বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও পেঁয়াজের ঝাঁজ চোখে-মুখে লেগেছে ক্রেতাসাধারণের। পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ ৬০/৬২ টাকায় কেজি বিক্রি হলেও দাম বাড়ার অজুহাত দেখিয়ে খুচরা দোকানদাররা তা বিক্রি করছে ৭০/৭৫ টাকা। প্রতিদিনই পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ৪/৫ টাকা করে ওঠানামা করলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব তেমন পড়ে না। খুচরা বাজারে একবার দাম বেড়ে গেলে তা নামতে কিছুটা সময় লাগে। ফলে ক্রেতাসাধারণকে বেশি দাম দিয়েই তা কিনতে হয়। গত ৭/৮ দিন পূর্বে পাইকারি বাজারে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৮/৭০ টাকায়, বর্তমানে তা একই বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০/৬২ টাকা। অথচ খুচরা বিক্রেতারা দাম না কমিয়ে আগের দামেই বিক্রি করছে। ফলে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে। চাঁদপুর আমদানিনির্ভর মোকাম হওয়ায় ভোমরা হিলি বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে যে পেঁয়াজ আমদানি হয় তা চাঁদপুর পুরাণবাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ আখন্দ, সামছু মোল্লা, মোস্তফা মোল্লা, লোকমান হোসেন, মান্নান শেখ, রহমতপুর বাণিজ্যালয়, মজিব এন্টারপ্রাইজ, রহমান ট্রেডার্স, জুয়েল এন্টারপ্রাইজ চাঁদপুরে আমদানি করে থাকেন। তারা এ আমদানিকৃত পেঁয়াজ পুরাণবাজারসহ বিভিন্ন বাজারে পাইকারি দামে বিক্রি করে থাকে।
আমদানিকারক মজিব এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মমিনুল ইসলাম জানান, আমরা সরাসরি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করি না। হিলি বর্ডার দিয়ে আমদানিকৃত পেঁয়াজ আমরা ওখান থেকে বাজারমূল্যে নিয়ে আসি এবং এখানে আনার পর আমদানি খরচ বাদ দিয়ে ২৫/৫০ পয়সা লাভে চাঁদপুরে বিক্রি করি। প্রতিদিনই ভোমরা বন্দরে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম উঠা-নামা করে। ফলে অনেক সময় লোকসান দিয়েও আমাদেরকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি করতে হয়। আমরা যে দামে এখন পেঁয়াজ বিক্রি করছি তা পূর্বের কেনা ছিলো বলে বিক্রি করতে পারছি। বর্তমানে ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আমদানি হবে তা আরো বেশি দামে বিক্রি করতে হতে পারে বলে পেঁয়াজ আমদানিকারক এ ব্যবসায়ী জানান।
জানা যায়, এ বছর ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে। ভারতে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় মহারাষ্ট্র ও উত্তর প্রদেশে। এ বছর এসব স্থানে বন্যার কারণে পেঁয়াজ উৎপন্ন ব্যাহত হয়েছে। তদুপরি কৃষকের সংরক্ষিত পেঁয়াজও বন্যার কারণে সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা যায়। এরই প্রেক্ষিতে ভারত সরকার পেঁয়াজ আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ে। আর দাম বৃদ্ধির এ সুযোগ কাজে লাগায় বাংলাদেশের কৃষকরাও। তারাও তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজ বাড়তি দামেই বিক্রি করছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ আর ভারতীয় আমদানিকৃত নাসিক পেঁয়াজ একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ভারত থেকে আমদানিকৃত লাল জাতের সাউথ পেঁয়াজ এখন আর বাজারে চোখে পড়ে না। বন্যার কারণে তা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানা যায়। সাউথ পেঁয়াজের তুলনায় নাসিক পেঁয়াজের দাম বেশি বলে পেঁয়াজ আমদানিকারীগণ জানান। তবে সাউথ পেঁয়াজের আমদানি থাকলে পেঁয়াজের মূল্য এতো বৃদ্ধি পেতো না বলেও জানা যায়।
কী কারণে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেলো তার সঠিক কারণ জানা যায়নি। এছাড়া আদা, রসুনের দামও কমতির দিকে। পাইকারি বাজারে বর্তমানে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১শ’ ২০ টাকা, আদা বিক্রি হচ্ছে ১শ’ ২০/১শ’ ২৫ টাকা কেজি। যা গত ২ সপ্তাহ পূর্বেও বিক্রি হয়েছে ১শ’ ৫০ থেকে ১শ’ ৬০ টাকা। আর আলুর পাইকারি মূল্যে ১১/১২ টাকা। তবে পাইকারি মূল্যে যাই হোক না কেনো খুচরা বাজারে এখনো আলু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা।
এদিকে চাল ব্যবসায়ীরা রয়েছেন হতাশার মধ্যে। প্রতিদিনই তাদেরকে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। চালের দাম রয়েছে নিম্ন পর্যায়ে। পুরাণবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী মদিনা ট্রেডার্সের দীর্ঘদিনের ম্যানেজার অনন্ত চক্রবর্তী জানান, দীর্ঘদিন এ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছি, কিন্তু কখনো এমন বেচা-বিক্রি দেখিনি। বর্তমানে বাজারে চালের তেমন কেনা-বেচা নেই বললেই চলে। সকালে যদি কিনি একরকম, বিকেলে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় আরেক রকম। দাম স্থিতিশীল না থাকায় লোকসানের ভয়ে খুচরা দোকানদারগণ এখন চাল কিনতে ভয় পায়।
অনন্ত চক্রবর্তী জানান, বর্তমানে চালের দাম বিগতদিনের চেয়ে অনেক কম। বাজারে দিনাজপুরের গুটি স্বর্ণা চাল ২৫ টাকা, দিনাজপুরের মিনিকেট চাল ৩৬ টাকা, মিনিকেট চাঁদপুরের লোকাল মিলের চাল ২৭ টাকা থেকে সাড়ে ২৭ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৫২ টাকা, যা পূর্বে ৬০/৬২ টাকা।
এছাড়া পাইজাম ৩০ টাকা, জিরা চাল ৩৭ টাকা থেকে সাড়ে ৩৭ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরা বাজারে স্থানভেদে এর দাম আরো বেশি।
পুরাণবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী প্রভাস সাহা জানান, বর্তমানে আটা, ময়দা, তেল, চিনিসহ সকল জিনিসপত্রের দামই কমতির দিকে রয়েছে। চিনি বর্তমানে ৫৫, মশারি মোটা ৫০, চিকন ১০০, খেসারী ৬০, আটা ২৫, ময়দা ৩০/৩২ (প্যাকেট ব্যতীত) টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মশল্লার দামও রয়েছে স্বাভাবিক।
অন্যান্য মালের দাম যাই থাকুক না কেনো, পেঁয়াজ নিত্যদিনের তরকারির অন্যতম হওয়ায় এর দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাসাধারণের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। সুবিধাবাদী ব্যবসায়ীগণ যাতে পেঁয়াজ নিয়ে বাড়তি মুনাফা না করতে পারে বা কোনো সিন্ডিকেট সৃষ্টি করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার সংস্থার কর্তাব্যক্তিগণ সক্রিয় থাকবেন এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন সাধারণ ভোক্তাগণ।