শওকত আলী:
ভরা মৌসুমেও ইলিশ নেই পদ্মা ও মেঘনার মোহনা চাঁদপুরে। যদিও সেখানকার ইলিশ সমাদৃত দেশজুড়ে। কিন্তু সেই চাঁদপুরের মানুষের পাতেই ইলিশের পরিবর্তে পড়ছে জাটকা।
জানা যায়, তিনমাস আগেও জেলেরা নদীতে জাল পেতে পায়নি সেই কাঙ্খিত ইলিশ। আশায় ছিল আগস্ট মাস থেকে ইলিশ ধরা পড়বে। নদীতে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা চষে বেড়ালেও ইলিশের দেখা মিলছে না। আর যেসব জেলে কারেন্ট জাল ব্যবহার করেন তারা পাচ্ছেন ৬ থেকে ৭ ইঞ্চি সাইজের জাটকা। পদ্মা-মেঘনা নদীতে চলছে ইলিশের আকাল।
তবে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ছোট-বড় সাইজের ইলিশে ভরপুর শহরের বড় স্টেশন মৎস্য আড়ৎ। জেলেপাড়া ও আশপাশের বাজারগুলোতে ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
শনিবার সকালে চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া বাজার এলাকার জেলেপাড়ার জেলেদের সঙ্গে ইলিশ আহরণ নিয়ে কথা হয়। অধিকাংশ জেলেরাই এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন।
জেলে দুলাল গাজী বলেন, রাতে ৭-৮ জন জেলে একসঙ্গে নৌকা নিয়ে ইলিশ শিকারে নামেন। জ্বালানিসহ যে টাকা খরচ হয়, তাতে তাদের দৈনিক হাজিরার টাকাও হয় না। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে ভোর পর্যন্তইলিশ শিকারে নেমে পেয়েছেন ছোট সাইজের ৬ হালি ইলিশ। বিক্রি করেছেন ৮শ’ টাকা।
একই এলাকার জেলে মো. ইউনুছ মিয়া বলেন, কয়েক মাস আগে জাটকা রক্ষা অভিযান ছিল। অভিযান শেষ হলো কিন্তু ইলিশের দেখা মিলে না। এখন ইলিশের মৌসুম, কিন্তু সাগর থেকে উজানে ইলিশ আসার পথ নেই। সাগর থেকে আসার পথেই হাজার হাজার নৌকা আর জেলে ইলিশ শিকার করছে। তারপরে রয়েছে মেঘনা নদীর বিভিন্ন স্থানে ডুব চর। তাই আমাদের এখন সংসার চালাতে কস্ট হচেছ।
ওই এলাকার খুচরা ইলিশ বিক্রেতা কাশেম গাজী বলেন, প্রতি বছর এ মৌসুমে এখানে বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হতো। এখন বড় সাইজের ইলিশের তো দেখাই মিলছে না। জেলেরা জীবন বাঁচাতে জাটকা আহরণ করছেন। আর জাটকা ইলিশই আমাদের বিক্রি করতে হয়। প্রতি কেজি আড়াইশ’ থেকে ৩শ’ টাকা বিক্রি করি। ক্রেতাদের মাছের চাহিদা মেটাতে বাজারে বিক্রি হচ্ছে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া।
ইলিশ আড়তদার সোলেমান মাঝি জানান, আগস্ট মাসে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়বে, সেই আশায় ছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। বাকী সময়ে ইলিশ পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ ধরা পড়ছে প্রচুর। কিন্তু পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশের সংখ্যা খুবই কম। এ কারণে চাঁদপুরের মৎস্য আড়তে বেশিরভাগ দক্ষিণাঞ্চলীয় ইলিশ আমদানি হচ্ছে।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান বলেন, আগস্ট মাস থেকে ইলিশ মৌসুম শুরু হলেও সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ইলিশ বেশি পাওয়া যায়। আমরা আশা করছি ঠিক সময়ে ইলিশ ধরা পড়বে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখন থেকেই ইলিশ ধরা পড়ছে। পদ্মা-মেঘনা নদীতে ইলিশ দেরিতে আসার বিষয়টি ডুব চর ও বুড়িগঙ্গা নদীর ময়লা আবর্জনার কারণেও হতে পারে। ইলিশ মাছ তাদের অনুকূল পরিবেশেই থাকতে পছন্দ করে। সেপ্টম্বরে আশানুরুপ ইলিশ ধরা পড়ার সম্বাবনা অনেক বেশী।