স্টাফ করেসপন্ডেন্ট: চাঁদপুরে যৌতুকের জন্য পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে স্ত্রীর মাথায় স্বামী শরীফ হোসেন খান ইট দিয়ে আঘাত করে ও গলাটিপে এক সন্তানের জননী গৃহবধূ সাথী আক্তার(২৪) কে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের বহরিয়া এলাকার মোখলেছ খান নামক বড় খানবাড়ীতে। এ ঘটনায় বুধবার রাতে গৃহবধূর পিতা মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বাদী হয়ে হত্যার অভিযোগ এনে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ঘটনাটি ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান টিটুর হস্তক্ষেপে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। অভিযুক্ত স্বামী ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদের নির্দেশে থানার উপ-পরিদর্শক মো: মোস্তফা কামাল রাত ১ টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরুত হাল শেষে লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরন করেছে।
তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলা পক্রিয়াধীন।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়,নিহত সাথী আক্তারের স্বামী শরীফ খান এর পূর্বে একটি বিয়ে করে পশ্চিম রামদাসদী দোকানঘর এলাকার রফিক মল্লিকের মেয়ে রোকেয়া বেগমকে। সে সংসারে তার দুটি সন্তান রয়েছে। শরীফের নির্যাতনের শিকার হয়ে জীবন বাচাঁতে দুই সন্তান নিয়ে প্রথম স্ত্রী তাকে তালাক দিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়। গত তিন বছর পূর্বে শরীফ খান চান্দ্রা এলাকার বাখরপুর পাটওয়ারী বাড়ির মিজানুর রহমানের মেয়ে সাথী আক্তারকে দুই লাখ টাকা দেন মোহরে বিয়ে করে। সাথীর সংসারে দুই বছর বছরের সুমনা নামে একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহত সাথীর পিতা মিজানুর রহমান জানান, বিয়ের সময় শরীফকে ব্যবসা করার জন্য দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে শরীফ সাথীর কাছে যৌতুক দাবী করে এবং তাকে নির্যাতন করতে থাকে। বিয়ের পর থেকে ৭বারে যৌতুক বাবদ শরীফকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যবসা করার জন্য দেওয়া হয়। এর পরও শরীফ পুনরায় যৌতুক দাবী করে যাচ্ছিল। গত মঙ্গলবার যৌতুকের জন্য সাথীকে শরীফ মাথায় এবং শরীরে ইটদিয়ে বহু আঘাত করেছে। আঘাত করার পর সাথী বিষয়টি ফোন করে তার বাবাকে জানিয়েছে।
ঘটনার দিন বুধবার বিকেলে শরীফ দোকান থেকে এসে যৌতুকের টাকা বাবার কাছ থেকে এনে দেওয়ার জন্য সাথীর সাথে শরীফের পারিবারিক কলোহ হয় বলে সাথী তার পিতা-মাতাকে জানান।
বড়বাড়ীর শরীফের আত্মীয় স্বজনরা জানান, এক পর্যায়ে শরীফ সাথীকে গলাটিপে ধরে ও ইটদিয়ে মাথায় আঘাত করলে সে খাটের উপর পায়খানা-প্রশ্রাব করে দিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাৎক্ষনিক শরীফ তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরক্ষনে শরীফ জোরপূর্বক সাথীর লাশ আটোবাইকে উঠিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে আসে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর থেকে গনমাধ্যমের কয়েকজন কর্মী ঘটনাস্থল বড় বাড়ীতে গেলে তাদেরকে মেনেজ করে চলে যেতে বলা হয়। পরে নিহত সাথীর বাবা তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে চাঁদপুর মডেল থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ রাতেই ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্বার করে মর্গে প্রেরন করে ময়না তদন্তের জন্য।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার আশিব হাসান চৌধুরী জানান, মরদেহের মাথায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান,ঘটনা জানান পর পর ঘটনাস্থলে থানার অফিসারকে পাঠাই। আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব্যাপারে নিহতের পিতা বাদী হয়ে অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/