স্টাফ রিপোর্টার
শহরের প্রাণকেন্দ্রে চাঁদপুর সরকারী কলেজের সন্নিকটে চিত্রলেখা মোড়ে সৌদিয়া প্লাজার ৩য় তলায় জাতীয় যুব কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবৈধ সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা ও জাল-সনদপত্র দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন, সনদপত্র, বিভিন্ন কোর্সের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘ ৪ বছর যাবত মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা।
সারাদেশে কারিগরী শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৩’শ ৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চাঁদপুর জেলায় ১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, কিন্তু জাতীয় যুব কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নামে বোর্ড অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ও ওয়েবসাইটে নেই।
এই প্রতিষ্ঠানটি বোর্ড কর্তৃক কোন অনুমোদন বা বৈধ কাগজপত্র না থাকা সত্বেও দীর্ঘ ৪ বছর প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে, এ নিয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালকদের মনে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মামুনুর রশিদ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ৬ মাসের ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, ১ বছর মেয়াদে হায়ার ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ২/৩ মাস মেয়াদে ঝঢ়ড়শবহ ঊহমষরংয/ সেলাই কাটিং, এডভান্স সার্টিফিকেট ইন-কম্পিউটার এপ্লিকেশন প্রশিক্ষন দিয়ে যাচ্ছেন।
অথচ কারিগরী বোর্ডে এই ধরনের কোন কোর্র্স না থাকা সত্বেও তিনি শিক্ষার্থীদেরকে তার মন গড়া প্রশিক্ষণের নামে সাইন বোর্ড সাঁটিয়ে কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে কোর্স প্রতি ৫-১০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে।
অনুমোদন, রেজিষ্ট্রেশন, সনদপত্র ও বিভিন্ন মেয়াদে ডিপ্লোমা কোর্সের বিষয়ে মামুনুর রশীদকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আমার বোর্ডের কোন অনুমোদনের প্রয়োজন নেই। আমি ঢাকার জাতীয় যুব ও কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্র, রেজিঃনং ৫০১৮৮, ঠিকানা- ২৭৯/৪-এ খিলগাও, তিলপাপাড়া, ঢাকা-১২১৯ এর আওতায় ২০১১ সালে ১লা মার্চ চাঁদপুর শাখার অনুমোদন এনে কেন্দ্র পরিচালনা করছি এবং এর বিনিময়ে ৫ হাজার টাকা করে প্রতি বছর নিয়মিত পরিশোধ করে আসছি। কোন রশিদ, শিক্ষার্থীদের রেজিষ্ট্রেশন, সনদপত্রের কাগজপত্র চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেনি।
এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এই প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদেরকে যে সনদপত্র দেওয়া হয়েছে তা আমাদের চাকুরীর ক্ষেত্রে কোন কাজে আসেনি। কিন্তু ভর্তির সময় আমাদের বিভিন্ন প্রলভন দেখিয়েছে।
বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ট্রেনিং এন্ড রিসার্স এসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক অধ্যাপক মিজানুর রহমান ফাহিম জানান, চাঁদপুরে যে সকল প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের প্রত্যেকের বোর্ড অনুমোদিত আলাদা কোড নম্বর ও ই আই আই এন নাম্বার রয়েছে। অথচ এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে পরিচালনা করে চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল অংকের টাকা। তিনি আরো জানান, বোর্ডে ডিপ্লোমা কোর্স নামে ৬ মাসের কোন কোর্স নেই। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ‘জাতীয়’ ‘যুব’ নামে শব্দ ব্যবহার করা যাবেনা।
চাঁদপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ সোলায়মানকে ৬ মাসের ডিপ্লোমা-ইন-কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং নামে কোন কোর্স বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ৪ বছর মেয়াদ ছাড়া কোন ডিপ্লোমা কোর্স হয় না। যারা এরকম কোর্সের নাম ব্যাবহার করে আসছে তা সম্পূর্ণ বেআইনি ও শিক্ষার্থীরা এতে করে প্রতারিত হচ্ছে।
ঢাকা জাতীয় যুব কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্রের পরিচালক মিজানুর রহমানকে মোবাইল ফোনে চাঁদপুরের মামুনুর রশীদ এর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, চাঁদপুরে আমাদের একটি শাখা রয়েছে, তার কোন অনুমোদন আছে কিনা, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার প্রশিক্ষন কেন্দ্রের রেজিষ্ট্রেসন রয়েছে যার নং ৫০১৮৮।এ নাম্বারের মাধ্যমেই আমরা চাঁদপুর সহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে একাধিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছি। ই আই আইএন নাম্বার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান তা সম্পর্কে আমি অবগত নই।
বর্তমানে মামুনুর রশিদের প্রতিষ্ঠানে ৭০-৮০ জন প্রশিক্ষনার্থী রয়েছে। তিনি নিজেই প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদেরকে প্রশিক্ষন দিয়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়াও চাঁদপুরে নামে বেনামে অবৈধ ভাবে সাইন বোর্ড টানিয়ে আরো একাধিক প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এ ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স শেষে যে সনদপত্র পাচ্ছে তা দিয়ে চাকুরী ক্ষেত্রে বিন্দু মাত্র কোন কাজে আসছেনা বলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চাঁদপুর জেলার নেতৃবৃন্দরা জানান। এধরনের অবৈধ প্রতিষ্ঠানের কারনে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অতিবিলম্বে অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রদক্ষেপ না নিলে প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা প্রতারিত হবে।
সারাদেশে কারিগরী শিক্ষা বোর্ড অনুমোদিত ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ১ হাজার ৩’শ ৭০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চাঁদপুর জেলায় ১৬টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এগুলো হলোঃ ১. হাজীগঞ্জ মডেল কলেজ, ২. প্রত্যাশা কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট, ৩. বন্ধু কম্পিউটার সেন্টার, ৪. মাইক্রো কম্পিউটার স্কুল, ৫. শাহরাস্তি আইডিয়েল টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, ৬. আকাবা কম্পিউটার একাডেমী, ৭. ডিজিটাল জোন এন্ড কম্পিটার্স, ৮. গ্রামিন ফোন কম্পিউটার ইনফরমেশন, ৯. হোসনাবানু মহিলা কলেজ, ১০. রিহান কম্পিউটার ইন্সটিটিউট, ১১. হাজীগঞ্জ আইডিয়াল টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, ১২. মিলারচর এ্যালায়েন্স টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, ১৩. হাজীগঞ্জ টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট, ১৪. পঞ্চগ্রাম ড. শামছুল হক গণ বিদ্যালয়, ১৫. কম্পিউটার গ্যালারি ইন্সটিটিউট, ১৬. অগ্রগামী কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।