চাঁদপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বায়োগ্যাসের ব্যবহার। হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার বায়োগ্যাস ব্যবহার করছে। দুগ্ধ খামারীরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে এখন প্রতিবেশী বাড়িগুলোতে গ্যাস বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ সড়কের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৬ নম্বর বড়কুল ইউনিয়নের কাজিরখিল, ধোঁয়াগণ্ডা এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলার তেলিশাইর গ্রামে অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরু পালন করছে একাধিক পরিবার। কিছু পরিবার মাত্র একটি গরু পালন করছে। আর তাই দিয়েই তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ থেকে ১৮ লিটার দুধ বিক্রি করতে পারছে। দুধের পাশাপাশি এই একটি গরুর গোবর দিয়েই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করে নিয়েছে এমন পরিবারও দেখা গেছে। একটি গরুর গোবরে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপন্ন হয় তা দিয়ে চার-পাঁচজনের পরিবারে রান্নার কাজ ভাল করে চলে যায়।
এ ছাড়া যে সব পরিবার ১০-১২টি গরু পালন করছে তারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাড়ির বাইরে লাইনের মাধ্যমে গ্যাস বিক্রি করছে। এতে প্রত্যেক গ্রাহককে মাসে এক হাজার টাকা দিতে হয়।
এ এলাকায় প্রথম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট চালু করেন কাইজাঙ্গা গ্রামের মনির হোসেন। তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, শুধু তাদের গ্রামেই গরুর খামার রয়েছে ২৩টি। দুধ উৎপাদনের জন্য গরু পালন শুরু করলেও পরে বিভিন্নজনের পরামর্শে বায়োগ্যাস উৎপাদনের ঝুঁকি নেন মনির হোসেন। এখন নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আশপাশেও গ্যাস সংযোগ দিয়েছেন। এ থেকে প্রতিমাসে তার আয় হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। একই গ্রামের সলেমান পাটোয়ারীসহ অন্য অনেকেও গ্যাস বিক্রি করছেন।
প্রবাসী মিজান সরকারের স্ত্রী ফাতেমা বলেন, ‘ছয় মাস আগে অন্যদের দেখাদেখি বাচ্চাদের দুধের জন্য একটি গরু কিনে আনি। পরে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ করে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করি। এই একটি গরুর গোবরে যে পরিমাণ গ্যাস উৎপন্ন হয় তা দিয়েই আমার রান্নার কাজ চলে যায়।’
খামারী দুলাল মিয়া জানান, বর্তমানে তার তিনটি গরু রয়েছে। প্রতিদিন দুধের পাশাপাশি যে পরিমাণ বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয় তা দিয়ে পরিবারের ১০ সদস্যের রান্নার কাজ সম্পন্ন হয়।
গরুর খাবার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গরুর জন্য নেপিয়ার ও জার্মানী জাতের ঘাস উৎপাদন করেন। এই ঘাসেই বছরের প্রায় ৮ মাস কেটে যায়। বাকি সময় বাজার থেকে খাবার কিনে আনেন।
দুলালের স্ত্রী শিরিনা আক্তার বলেন, ‘লাকড়ি-খড়ির ব্যবহার বহুত ঝকমারি। এখন পাতিল ময়লা হয় না, যখন মন চায় তখনই চুলা জ্বালানো যায়। রান্নাঘরও আগের থেকে অনেক পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখা যাচ্ছে।’
স্থানীয় সেন্দ্রা বাজারের ব্যবসায়ী আহসান হাবীব বলেন, ‘আমরা চাই সরকার আমাদের গ্রামকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট পল্লী হিসেবে ঘোষণা দিক। এ জন্য আমরা সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
শিরোনাম:
সোমবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।

