সারাদেশে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে দেশের সকল সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, বুধবার সকাল ১০টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, খুলনা এবং বরিশাল বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি এবং সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে, গত দুইদিন চাঁদপুরে থেমে থেমে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে শহরের নিচু এলাকা থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের বাড়ি-ঘরের উঠোন, রাস্তাঘাট, খাল-বিল-ডোবা নালা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে দেশে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। এর প্রভাবে চাঁদপুরের মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা এই তিন নদীর পানি জোয়ারে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মেঘনার পানি এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। পানির চাপে চলছে নদী ভাঙ্গনও।
আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে জানা যায়, হাইমচর, চাঁদপুর সদর ও মতলব উত্তর উপজেলার নদী তীরবর্তী চর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন বলে জনপ্রতিনিধিগণ জানিয়েছেন।
মেঘনার পানি বৃদ্ধি এবং নদী ভাঙ্গনে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হাইমচর উপজেলার হাইমচর ও নীলকমল ইউনিয়নের মিয়ার বাজার, বাংলা বাজার, নূর বাজার, খোকন বেপারীর বাজার, ডিয়ারা বাজার, মাঝির বাজার চর এলাকার।
এখানকার চরের অসংখ্য পরিবার নদী ভাঙ্গনে জায়গা-জমি, ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। পরিবার-পরিজন আর তাদের কাছে থাকা শেষ সম্বল গরু, বাছুর, হাঁস, মুরগি, ভাঙ্গা ঘরের আসবাবপত্র ট্রলারে করে নিয়ে আশ্রয়ের জায়গা খুঁজছে।
এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটোয়ারী পানিবন্দী ও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
অপরদিকে পদ্মা ও মেঘনা নদীর ভাঙ্গন থেমে নেই রাজরাজেশ্বরে। চাঁদপুর সদর উপজেলা রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের প্রায় অর্ধেক অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান হাজী হযরত আলী বেপারী জানান, ইউনিয়নের বহু পরিবার পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। নদী ভাঙ্গনে এ পর্যন্ত ৫শ’ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হানারচর ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। মতলব উত্তর উপজেলায় চরাঞ্চলের বহু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টও ঝুঁকিপূর্ণ।
এদিকে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ ঘেঁষে পদ্মা-মেঘনার পানির প্রবল স্রোত বয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এতে আবারো শহররক্ষা বাঁধ ভাঙ্গনের মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পুরাণবাজার ঠোঁডা ও হরিসভা পয়েন্টে নদী ভাঙ্গনের ঝুঁকি বেশি বলে জানান তারা।
মেঘনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন পানিবন্দী হাজারও মানুষ। তলিয়ে গেছে স্কুল, হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ঘরবাড়িসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। চরাঞ্চলের এবং গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এখন নৌকা। অনেকে কলাগাছের ভেলা ব্যবহার করছেন। অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব। বাড়ছে রোগ-ব্যাধি, দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের তীব্র সঙ্কট। সরকারের পক্ষ থেকে কোথাও কোথাও ত্রাণ দেওয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
এদিকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, চাঁদপুরের মেঘনাসহ ১৭টি নদীর পানি ২৮টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্যে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। এতে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, তিস্তা ও মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।