মুজিববর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক চাঁদপুরে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আরো ১০৯টি গৃহ প্রদান করা হবে। দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে অন্তত একটি করে ঘর করে দেয়ার সরকারি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৫৩ হাজার ৩৪০টি পরিবারকে ঘর প্রদান করা হবে। ১ম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১৮৯ জনকে জমি ও গৃহ প্রদান করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ২০ জুন রোববার সকালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে (আশ্রয়ণ-২) গৃহহীনকে ঘর প্রদানের এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এ উপলক্ষে চাঁদপুরে কর্মরত ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দের সাথে মতবিনিময় ও প্রেস ব্রিফিং করেছেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ। ১৮ জুন শুক্রবার সকাল সাড়ে দশটায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই মতবিনিময় এবং প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসক তাঁর বক্তব্যে বলেন, একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন। যার সুফল চাঁদপুরের ভূমিহীন ও গৃহহীনরাও পাচ্ছে। একটি পরিবারও যাতে গৃহহীন না থাকে সরকার সেই লক্ষ্যে কাজ করছে। আমরাও প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকার পূরণে কাজ করে যাচ্ছি। আর অসহায় পরিবারগুলো দেখতে পাচ্ছে আশার আলো।
জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দাউদ হোসেন চৌধুরী, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, সাধারণ সম্পাদক রহিম বাদশা, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কাজী শাহাদাত, গোলাম কিবরিয়া জীবন, শরীফ চৌধুরী, বিএম হান্নান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, টেলিভিশন সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌস, ডিবিসি নিউজের তালহা জোবায়ের প্রমুখ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইতমিয়াজ হোসেন, চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা শাহনাজ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমানে চাঁদপুর জেলায় ‘ক’ শ্রেণির (গৃহহীন ও ভূমিহীন) পরিবারের সংখ্যা ১৬১৭টি। চাঁদপুর জেলায় ১ম পর্যায়ে একক গৃহের মাধ্যমে ১১৫টি এবং আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৪৫টিসহ ১৬০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ে একক গৃহের মাধ্যমে ২০ জুনের মধ্যে ৯৩টি এবং পরবর্তীতে ১৬টিসহ মোট ১০৯টি পরিবারকে এবং ৩২৫টি পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থাৎ সর্বমোট ৪৩৪টি পরিবারকে পুর্নবাসন করা হচ্ছে।
এ সকল পরিবারকে এক টাকা সালামীতে দুইশতক জমি বন্দোবস্ত প্রদান করা হয়েছে। কবুলিয়ত, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি ও জমা খারিজ খতিয়ান সৃজন, সনদপত্র প্রদানসহ সকল কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক ডিসিআর-এর ১হাজার ১শ’ ৫০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি একক গৃহের আয়তন ৩৯৫ বর্গফুট। দুইকক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা গৃহে একটি টয়লেট, একটি রান্নার কক্ষ ও একটি ইউটিলিটি স্পেস রয়েছে। চাঁদপুর জেলায় ১ম পর্যায়ে গুচ্ছগ্রাম হতে ৮৫টি, আশ্রয়ণ হতে ২০টি ও দুর্যোগ হতে ৩০টি অর্থাৎ মোট ১৩৫টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া যায় এবং এগুলো বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
২য় পর্যায়ে দুর্যোগ হতে ১০৯টি ঘরের বরাদ্দ পাওয়া যায় এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে। মাটি ভরাট করার জন্য এ জেলায় ২য় পর্যায়ে মোট ১০০.০০ মেঃ টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জানান, খাস জমি উদ্ধার করে এ জেলায় পুর্নবাসন করা হয়েছে। অবশিষ্ট ‘ক’ শ্রেণির পরিবারকে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে পুনর্বাসনের জন্য সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পুনর্বাসনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারবৃন্দকে জায়গা নির্বাচন, মাটি ভরাটসহ প্রস্তুতি গ্রহণের জন্যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের চাঁদার টাকায় চাঁদপুর জেলায় ২টি পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন দানশীল ব্যক্তি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, প্রতিষ্ঠান প্রধান, সংস্থা, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর জেলায় ১১৮টি ঘর নির্মাণ করবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। এরমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ২টিসহ মোট ২৫টি ঘর ইতোমধ্যে নির্মিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক জানান, চাঁদপুর জেলার ৪জন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে ২টি করে ৮টি উপজেলায় নিষ্কন্টক খাস জমি খুঁজে বের করাসহ এ সংক্রান্ত সকল কাজ মনিটর করার জন্যে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।