মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুরের যুবসমাজ আবারও সর্বনাশা মাদকের নীল গ্রাসে পতিত হচ্ছে। সীমান্তের ফাঁক গলে চাঁদপুরে প্রবেশ করছে ধরনের মাদকদ্রব্য। আর মাদকের অভয়ারণ্য চাঁদপুরের বিভিন্ন অঞ্চল তথা শহরের পুরাণবাজার এলাকায় চলছে বেপরোয়া মাদক বিক্রি ও সেবন। অল্প অর্থ ব্যয় করে লাখপতি ও বাড়ির মালিক বনে গেছে এসব মাদক ব্যবসায়ী। ফলে শহরের পুরাণবাজারসহ উল্লেখযোগ্য এলাকা যেনো দিনে দিনে মাদকসেবী ও বিক্রেতাদের স্বগরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসকল মাদক ব্যবসায়ী বিক্রি করে যাচ্ছে গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্নপ্রকার নেশা জাতীয় মাদকদ্রব্য। মাদক ব্যাবসায়ীরা প্রায় প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপব্যবসা। মাঝে মধ্যে পুরাণবাজার ফাঁড়ি পুলিশ ২/৪জনকে আটক করলেও তারা কোনো শক্তির ইশারায় পার পেয়ে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, গত ক’বছরে জেলায় এই ব্যবসায়িক এলাকায় মাদক সেবন এবং বিক্রি কয়েকগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে এখন সবচেয়ে বেশি মাদক সেবন ও বিক্রি হয় গাঁজা ও ইয়াবা। এই গাঁজা ও ইয়াবার বিষে আক্রান্ত হচ্ছে কিশোর-যুবক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী পুরুষ এবং নারী।
এক সমীায় দেখা গেছে, ইদানী চাঁদপুরে ব্যাপকহারে ঢুকে পড়েছে ইয়াবা। পুলিশ মাঝে মাঝে এসব মাদক বিক্রেতাদের দু’একজন আটক করলেও এর পাইকারি চালানদাতা ও মূল হোতারা সবসময়ই থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্প্রতি শহরের পুরাণবাজার বাদিয়া বাড়ি খালের ওপর নির্মিত মেয়র রোডের ওপর প্রায় প্রকাশ্যেই মাদক বিক্রেতারা ইয়াবা, গাঁজা ও প্যাথেড্রিন বিক্রি করছে। দুধ বাজার বস্তিতেও গাঁজা কেনার জন্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাদকসেবীদের আনাগোনা এখনো অব্যাহত।
মধ্য শ্রীরামদী বউ বাজার এলাকার প্যাথেড্রিন ইনজেকশন প্যানা, এভিলসহ নেশার সুই বিক্রেতা ফজল বেপারি ও তার দু’ছেলে রাছেল বোপারি-সোহেল বেপারি বর্তমানে মাদক বিক্রির দায়ে হাজত বাস করলেও বর্তমানে তাদের ব্যবসার হাল ধরেছে মা রাশেদা বেগম। (টগরি)। স্থানীয় পেটকাটা হাসেমের ছেলে মিণ্টু কুমিলা সীমান্ত এলাকা থেকে প্যাথেড্রিন ইনজেকশন বহন করে তাদের কাছে সরবরাহ করছে বলে একটি সূত্রে জানায়।
উলেখ্য, এই নেশার ইনজেকশন প্যাথেড্রিন আসক্ত পুরাণবাজার এলাকার এমদাদ ছৈয়াল (৪০) নামে এক ব্যক্তি গত ক’দিন আগে মৃত্যুবরণ করে। এ নিয়ে চাঁদপুর শহর এলাকায় প্রায় ৩০-৩৫টি তাজা যুবকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ঘাতক মাদক নেশা প্যাথেড্রিন ইনজেকশন। এখনো অনেকে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে শহরে বিচরণ করছে।
পুরাণবাজার এলাকার আইলার বিলের কুখ্যাত গাঁজা ব্যাবসায়ি সুক্কুর খানের (গাঁজা ) স্ত্রী সাজেদা বেগম কিছুদিন আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাতে হাটক হয়ে হাজতবাস করলেও গাঁজা বিক্রি বন্ধ হয়নি। তার অনুপস্থিতে তার স্বামী সুক্কুর খাঁ বাড়িতে বসে ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একই এলাকার আরেক কুখ্যাত ফেন্সিডিল সম্রাট জামাল খাঁ ওরফে জামাইল্লা চোরা, তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম, মেয়ে পান্না, ছেলে পারভেজসহ পুরো পারবারটি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মাদক বিক্রির দায়ে তারা সবাই একাধিকবার জেলও খেটেছে। মেরকাটিজ রোড়ের টিপু দেওয়ানের বাড়ির ভাড়াটিয়া হোমিও লিটন ও তার স্ত্রী বেশ দাপটের সাথেই অত্র এলাকায় ইয়াবা বিক্রি করছে। এসব মাদক ব্যাবসায়ী মূলত মুঠোফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে এসব মাদক বিক্রি ও সরবরাহ করে থাকে। চিহ্নিত এসব মাদক স্পটে সকাল থেকে গভীর রাত অবদি প্রায় প্রকাশ্যেই চলে মাদক বিক্রি। এসবের পাশাপাশি বাংলা মদের কাউন্টারে সব সময় খোলা রেখে মদ বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। যার নামে মদের লাইসেন্স তাদের কেউ মদ বিক্রি করছে না। সাব-লিজ নিয়ে জনৈক ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলা মদ বিক্রি করছে। পুরাণবাজারের দুধহাটা বস্তি, মধ্য শ্রীরামদী কবরস্থান, বউবাজার, মেয়র সড়কে ৫-৭টি গাঁজা বিক্রির স্পট রয়েছে। এদিকে মাদক বিরোধী অভিযান চলালে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি অংশ গা ঢাকা দিলেও বেশিসংখক মাদক ব্যবসায়ী এখনো দেদারছে মাদক বিক্রি করে চলছে।
অন্য আরেকটি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক নেতাদের আত্মীয়স্বজনের অনেকে এমনকি ছাত্র ও যুবনেতাদের অনেকে মাদক বিক্রির ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের নির্মূলে রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসন তেমন সোচ্চার ভূমিকা নিতে পারছে না বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। ভয়ংকর এই মাদকের হাত থেকে চাঁদপরের যুব সমাজকে রার্থে এসব মাদক বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান যেন অব্যাহত থাকে। আর এই অভিযান যেন মাঝপথে থেমে না যায় সে জন্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও জেলার মতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সুদৃষ্টি কামনা করেছন অভিভাবক মহল।
শিরোনাম:
শনিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।