স্টাফ রিপোর্টার:
১৫টি হ্যাচারী ও ফিড মিল মালিকদের কাছে বর্তমানে জিম্মি হয়ে রয়েছে। তাদের ছোবল থেকে পোল্ট্রি শিল্প রক্ষার জন্য “খামারী বাঁচাও-পোল্ট্রি শিল্প বাঁচাও” এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চাঁদপুর জেলা পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের নেতৃত্বে জেলার সকল খামারী ও পোল্ট্রি ফিড ব্যবাসায়ীরা মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারক লিপি প্রদান করেছেন।
গতকাল সকাল ১১টায় চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহা সড়কের পাশে (চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে) এ মনববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় “বাচ্চা ও খাদ্যের দাম কমাতে হবে”, হ্যাচারী সিন্ডিকেটের কালো হাত- ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও” সহ বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী খামারীরা।
মানবন্ধনের বক্তারা বলেন, গত দু’ বছর যাবৎ বাংলাদেশে দেশি-বিদেশী হ্যাচারী মালিকগণ ১ দিন বয়েসের ব্রয়লার বাচ্চা ৭০ থেকে ৯৮ টাকা, লেয়ার বাচ্চা ১০০ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি করে। অথচ উৎপাদন খরচ ব্রয়লার বাচ্চা ২৪ থেকে ২৮ টাকা, লেয়ার বাচ্চা ২৮ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু হ্যাচারী মালিকগণ খামারীদেরকে জিম্মি করে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমাদের দাবী না মানলে আগামী ২০ মে পর্যন্ত আমরা কোন খামারে বাচ্চা উঠাবোনা।
বক্তারা আরো বলেন, ফিড মিলাররা গত ২ থেকে ৩ বছর যাবৎ পোল্ট্রির খাদ্যের গুনগত মান সঠিক না করে উৎপাদন মূল্যের সাথে সামঞ্জস্য না রেখে খামারীদের কাছে অধীক মূল্যে বিক্রি করে প্রতিনিয়ত কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এ শিল্পের সাথে চাঁদপুর জেলায় প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক সম্পৃক্ত থেকে আমরা জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি। বর্তমানে গুটি কয়েক হ্যাচারী ও ফিড মিল মালিকদের অবৈধ সিন্ডিকেটের কারনে খামরীরা দেওলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে। খামারী ও ডিলাররা (ক্ষুদে ফিড ব্যবসায়ী) ব্যাংক ও বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ গ্রহণ করে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। কিন্তু অধিক মূল্যে বাচ্চা ও খাদ্য ক্রয় করার কারনে প্রতিনিয়তই লোকসান গুনতে হচ্ছে। এতে করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে খামারীরা দিশেহারা হয়ে পরছে।
প্রধানমন্ত্রী বেকারত্ব দুর করার জন্য “একটি বাড়ি একটি খামার” প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। এ প্রকল্পটি বুকে ধারন করে চাঁদপুর জেলার খামারীরা স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। কিন্তু হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবকদের এ কর্মসংস্থানটি আজ দেশী বিদেশী কিছু প্রতিষ্ঠানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারণ সরকার ঘোষিত নির্ধারিত মূল্যকে তোয়াক্কা না করে হ্যাচারী মালিকগণ নিজেদের ইচ্ছে মতো অধিক মূল্যে বাচ্চা বাজারজাত করার কারনে এ প্রকল্পটি আজকে হুমকির মুখে।
সরকারের পূর্বে ঘোষিত ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ টাকা এবং লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৩৫ থেকে ৪০ টাকা নির্ধারণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
মানববন্ধনে জেলা পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক তৈয়ব তাহের সরকা (টিটু)’র সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক কবির হোসেনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লা এসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী আব্দুল মালেক ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি খলিলুর রহমান, আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন মজুমদার খোকন, যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তফা কামাল হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান মোহন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল মিয়া, চাঁদপুর জেলা পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সদস্য সচীব নূরে আলম, সদর উপজেলার আহ্বায়ক সায়েদুর রহমান রেদওয়ান, সদস্য সচীব নাহিদ হায়দার খান, ফরিদগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক ফারুকুল ইসলাম, সদস্য সচীব আজীম হোসেন, কচুয়া উপজেলার আহ্বায়ক মোঃ সফিকুল ইসরাম, সদস্য সচীব আনোয়ার হোসেন, হাজীগঞ্জ উপজেলা আহ্বায়ক মোঃ নাছির হোসেন মজুমদার, সদস্য সচীব মোঃ শরীফুল ইসলাম, মতলব দক্ষিণ উপজেলা আহ্বায়ক আহসান হাবীব লিটন, সদস্য সচীব মোঃ মনির হোসেন মিজি, মতলব উত্তর উপজেলার আহ্বায়ক রাসের দেওয়ান, সদস্য সচীব মোঃ বিল্লাল হোসেন বেপারী, শাহরাস্তি উপজেলার আহ্বায়ক মোঃ রফিকুল ইসলাম, সদস্য সচীব মোঃ নাছির হোসেন, হাইমচর উপজেলার আহ্বায়ক আব্দুল মালেক (মানিক), সদস্য সচিব মোঃ মিজানুর রহমান সহ আরো অনেকেই।
মানববন্ধনে জেলার ৮টি উপজেলার প্রায় ৫ শতাধিক খামারী ও পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে নেতৃবৃন্দরা জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডলের হাতে স্বারকলিপিটি প্রদান করেন।