এখন রূপালী ইলিশের ভরা মৌসুম। এবার দেরিতে হলেও জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে। তবে সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়লেও চাঁদপুরের মেঘনা অববাহিকায় তুলনামূলক কম ধরা পড়ছে। নদ-নদীতে জেলেরা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত। কোনো জেলে এখন খালি হাতে ফিরছে না। এখানকার নদ-নদীতে ইলিশ শিকারের জন্য ইলিশ জাল (ছান্দি) ব্যবহার করে না। কম খরচে বেশি ইলিশ পাওয়ার আশায় তারা নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল ও লাল সুতার তৈরি ছোট ফাইল যুক্ত গুলতি জাল দিয়ে ইলিশ মাছ ধরে। ফলে বড় আকারের চেয়ে এ ধরনের জালে ছোট ছোট ইলিশ বেশি ধরা হয়।
সাগর ও নদীতে এখন কম-বেশি ছোট বড় আকারের অনেক ইলিশ ধরা পড়ায় সেই ইলিশে এখন সরগরম চাঁদপুর মাছ ঘাট। মাছের আমদানি বেশি হওয়ায় ইলিশের দাম কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে। কিছুদিন আগেও আকারভেদে এক কেজি ইলিশ হাজার-১২শ’ টাকা থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেই ইলিশ এখন ঘাটে বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৫শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা। তবে এক কেজি সাইজের লোকাল মাছের দাম একটু বেশি। গত এক সপ্তাহ যাবৎ চাঁদপুর মাছ ঘাটে প্রচুর ইলিশ আসছে। আড়তদার ও পাইকাররা জানায়, সাগরের ইলিশের চাপ থাকায় মাছের দামও কমেছে। লোকাল নদীর মাছ এখন ধরা পড়ছে কম। চাঁদপুর মাছ ঘাটের ব্যবসায়ী হাজী আবদুল মালেক খন্দকার জানান, গতবারের চেয়ে মাছ কম। সামনে যে ক’দিন সময় আছে, মাছ ধরা পড়বে। গফুর জমাদার আড়তের মিজান জানান, ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি সাড়ে ৬শ’ টাকা। এক কেজি সাইজের দাম ৮শ’ টাকা। গতকাল সোমবার ঘাটে গিয়ে দেখা যায় লোকাল ইলিশের আমদানি খুবই কম। ঘাটে ৪-৫টি ফিশিং ট্রলার ইলিশ বোঝাই হয়ে উপকূলীয় এলাকা ডালচর থেকে আসায়, সেই মাছে মাছ ঘাট ইলিশের হাটে পরিনত হয়। নামার ওই মাছ সাড়ে ৪শ’ টাকা থেকে সাড়ে ৫শ’ টাকা এবং এক কেজির আকারের ইলিশ ৭শ’ থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সেখানে গিয়ে আরো দেখা যায়, ৭টি বরফ ভাঙ্গার মেশিন চলছে তো চলছেই। মাছ প্যাকেট করার সময় বরফ দিতে হয়। ভোর থেকে রাত ১০-১১টা পর্যন্ত চলে এই বরফ ভাঙ্গার কাজ। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রতিটি আড়তে সবাই ব্যস্ত মাছ ক্রয়-বিক্রয় কাজে। কয়েক শ’ ঘাট শ্রমিক ইলিশ আড়তে উঠানো, পাল্লায় ওজন দেয়া, মাছ সাজিয়ে রাখা, বাঙ্ ও ককসিট প্যাকেটজাত করা এবং পিকআপে সেই মাছ ডেলিভারী করার কাজে খুবই ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছে। চাঁদপুর মাছ ঘাট যেনো তার পুরানো ঐতিহ্যের প্রাণ ফিরে পেয়েছে। গত ক’দিন ইলিশের প্রাচুর্যতায় ঘাটে সেই দৃশ্যই ফুটে উঠে। এদিকে ঘাটে প্রচুর ইলিশ দেখা গেলেও কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সেই ইলিশ কোথায় যেনো হারিয়ে গেল। জানা যায়, পাইকাররা তাদের চাহিদা মতো মাছ কিনে তারা ঘাট থেকেই মোকামে চালান করে দিচ্ছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা তাদের সাথে চুক্তি অনুযায়ী এখানকার ইলিশের বাছাই করা অংশ আবার চালান করে দিচ্ছে ফিউজিং ফ্যাক্টরীগুলোতে। অনেকে গোপনীয়তা রক্ষা করে সীমান্ত এলাকা দিয়ে ইলিশ পাচারও করছে বলে একটি সূত্রে জানা যায়। চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে গত ২ দিন আগে জেলেরা যে পরিমাণ ইলিশ পেয়েছিল, এখন সেই পরিমাণ মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। গুলতি ও কারেন্ট জালের ফাঁদে এখানকার নদ-নদীর মাছ বড় না হতেই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন চাঁদপুরের জেলেরা যে পরিমাণ ইলিশ পাচ্ছে তার সিংহ ভাগই কিশোর ইলিশ।