মিজান লিটন ==
‘এসো মিলি মুক্তির মোহনায়’ এ শ্লোগানকে ধারণ করে চাঁদপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত স্থান চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জেলাবাসীর প্রাণের উৎসব ঐতিহ্যবাহী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা আজ ১ ডিসেম্বর রোববার থেকে শুরু হলেও এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে ৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে। আজ সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে মেলার কার্যক্রমের শুভ সূচনা করবেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন। উপস্থিত থাকবেন পুলিশ সুপার, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেৃতৃবন্দসহ অতিথিবর্গ ও বিজয় মেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর মুক্ত দিবসে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। এদিন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যানের সভাপ্রধানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও বিজয় মেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ডাঃ দীপু মনি মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার সম্ভাবনা রয়েছে। বিজয় মেলা মঞ্চে প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে দেশবরেণ্য মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিক এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের ‘৭১-এর পটভূমি নিয়ে স্মৃতিচারণ। এ ছাড়া চাঁদপুর জেলার এবং জেলার বাইরে থেকে ৫০টির উপরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক এবং দেশের লোকজ সংস্কৃতি নিয়ে সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক এবং আবৃত্তি অনুষ্ঠান থাকবে। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পাশাপাশি বিজয় মেলার আয়োজনে থাকবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দুর্লভ স্মৃতি সংরৰণ প্রদর্শনী স্টল।
শিশুদের বিনোদনের জন্যে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও বিজয় মেলা মাঠে থাকছে গ্রাম বাংলার লোকজ পুতুল নাচ ও নাগরদোলা এবং হসত্দ ও কুটির শিল্পের হরেক রকম আইটেম। ১৯৯২ সালে চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হয়ে এখনো ধারাবাহিকভাবে চলে আসছে। এটি সর্বজনীন উৎসব হওয়ার সুবাদে মুক্তিযুদ্ধের সপৰের সকল রাজনৈতিক দল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং সকল পেশার মানুষজন ও চাঁদপুরের প্রশাসনের ঐকান্তিক সহযোগিতায় এটি এখন স্থায়ীভাবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে।
এ বছর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা গৌরবের ২২ বছরে পা রেখেছে। চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠের সর্বজনীন এ প্রাণের উৎসবকে ঘিরে চাঁদপুর শহরটি পুরো ডিসেম্বর মাস জুড়ে থাকে উৎসব মুখর। চাঁদপুর জেলা শহরের প্রায় ৫০টি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান এখন এ উৎসবকে সামনে রেখে প্রাণচাঞ্চল্য হয়ে উঠেছে। মেলায় এবারো থাকবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রদর্শনী বিতর্ক। বিজয় মেলার আর্থিক সহযোগিতার জন্যে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও ১০ টাকা মূল্যের কুপন ছাড়া হয়েছে। প্রথম পুরস্কার ৬০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট ২ লাখ টাকার নগদ পুরস্কার রাখা হয়েছে। ড্র অনুষ্ঠিত হবে মেলার শেষ দিন।
চাঁদপুরের স্বনামধন্য মা ডেকোরেটরের মালিক স্বপন কুমার সাহার সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রায় ১ মাস যাবৎ মেলার বিশাল কর্মযজ্ঞের কাজ শুরু হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দর ও মনোমুগ্ধকরভাবে বিজয় মেলার সাজসজ্জা ডেকোরেটরের কর্মীরা সাজিয়েছে। মেলার মাঠে শুরু হয়ে গেছে স্টল সাজানোর কাজ এবং দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা স্টল মালিকরা তাদের স্টলের সরঞ্জামাদি নিয়ে মাঠে প্রবেশ শুরু করে দিয়েছে। মাঠে সার্বিকভাবে এ সকল কাজগুলো মনিটরিং করছেন মাঠ ও মঞ্চ ব্যবস্থাপনা পরিষদের আহ্বায়ক হারুন আল রশিদের নেতৃত্বে উপ-পরিষদের সদস্যরা। এ ছাড়া পুরো বিজয় মেলার প্রস্তুতি নিয়ে যোগাযোগ এবং তদারকি চালিয়ে যাচ্ছেন বিজয় মেলার নির্বাহী পরিষদের মহাসচিব অ্যাডঃ বদিউজ্জামান কিরণ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দর্শনার্থীদের জন্য বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম উন্মুক্ত থাকবে।