প্রতিদিন আমদানি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫শ’ মন
চাঁদপুরে অসময়ে ইলিশের প্রচুর আমদানী ॥ দাম কমেনি-পদ্মা-মেঘনায় ইলিশের তেমন মিলছে না
শওকত আলী॥ চাঁদপুর মাছ ঘাটে গত কয়েকদিন যাবত হঠাৎ করে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। এ ইলিশ ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর মৎস্য আড়তে মৌসুম ছাড়াই আমদানী হচ্ছে। এসব ইলিশ আসছে দক্ষিণাঞ্চলীয় ভোলা, চরফ্যাশন, দৌলতপুর, হাতিয়া, রামগঞ্জ, শরীয়তপুর ও নোয়াখালী এলাকা থেকে। ইলিশ আমদানির কারণে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী, দাদনদার ও শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। মৎস্য আড়তদার ও শ্রমিকদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। তারা কর্মচাঞ্চল ও ব্যস্ততা সময় কাটাচ্ছে। জেলে পল্লীগুলোতে বইছে উৎসবের আনন্দ। প্রতিদিন ৫১টি আড়তে প্রায় ৭/৮শ মণ ইলিশ আসছে ট্রলার যোগে এতে করে জেলেদের মুখে যেমন হাসি ফুটেছে ,তেমনি আড়তদার, শ্রমিক ও মাছ বিক্রেতাদের মনে ও প্রচুর আনন্দ দেখা দিয়েছে। জেলেরা প্রচুর ইলিশ আহরণ করতে পারায় তাদের দাদনদারদের দেনা পরিশোধ করতে পারবে বলে জেলেরা জানান। স্থানীয় ক্রেতারা ও আনন্দের সাথে মাছ ঘাটে গিয়ে মাছ ক্রয় করতে দেখা যাচ্ছে। প্রচুর ইলিশের আমদানী হলেও দাম অনেক চওড়া। দাম না কমায় ক্রেতারা সীমিত পরিমানে ইলিশ ক্রয় করছে। প্রতিদিন যে পরিমান ইলিশ আসছে, সেই ইলিশ বরফজাতের মাধ্যমে প্যাকিং করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ও পার্শ্ববর্তী ভারতে পাচার করার সুযোগ থাকায় দাম কমছে না বলে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান। এ বছর প্রচুর পরিমাণে জাটকা নিধন হওয়ায় পদ্মা-মেঘনা নদীতে কাঙ্খিত ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, সমুদ্রে এ বছর ২ মাস মাছ ধরা বন্ধ রাখার অভিযান থাকায় এ বছর সমুদ্রের বড় সাইজের ইলিশ স্থানীয় নদীতে ধরা পরছে। বেশি ধরা পরছে ৩/৪শ গ্রামের ইলিশ।
১ কেজি থেকে ১২শ গ্রামের ইলিশের মণ ৪৪ হাজার টাকা। প্রতি কেজি ১১শ থেকে ১২শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। ৭/৮শ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ ৩০ হাজার টাকা, প্রতি কেজি ৭শ টাকা। ৩শ’ ৪শ গ্রামের ইলিশ প্রতি মণ ২২ হাজার প্রতি কেজি ৫শ টাকা।
মৎস্য ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন গাজী জানান, হঠাৎ কয়েকদিন যাবত ইলিশের আমদানী বেড়েছে। এসব ছোট সাইজের ইলিশ বাঁশখালি থেকে আসছে।
ভাই ভাই মৎস্য আড়তের আজিজুল হক জানান, এ ঘাটের ৫১টি মৎস্য আড়তে প্রতিদিন ২৫/৩০ মণ করে ইলিশ আসছে। গড়ে সবার হতে ১৩শ থেকে ১৫শ মণ ইলিশ আমদানী রয়েছে। এতে সহস্রাধিক শ্রমিকের কর্মচাঞ্চল্য বেড়ে গেছে। বিসমিল্লাহ আড়তের আড়তদার মিজানুর রহমান ছৈয়াল জানান, ইলিশের আমদানী বেড়ে যাওয়ায়, পুরুষ ক্রেতার সাথে মহিলা ক্রেতারাও মাছ ঘাটে আসছে ইলিশ ক্রয় করার জন্য। মৎস্য কান্ট্রিফিসিং সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহআলম মল্লিক জানান এবছর দুমাস সমুদ্রে অভিযান থাকায় মাছ ধরা বন্ধ ছিল। যার ফলে হঠাৎ সে ইলিশ মৌসুম ছাড়াই বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ছে। আমদানীও বেড়েছে প্রচুর।
রোববার ২১ আগস্ট বিকেলে চাঁদপুর মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, চরপ্যাশন, দৌলতখাঁন, হাতিয়া, রামগঞ্জ ও নোয়খালীর জেলার নি¤œঞ্চাল থেকে প্রতিদিন এসব আড়ৎগুলোতে সহ¯্রাধিক মন ইলিশ আসছে। আর এসব ইলিশ বাক্সের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকা, গাজীপুর, সিলেট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী আলী আকবর প্রধানিয়া জানান, দক্ষিনাঞ্চল থেকে ইলিশ আমদানি হলেও চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আর ছোট সাইজের যে সব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেসব ইলিশ চওড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
অপর ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন খান জানান, এ বছর ইলিশের প্রকৃত মৌসুম বৈশাখ হতে কার্তিক পর্যন্ত কাংখিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে মৌসুম না হলেও প্রাকৃতিক ভাবেই এখন ইলিশ ধরা পড়ছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জমাদার (বাবুল হাজী) জানান, এ সময় যে ইলিশ ধরা পড়ছে, তা ছোট হওয়ায় প্রতিকেজিতে ৫টি থেকে ৩টি পাওয়া যাচ্ছে। ৩শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মন ১৪হাজার, ৫/৬শ’ গ্রাম ২৪ হাজার অন্য সময় আমদানি হতো ৪/৫শ’ মন।