চাঁদপুর: চাঁদপুর শহরে এক গৃহবঁধূকে হত্যার অভিযোগ করেছে নিহতের স্বজনরা। ঘটনাটি ঘটেছে, ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল ৮টায়। শহরের আবদুল করিম পাটওয়ারী সড়কের বিপনীবাগ এলাকার আব্দুছ সাত্তার মিয়ার মালিকানাধীন অতিথি ভিলার চতুর্থ তলায়। সকাল সাড়ে ১১টায় চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ গৃহবঁধূ ফাহিমা আক্তার হ্যাপী (২০)-এর লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় তার স্বামী সরোয়ার হোসেন সুমনকে পুলিশ আটক করেছে।
ঘটনা সুত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারের পূর্ব জাফরাবাদ এলাকার নাজিম উদ্দিন মোল্লার মেয়ে ফাহিমা আক্তার হ্যাপীর সাথে ফরিদগঞ্জ উপজেলার ঘড়িয়ানা গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম মিয়ার ছেলে সরোয়ার হোসেন সুমনের সাথে ২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর (এক বছর পূর্বে) বিবাহ হয়। গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার ছিল তাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকী। ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার রাতে সরোয়ার হোসেন সুমন ও তার স্ত্রী ফাহিমা আক্তার হ্যাপীর মধ্যে বিবাহবার্ষিকী পালনকে কেন্দ্র করে মতোবিরোধ সৃষ্টি হয়।
সুমন জানায়, ঐ রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নির্ঘুম রাত কাটানোর জন্য ফাহিমা বললে সুমন অপারগতা প্রকাশ করে। এ নিয়ে তাদের দু’জনের মধ্যে অন্তঃদ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। স্বামীর সাথে অভিমান করে হ্যাপী তার শয়নকক্ষের সিলিং ফ্যানের সাথে শরীরের ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বলে তার স্বামী সুমন জানায়।
সুমন আরো জানায়, আমি কাজে যাওয়ার জন্য সকাল ৮টায় ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গেলে এ সুযোগে হ্যাপী ভেতর থেকে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে বাথরুম থেকে এসে দেখতে পাই দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। অনেকক্ষণ ডাক চিৎকার দেয়ার পরও স্ত্রী করলে হ্যাপী দরজা না খোলায় বারান্দার ভাঙ্গা জানালা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পাই। পরে দরজা ভেঙ্গে তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে উদ্ধার করে বাঁচানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এরমধ্যেই হ্যাপীর মৃত্যু হয়।
এদিকে হ্যাপীর মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন বিপনীবাগের অতিথি ভিলায় ছুটে আসে। মৃতের পিতা নাজিম উদ্দিন মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়েকে সরোয়ার সুমন ও তার পরিবারে লোকজন হত্যা করে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ শাহ্আলম জানায়, প্রাথমিক তদন্তে আত্মহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে ময়নাতদন্ত শেষে এর সঠিক কারণ নির্ণয় করা যাবে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, হ্যাপীর স্বামী সরোয়ার হোসেন সুমন ফরিদগঞ্জ উপজেলার একটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ও চাঁদপুর শহরের কর্ণফুলী হাসপাতালে চাকুরি করেন। মৃত ফাহিমা আক্তার মা রাবেয়া বেগম মেয়ের মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে বারবার সরোয়ার হোসেন সুমনকে দোষারোপ করে বলছিল, বিয়ের পর থেকে তার মেয়েকে শান্তি দেয়নি। কারণে-অকারণে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হতো। সুমন তার মেয়েকে হত্যা করে ফেলেছে। ফাহিমা আক্তর হ্যাপী চলতি বছরে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছে। পরিবারের মধ্যে ৪ বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সে ৩য়। সরোয়ার হোসেনের মা ছালেহা বেগম জানান, আমরা কখোনই বিয়ে হওয়ার পর থেকে ফাহিমাকে কোন ধরণের যন্ত্রণা দেইনি। সে কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তা আমরা বলতে পারবোনা। তাছাড়া ফাহিমা প্রতিদিনই সকাল ৯টার পূর্বে ঘুম থেকে উঠতো না।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত ফাহিমা আক্তার হ্যাপীর পিতা নাজিম উদ্দিন মোল্লা তার মেয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।