গলিয়া পহেলা বৈশাখের একটি গ্রাম্য মেলার নাম। বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনটিই বহু কাংখিত গলিয়ার দিন। এই দিনটির জন্য সকলের প্রস্তুতি থাকে ৪/৫ মাস আগ থেকেই। এ কারণে পহেলা বৈশাখের প্রথমদিনটিকে সবাই এক সময় জানতেন গলিয়া নামে।
চাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বৈশাখ মাস জুড়ে অনুষ্ঠিত হয় গলিয়া। বাঙালি সংস্কৃতির শত বছরের ঐতিহ্য গ্রামীণ বৈশাখী উৎসব ‘গলিয়া’ কালের আর্বতে ক্রমাম্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্য রক্ষায় এবং নতুর প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্যে চাঁদপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দু’দিন ব্যাপি ১৩ ও ১৪ এপ্রিল ‘গলিয়া’র আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে।
গলিয়ায় থাকবে ‘পুঁথিপাঠ, গাজির পট, বাউল গান, জারি-সারি গান, বায়স্কোপ, পালকিতে বর-কনে সাজা, সাপ ও বেজির খেলা, মার্বেল খেলা, হা ডু ডু, গোলাছুট, দাড়িয়া বান্দা’ ইত্যাদি। এছাড়া মাটির হাঁড়ি-পাতিলসহ তৈজসপত্র, সংসারের প্রয়োজনীয় টুকিটাকি, খেলনা, বেতের ঝুড়ি, কাঁচের চুড়ি, মোড়া, বেলুন, পিঁড়ি, চিড়া, মুড়ি, খই, জিলাপিসহ নানাহ জিনিসের পসরা সাজানো হবে।
শিক্ষাবিদ প্রফেসর মনোহর আলী বলেন, বৈশাখ জুড়ে বিভিন্ন এলাকা ও গ্রামে গ্রামে প্রতিদিনই চলে গলিয়া নামে খ্যাত গ্রামীণ মেলা। বিশেষ করে ঐতিহ্যবাহী মন্দির, বিদ্যালয় ও মহল¬াভিত্তিক দিনব্যাপী এ গলিয়াখ্যাত গ্রামীণ মেলাগুলোতে রয়েছে প্রাণের স্পন্দন। দেশীয় ঐতিহ্যের পরতে পরতে ঠাসা সবার যেনো মিলনমেলা। দোকানিরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে গলিয়ায় অংশ নেয় উৎসবের রঙ গ্রামীণ অর্থনীতিতে।
প্রবীণ সাংস্কৃতিক সংগঠক জীবন কানাই চক্রবর্তী বলেন, গলিয়ায় নতুন বছরের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে শত শত দোকানি এসে মাটিতে বসে পড়ে। নেই ভাড়ার উৎপাত। প্রতিটি গলিয়ায় দর্শনার্থী ও ক্রেতার ভিড় দেখা যায়। বছরের এ সময়টাতে গ্রামাঞ্চলের অনেকেই তাদের প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র কিনে রাখেন। কারণ হরেক রকমের সামগ্রী পাওয়া যায় গলিয়ায়। মাটির জিনিস, বাঁশ-বেতের সামগ্রী, খেলাধুলা, খাবার সামগ্রী থেকে সব কিছুই উঠে গলিয়ায়। স্বল্পমূল্যে হরেক রকমের বাহারি জিনিস পেয়ে খুশি থাকে ক্রেতারা। অন্যদিকে ক্রেতাদের উপস্থিতিতে পর্যাপ্ত বেচাকেনায়ও খুশি থাকে বিক্রেতারা। সেই সাথে দেশীয় হারিয়ে যেতে বসা খেলাধুলা দেখেও মিলছে প্রানের স্পন্দন।
আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অ্যাড. সেলিম আকবর জানান, আধুনিকতার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলার শত শত বছরের ঐতিহ্য গলিয়া যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। ঐতিহ্য রক্ষায় এবং নতুর প্রজন্মের কাছে তা’ তুলে ধরার জন্যে চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ‘গলিয়া’র আয়োজন করা হয়েছে।