শওকতআলী
চাঁদপুরে স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই জেলা সদর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল কেয়ার। বৈধভাবে যেসব হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছে তাতেও স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়মনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকা, অনভিজ্ঞ লোকদ্বারা সেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানে বছরে ২/৩ বার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিছু জরিমানা করা হলেও পরবর্তীতে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলি দিব্যি বাণিজ্য করে যাচ্ছে। প্রকারন্তরে এদের হাতে জিম্মি হয়ে রোগীরা হচ্ছেন প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও সর্বস্বান্ত। যেহেতু চাঁদপুর অঞ্চলটি নদী বেষ্টিত এবং চর এলাকায় বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস তাই এখানে রোগীদের বাগিয়ে এনে চিকিৎসার নামে বাণিজ্য করা অনেকটা সহজ।
চাঁদপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, জেলায় অনুমোদিত বেসরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৫৯টি এবং প্যাথলজি ও ডাগানস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৭০টি। অথচ অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা শতাধিক হলেও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে অবৈধ প্যাথলজির সংখ্যা মাত্র ২৫টির তালিকা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর, উপজেলা সদর এমনকি গ্রাম পর্যায়েও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত থাকলেও তারা এসব অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলির পরিসংখ্যান সঠিকভাবে কাগজে কলমে রাখেন না। মাস শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ কেউ মাসোহারা নিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা গেছে এসব প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারের বাহারি নাম পদবী ব্যবহার করে রাস্তার পাশে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে, বিশাল ব্যানার টানিয়ে কিংবা মাইকিং করে রোগীদের ডেকে এনে চিকিৎসার নামে অর্থ আদায়ের বাণিজ্য করে যাচ্ছে। প্রতি শুক্রবারে বন্ধের দিনে চাঁদপুর জেলা শহরসহ হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, মতলব, কচুয়ায় বিভিন্ন ক্লিনিক, হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে উচ্চ ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের হাট বসে। এরা ঢাকাসহ বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ কিংবা হাসপাতাল থেকে এখানে এসে অসংখ্য রোগী দেখছেন। এর আগে স্থানীয় এসব চেম্বারের লোকজন প্রত্যন্ত এলাকায় মার্কেটিং করে রোগীদের আনতে প্রলুব্দ করছেন। এসব চিকিৎসকের কেউ কেউ পুরো কোর্স সম্পন্ন না করেই সহকারী অধ্যাপক কিংবা অধ্যাপক ডিগ্রি ব্যবহার করেই চিকিৎসা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যেসব উপজেলায় অবৈধ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সেখানে সার্বক্ষণিক ডাক্তার, ডিপ্লোমাধারী, প্যাথলজিস্ট, টেকনিশিয়ান এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি না থাকলেও রোগীদের কাছ থেকে তারা মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করে ছাড়ছে। জেলা শহরের ২/১ জন গাইনোলজিস্ট নিজস্ব বাসায় চেম্বার খুলে সেখানেও রীতিমত ডেলিভারী হতে শুরু করে এমআর, ডিইএনসি করার অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে লাইসেন্স ছাড়া ও ভুয়া ব্যক্তি চিকিৎসক সেজে রোগী দেখা হতে শুরু করে প্যাথলজি দিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষার নামে প্রতারণার অভিযোগে এবং অবৈধপন্থায় কাগজপত্র ছাড়াই ক্লিনিক ব্যবসা করার দায়ে প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও তা বন্ধের জন্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছে মতলব দক্ষিণের নারায়নপুর বাজারের কথিত চিকিৎসক ওমর ফারুক ও স্কয়ার হাসপাতাল এন্ড প্যাথলজি সেন্টার, শাহরাস্তির আইডিয়েল ডায়াগনস্টিন সেন্টার, হাজীগঞ্জের বলাখাল ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফরিদগঞ্জ মর্ডাণ ডেন্টাল কেয়ার, চাঁদপুর শহরের মিশন রোডস্থ সেবা পিজিওথেরাপী সেন্টারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান জেলাব্যাপী বেসরকারি হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনুমোদন নেয়ার সময় বৈধ প্রতিষ্ঠানে কাগজে কলমে ডাক্তার, ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট দেখানো হয়েছে আসলে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ বৈধ প্রতিষ্ঠানে অনুসন্ধান করলে বা অভিযান চালালে আবেদনের সময় কাগজে কলমে নেয়া তথ্যের মিল পাওয়া যাবে না। এসব বিষয় নিয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোহাম্মদ মতিউর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, লাইসেন্স নেয়ার সময় জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ভেরিপাই করে তা দেয়া হয়। আমি এ জেলায় নতুন যোগদান করেছি। তারপরও এসব বিষয়ে এবং অবৈধ যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।