোরাইপথে আসায় অনেকেই এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তবে সারা বছর তেমন কাজ না থাকলেও কোরবানির সময় আমাদের হিমশিম খেতে হয়।
অন্য কামাররিরা জানান, ঈদ উপলক্ষে কাজ বেড়েছে। অর্ডার অনেক বেশি। প্রতিবছরই কোরবানির ঈদে এমন চাপ বাড়ে। কষ্ট হলেও যথাসময়ে ক্রেতাদের মাল বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। ক্রেতারা জানান, প্রতিবছরের ন্যায় এবারো দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে কিন্তু কী করব, এখন এসব যন্ত্রের প্রয়োজন, তাই কিনতে হচ্ছে। যদিও অনেকেই এসব প্রয়োজনীয় জিনিস না কিনে আগের গুলো মেরামত বা ধারালো করে নিচ্ছেন।