সরকারের কঠোর নজরদারিতে রয়েছেন ২১ জেলার ডিসি। দেশে কয়েক দিনের সহিংস ঘটনায় বিজিবি ও সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে মাঠ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে খোঁজ নেয়া শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, নওগাঁ, নরসিংদী, ফেনী, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, নাটোর, গাইবান্ধা, কুমিল্লা, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, সিলেট, চাঁদপুর ও বগুড়া জেলার ডিসি ও এসপিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার আমলনামা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়েছে।
এসব জেলা মধ্যে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলার ডিসি’র ওপর সরকার সবচেয়ে বেশি নাখোশ। এর মধ্যে দুই জেলার ডিসি সেনাবাহিনী নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। সরকারের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে আদৌ ওই সব জেলায় সেনা নিয়োগের প্রয়োজন ছিল কিনা। সমপ্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাতক্ষীরার ডিসি’র সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলেন। ডিসিকে তারা বলেন, শুনেছি তোমার ও তোমার বাংলোর নিরাপত্তার জন্য একজন মাত্র পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। তোমার ওপর হামলা হলে সরকার নাজুক পরিস্থিতিতে পড়বে। এটা ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া, যেসব জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েনের জন্য বলা হয়েছিল ওই সব জেলার ডিসিদের মোটিভ সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২১ জেলার সংশ্লিষ্ট কোন কর্মকর্তা নিজ দায়িত্ব পালনে সামান্যতম হেলাফেলা করলে তাকে সরিয়ে দেয়া হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীদের ভূমিকাও পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া নিয়ে সরকার সবচেয়ে বেশি নাখোশ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের রিপোর্টে বলেছে, স্থানীয় জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন উভয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয়। অর্থাৎ বগুড়ার ডিসি-এসপি দু’জনেই পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হন। ডিসি হওয়ার জন্য একজন কর্মকর্তার যে শক্ত মনোবল থাকা দরকার তা তার নেই। তাদের দু’জনকেই শিগগিরই প্রত্যাহার করা দরকার।
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, যেসব জেলায় সহিংসতা হয়েছে ওইসব এলাকার পুরো পরিস্থিতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তরের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ওদিকে দেশের মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের চাঙ্গা করে তুলতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনার অফিসে সরকারি- বেসরকারি দপ্তর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক বিষয়াদি নিয়ে দফায় দফায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এসব সভার আলোচনায় বলা হয়, জেলা প্রশাসকেরা পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ফোর্স (এপিবিএন) চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে অনুরোধ জানানো হবে। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় প্রয়োজন মনে না করলে ডিসি অফিস আগ বাড়িয়ে সেনাবাহিনী চাইতে পারবে না।