মিজান লিটন =
চাঁদপুরে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপি কৃষি ও প্রযুক্তি মেলা-২০১৪। গতকাল সোমবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের তালতলাস্থ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথা চাঁদপুর খামার বাড়ি প্রাঙ্গণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটওয়ারী দুলাল।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর-এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ মনিরুল ইসলামের সভাপ্রধানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সাহাবুদ্দিন মিয়া, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবন ও হাইমচর উপজেলা সহকারী কৃষি অফিসার আবুল কাশেম। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মেলার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ অফিসার কৃষিবিদ আলী আহমদ।
হাজীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ আমানুল ইসলামের পরিচালনায় মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার কৃষিবিদ কাজী জাহাঙ্গীর কবির, বিএডিসি চাঁদপুর-এর উপ-সহকারী পরিচালক খলিলুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরীসহ কৃষি, প্রাণি ও মৎস্য বিভাগের উপজেলার অন্য কর্মকর্তা, সাংবাদিক, মাঠকর্মী ও কৃষক-কৃষাণী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, কৃষক বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। কৃষি বাঁচলে বাংলাদেশের অর্থনীতি টিকবে। গত বছর এ মেলার আয়োজন প্রতিকূল আবহাওয়া থাকায় সেভাবে করতে পারিনি। আজকের আয়োজন এবং সুন্দর পরিবেশ দেখে আনন্দ লাগছে। সার্বিক দিক দেখে মনে হচ্ছে কৃষি, কৃষক এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, দেড় কোটি মানুষ যখন ছিলো তখন দেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে। আর এখন দেশে ১৬ কোটি মানুষ, আমরা খাদ্য রপ্তানি করছি। এটি এমনি এমনিতেই হয়নি। অনেক লোকের অনেক সাধনা, অনেক কৃষকের প্রচেষ্টা, অনেক বিজ্ঞানীর গবেষণা, কৃষিবিদদের চেষ্টা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচারণার ফসল। তিনি সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, সরকার কৃষি বিষয়ে খুবই আন্তরিক। এ সেক্টরকে এগিয়ে নিতে সঠিক সময় কৃষকের কাছে সার ও বীজ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছে। জেলা প্রশাসক আরো বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত। দু হাতের আঙ্গুল দিয়ে একটি বীজ রোপণ করতে পারলে আমরা লাউ-সিম গাছ পেয়ে যাই। তিনি অভিজ্ঞতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ইংল্যান্ড-জার্মানির কৃষকরা একটি টমেটোর জন্য কি পরিমাণ পরিশ্রম এবং অর্থ ব্যয় করে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। আল্লাহর রহমত যে, আমরা সুন্দর আবহাওয়া ও মাটি পেয়েছি। এটাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে কৃষকের ভাগ্য উন্নয়ন সম্ভব। সর্বাত্মকভাবে কৃষিকে এগিয়ে নিতে তিনি কাজ করার আহ্বান জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, উন্নত প্রযুক্তির বিকল্প নেই। দেশে যে হারে লোকসংখ্যা বাড়ছে, আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব। হাফেজ মাওঃ আবু ইউসুফের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এর আগে প্রধান অতিথি বিশেষ অতিথি ও কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে ফিতা কেটে ৩ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন এবং মেলায় স্থান পাওয়া বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর ও সদর উপজেলা কৃষি অফিস এ মেলার আয়োজন করেছে। যার অর্থায়ন করেছে ন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রজেক্ট (এনএটিপি) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি ঢাকা। মেলায় ১৫টি স্টল রয়েছে। এগুলো হচ্ছে: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচিতি ও তথ্য, দি গ্রীন সিগন্যাল, সার ও ভেজাল সার প্রযুক্তি, বীজ প্রযুক্তি, কৃষি তথ্য সার্ভিস নিবিড় করণ প্রকল্প কুমিল্লা অঞ্চল, সিনজেনটা বাংলাদেশ লিঃ, ধানের ফলন পার্থক্য কমানো প্রযুক্তি, সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি, খামার যান্ত্রিককরণ প্রযুক্তি, কৃষক তথ্য পরামর্শ কেন্দ্র, বয়স্ক ফল বাগানে সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চাঁদপুর, অংগজ বংশ বিস্তার, গুটি ইউরিয়া, এলসিসি ও এডডাব্লিউডি প্রযুক্তি, মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রযুক্তি।