শরীফুল ইসলাম ॥
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের খুঁটির জোর এতই শক্তিশালী যে, প্রশাসনকেও হার মানতে হচ্ছে। সরকার শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে মেঘনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ করলেও অবৈধভবে বালু উত্তোলনকারী গোষ্ঠীর কারণে ঐ বাঁধ এখন হুমকির মুখে পড়েছে। চোর যেমন শুনে না ধর্মের কাহিনী, তেমনি এ বালু উত্তোলনকারীরাও শুনে না লাখো মানুষের ভিটে মাটি রার করুণ কান্না। হাইমচরবাসীর প্রশ্ন: বালু উত্তোলনকারীদের এ শক্তির উৎস কোথায়? বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে মতার আসার পর চাঁদপুর-৩ আসনের সাংসদ ডাঃ দীপু মনি সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি হাইমচরকে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রায় নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ প্রকল্পে ১২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেন। ফলে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে হাইমচর-চাঁদপুর রা পায় এবং এর সুবাদে হাইমচর-চাঁদপুর-এর পরিত্যক্তপ্রায় সম্পত্তির মূল্য ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়ে মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। চাঁদপুর সদরের একটি গোষ্ঠী এক সময় হাইমচরের সীমানায় গাজীপুরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করলে হাইমচরের সর্বস্তরের জনগণের প্রতিরোধের মুখে তা ভেস্তে যায়। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২য় মেয়াদে সরকার গঠনের পর সরকার দলীয় শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের প্রত্য ও পরো যোগসাজশে হাইমচরের মেঘনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়। বালু উত্তোলনের এ মহোৎসবে দৈনিক আয়ের সুযোগ পায় সরকার দলের থানা থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা পর্যন্ত। ফলে প্রতিবাদের সাহস পায় না কেউই। কিছুদিন যেতেই বিষয়টি প্রশাসনের নজরে পড়লে এক অভিযানে জব্দ করা হয় ড্রেজার ও বাল্কহেড। নিষিদ্ধ করা হয় অবৈধ বালু উত্তোলন। কিন্তু তা বেশি দিন স্থায়ী হয় নি। দ্রুত বিশাল টাকার মালিক হওয়ার মাধ্যম হিসেবে বালু উত্তোলনের জন্য উৎসাহী এখন অনেকেই। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে শীর্ষ নেতারা সরে দাঁড়ালেও নতুন আঙ্গিকে নতুন নেতৃত্বে চলছে বালু উত্তোলন। হাইমচর উপজেলায় নয়ানী গ্রাম সংলগ্ন গাজীপুর ইউনিয়ন অংশে এখন চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। একটি ড্রেজারে নদীর একেবারেই তীর থেকে তুলছে বালু। ফলে যে কোনো সময় আবারো ধপাস ধপাস শব্দে ভেঙ্গে পড়বে হাইমচরের মানচিত্র। কারা এ বালু কাটছে তা অনুসন্ধান করে কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। যারা বালু উত্তোলন করছে তাদের সাথে কথা বললে তারাও সাংবাদিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে। কেউ বলছে এ ড্রেজার এক মন্ত্রীর, আবার পাশ থেকে আরেকজন বলছেন, না, এটি মন্ত্রীর কাজ, জেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা করাচ্ছেন। আবার কেউ এ দুই দাবিরই বিরোধিতা করে বলছে, হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এ কাজ করছে। কেউ বালু উত্তোলনের বৈধতা নিয়ে কোনো কথা বলতে পারছে না। এক প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক নেতা বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের আর্থিক সুবিধা পাইয়ে দিতেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। মোট আয়ের অর্ধেক নেতা-কর্মী এবং বাকি অর্ধেক ড্রেজার মালিকের। বালু উত্তোলন বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা শাহনেওয়াজ মানিক পাটওয়ারী এ প্রতিনিধিকে বলেন, হিংস্র জানোয়ারও বিপদগ্রস্ত মানুষের কান্না শুনে। কিন্তু বালু উত্তোলনকারীরা আমাদের শত-সহস্র মানুষের করুণ কান্না শুনে না। তিনি বলেন, যেভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তাতে যে কোনো সময় হাইমচরের মানচিত্র থেকে বিশাল ভূ-এলাকা মেঘনায় তলিয়ে যাবে। ভেস্তে যাবে সরকারের হাইমচর রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধ। তিনি বলেন, আমি নিজে জেলা প্রশাসক বরাবরে অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত আভিযোগ করেও কোনো ফল দেখিনা। বালু উত্তোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের চাইতেও বেশি মতাধর! বৈধ অবৈধ কোনো কথা নয়, মেঘনা থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে ২-৪ জন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনলেও তিগ্রস্ত হবে হাইমচর-চাঁদপুর রা বাঁধ, বিপদগ্রস্ত হবে বিপুল পরিমাণ নদীর তীরবর্তী মানুষ। ভিটে বাড়ি হারাবে অসংখ্য পরিবার। তাই এখনই কঠিন ব্যবস্থা নিয়ে এ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছে হাইমচরবাসী।
শিরোনাম:
সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।