প্রতিনিধি
চাঁদপুরে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় চাঁদপুরের ডিবির ওসি মোস্তফা কামাল বেধম নির্যাতন করার ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের জড় উঠার পর অবশেষে ঐ বিতর্কিত ওসিকে শাস্তি হিসেবে বদলী করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চাঁদপুর জেলা পুলিশ সূত্রে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। একটি বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে, তাকে কুমিল্লা জেলার প্রত্যান্ত অঞ্চলে তাকে বদলী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশের উধর্বতন কোন কর্মকতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জানা যায়,এ নির্মম, লোমহর্ষক ও পৈচিক ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার (গত ১৫জুন) দিবাগত গভীর রাতে। এদিকে ডিবির ওসি মোস্তফা কামাল শাহাদাতের উপর শারীরিক নির্যাতনের বিষয়টি একেবারেই অস্বীকার করে নিজেকে দায় সারা করার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় চাঁদপুর শহরসহ সর্বস্তরের ব্যাপক তোলপাড় ও প্রতিবাদের জড় উঠে। চাঁদপুর ডিবির ওসি মোস্তফা কামালের বিরুদ্বে চাঁদপুর সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো: শাহাদাত হোসেনকে আটকের পর নির্যাতনের অভিযোগ উঠে। চাঁদপুর জেলা ছাত্রলীগ ফেজবুকের মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে দেয়। এ খবর স্থানীয় ও জাতীয় পত্র পত্রিকায় ব্যাপক আকারে প্রকাশিত হয়। সেই অভিযোগের কারনে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন হরা হয়। । এমন অমানুষিক নির্যাতনের পরও তাকে চিকিৎসা না করিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে পাষন্ড ডিবি’র ওসি মোস্তফা কামাল। পরে গত রবিবার(১৮জুন) তাকে আদালতের নির্দেশে চিকিৎসার জন্যে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শাহাদাত হাসপাতালে কারারক্ষীদের প্রহরায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু যন্ত্রনায় কাতরায়। গত বুধবার ২১জুন চাঁদপুর আদালত শাহাদাতকে জামিন মনজুর করেন। গত রবিবার ১৮জুন থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ২৯ জুন পর্যন্ত শাহাদাত চাঁদপুর সরকারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে গত ১৯জুন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ পত্রিকায়, ওসির বিরুদ্বে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিরোনামে একটি রিপোট প্রকাশ হওয়ার পর চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার ঘটনাটি আমোলে নিয়ে তদন্ত করার জন্য একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
উল্লেখ্য, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাহাদাত হাওলাদারের সাথে গতকাল কথা হলে তিনি আলোকিত বাংলাদেশের এ প্রতিনিধিকে জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার ক’জন ডিবি পুলিশ তাদের গুয়াখোলাস্থ বাসায় গিয়ে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তাদের সাথে ডিবি অফিসে যেতে বলে। এ সময় সাহাদাত বলেন কেনো যাবো, কী কারণে যাবো বললেও পরে ডিবি পুলিশের চাপের মুখে অসহায় হয়ে তাদের সাথে যেতে বাধ্য হন। সাহাদাত বলেন, আমাকে এসপি শামসুন্নাহার স্যারের কথা বলে ডিবি অফিসে নেয়া হলেও আমি সেখানে গিয়ে এসপি স্যারকে দেখতে পায়নি। পরে ডিবির ওসি মোস্তফা কামাল নিজে এসে পাহাড়ি বেত দিয়ে তাকে বেদম মারধর শুরু করেন। সাহাদাত জানান, তাকে মাটিতে উপুড় করে শুইয়ে একজন ডিবি পুলিশ তার পায়ের উপর দাঁড়িয়ে থাকে আর ডিবির ওসি তার সমস্ত শরীরে বেধমভাবে পেটায় এবং পিছনের অংশের (পাছায়) লাঠি দিয়ে দীর্ঘ সময় আঘাত করতে থাকে। লাঠি ভেঙ্গে যাওয়ার পর হকিস্টিক দিয়ে আমাকে মারতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। এ অবস্থায়ই পরদিন শুক্রবার আমাকে চাঁদপুর আদালতে হাজির করলে আদালত আমাকে জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কী জন্যে তাকে আটক করা হলো এবং মারা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে সাহাদাত জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার গোবিন্দিয়া এলাকায় একটি মাছের ঝিল নিয়ে একই এলাকার জহির প্রকাশ জেএমবি জহিরদের সাথে তাদের বিরোধ রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো মামলা নেই। ধারণা করছি তারাই ডিবি পুলিশ দিয়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটানোর চক্রান্তটি করিয়েছে।
এ বিষয়ে ঐ দিন জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি পুলিশ)-এর অফিসার ইনচার্জ মোস্তফা কামালের সাথে এ প্রতিনিধির কথা হলে তিনি জানান, সাহাদাতের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা রয়েছে। মামলার বাদী হচ্ছেন গোবিন্দিয়া গ্রামের মজিবুর রহমান (জহিরের ভাই)। এ মামলা ডিবির কাছে আসলে তাকে ডিবি পুলিশ আটক করে আদালতে সোপর্দ করে। তিনি সাহাদাতের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সে এখন হাসপাতালে ভর্তি এবং তার শারীরিক নির্যাতনের বিবরণ তাঁকে বলা হলে তিনি বলেন, এটি হয়তো অন্য কোনোভাবে হয়েছে, তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। এদিকে সাহাদাতের উপর শারীরিক এই নির্যাতনের চিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এটি নিয়ে তোলপাড় চলতে থাকে।