গতকাল শুক্রবার চাঁদপুরে নতুন কোনো রিপোর্ট আসে নি। উপরন্তু আগের স্যাম্পলের সাথে গতকাল আরো যোগ হয়েছে ৫৭টি। এখন ঢাকায় জট লেগেছে ৮শ’ ৬৪ জনের রিপোর্ট। এর অধিকাংশই একটি ল্যাবরেটরিতে। দেখা গেছে যে, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২ তারিখের কোনো রিপোর্ট এখনো চাঁদপুরে আসে নি। এসব রিপোর্টের অপেক্ষায় অনেকেই অস্থির হয়ে আছেন। অনেক পজিটিভ রোগী দ্বিতীয়বারের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছেন। এ রিপোর্ট আসলেই তাঁকে সুস্থ ঘোষণা করা হবে। অথচ তাঁর হোম কোয়ারেন্টাইন অথবা আইসোলেশনে থাকার যে নির্ধারিত সময়, তা পূর্ণ হয়ে কয়েকদিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় রিপোর্ট না আসায় তিনি কি মুক্ত না কি আরো ১৪ দিন অবরুদ্ধ থাকতে হবে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। একই অবস্থা হাসপাতালে থাকা রোগীদের বেলায়ও।
রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ার কারণে তিন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রথমত, যারা প্রথমবারের মতো স্যাম্পল দিয়েছেন, তাদের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত তাদের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না তারা কি আক্রান্ত না কি আক্রান্ত নন। দ্বিতীয়ত, অনেক দেরিতে রিপোর্ট আসায় যাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে তারা এই কদিন অবাধ চলাফেরা করায় তাদের দ্বারা অসংখ্য মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। এটা খুবই ভয়ানক এবং করোনা বিস্তারে অন্যতম কারণ।
তৃতীয়ত, যাদের রিপোর্ট প্রথমবার পজিটিভ হওয়ার পর নির্ধারিত সময় পার করে দ্বিতীয়বার স্যাম্পল দিয়েছেন, তাদের রিপোর্ট আসতে দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পরও তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না তারা মুক্ত হলেন কি না। একটা অনিশ্চয়তা এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে তাদের দিন কাটে।
এদিকে চাঁদপুরের যে আট শতাধিক রিপোর্ট জমে আছে, সেগুলোর অধিকাংশই ঢাকা আগারগাঁওস্থ ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরিতে। এখানে অন্যান্য জেলা থেকেও সবচেয়ে বেশি স্যাম্পল যায় বলে এ প্রতিষ্ঠান সেই পরিমাণ স্যাম্পল সময়মতো পরীক্ষা করে রিপোর্ট ডেলিভারি দিতে পারছে না। জানা গেছে যে, এই প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ থেকে প্রতিদিন দুই হাজারের মতো স্যাম্পল পরীক্ষার রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়া হয়। এর বেশি সম্ভব হয় না। আর তখনই চাঁদপুরসহ আরো অন্য জেলার রিপোর্টে জট লেগে যায়। এর বাইরে মোহাম্মদপুরে অবস্থিত চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনেও অন্যান্য জেলা থেকে স্যাম্পল যায়। তবে এ প্রতিষ্ঠানটি ধারণ ক্ষমতার বাইরে স্যাম্পল গ্রহণ করে না। যেমন চাঁদপুরের স্যাম্পল একদিনে একশ’র বেশি হলে এই প্রতিষ্ঠানে আর রাখা সম্ভব হয় না। তখন বাধ্য হয়েই আগারগাঁওয়ের সরকারি প্রতিষ্ঠানে পাঠাতে হয়। তাছাড়া চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনটি প্রফেসর ড. সমীর সাহার হওয়ার তিনি চাঁদপুরের মানুষ হওয়ার সুবাদে এই জেলার রিপোর্টের ক্ষেত্রে অনেকটা যত্নবান হন এবং সময়মতো ডেলিভারি দিতে চেষ্টা করেন। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে এ সব তথ্য জানা গেছে।
সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাখাওয়াত উল্লাহ জানান, কোভিড-১৯ ভাইরাস পরীক্ষার জন্যে সারাদেশে ৬০টি ল্যাবরেটরি রয়েছে। তারপরও কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এখন সারাদেশ থেকেই স্যাম্পল বেশি করে যাচ্ছে। তাই এখন জট লেগে যাচ্ছে। চাঁদপুরের স্যাম্পল কুমিল্লা পরীক্ষা করার বিষয়ে সিভিল সার্জন জানান, তাদের নিজের জেলার স্যাম্পল পরীক্ষা করেই তারা কুলিয়ে উঠতে পারছে না। প্রথম কিছুদিন চাঁদপুরের স্যাম্পল কুমিল্লা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তারা অপারগতা স্বীকার করায় এরপর থেকে ঢাকা পাঠানো হচ্ছে।