প্রতিনিধি
একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল-অবরোধের কবলে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথে ট্রেনের সময়সূচিতে চরম বিপর্যয় ঘটছে। সময় মতো ট্রেন চলাচল না করায় চরম দুর্ভোগের শিকার চাঁদপুর-লাকসাম-ফেনী-চট্টগ্রাম রূটের রেল যাত্রীরা। কখন ট্রেন আসবে, সে অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের স্টেশনে থাকতে হচ্ছে।
সরজমিনে গতকাল রোববার চাঁদপুর রেলওয়ে বড় স্টেশন গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চযোগে চাঁদপুর এসেছেন এড্রো (৩০) ও ড্যানি (২৫) নামে জার্মানীর দু� ট্যুরিস্ট। তারা বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকা, চা বাগান ও সমুদ্র এলাকা ঘুরে দেখার জন্য এসেছেন। ট্রেনে চট্টগ্রাম যাবেন। দুপুরের পর থেকে বড় স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছেন। ক্ষুধার্ত এ দু� বিদেশী পর্যটক স্টেশনের হোটেলে বাংলাদেশী খাবার খেয়েছেন। সময় কাটানোর জন্য আটকা পড়া অন্যান্য যাত্রীর সাথে খোশগল্প করছেন। সে সময় চাঁদপুর রেলওয়ের সিনিয়র টিটি মাহাবুবুর রহমানও উপস্থিত হন এবং বিদেশী দু� বন্ধুকে তাদের গন্তব্যে যাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রায় ৭০-৮০জন যাত্রী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে। বরিশাল বেতাগী থেকে আসা যাত্রী আবদুল জব্বার (৩৫) জানান, তারা ৬-৭জন লঞ্চে ভোর ৬টায় চাঁদপুর এসেছেন। চট্টগ্রাম যাওয়ার কোনো ট্রেন পাচ্ছেন না। তাই সারাদিন রেল স্টেশনেই ট্রেনের জন্য বসে আছেন। বাসস্ট্যান্ড গিয়েও বাস চলাচল না করায় ফিরে এসেছেন। শুক্রবার ছাড়া বাস রাস্তায় বের হয় না। অপেক্ষমান ট্রেনযাত্রী সিরাজুল ইসলাম (২৫) ও সেলিম (৩৫) জানান, তারা লঞ্চে ঢাকা থেকে এসেছেন। একজন চিতোষী অপরজন লাকসাম যাবেন। তাদের সাথে আরো ৮-১০জন যাত্রী রয়েছে। তখনো পর্যন্ত চাঁদপুরে ট্রেন ঢুকেনি। তাই তারা যেতে পারছেন না। আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস ও সাগরিকা এ দু�টি ট্রেন এখন সিডিউলবিহীন চলাচল করছে।
সহকারী স্টেশন মাস্টার মারূফ হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে অধিক নিরাপত্তার জন্য ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। লোকাল ও ডেম্যু ট্রেন দু�টি চলাচল করছে না। পাইলট ইঞ্জিন (লাইট ইঞ্জিন) নিরাপত্তা টিম সহকারে আগে চাঁদপুর-লাকসাম রূটে আসা-যাওয়া করার পর লাইন ক্লিয়ার রয়েছে এমন সিগন্যাল দিলে তারপরেই ট্রেন এক স্টেশন থেকে অপর স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ওই স্টেশন কর্মকর্তা আরো জানান, নাশকতা পরিস্থিতি এড়িয়ে চলাচলরত দু�টি ট্রেন গতি কমিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে বলে ট্রেনের সময়সূচি বজায় থাকছে না।
গতকাল রোববার ভোর ৫টায় চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রামগামী মেঘনা এক্সপ্রেস যাওয়ার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেন ওই সময় যাত্রী নিয়ে রওনা হয়। সাগরিকা সিডিউল অনুযায়ী দুপুর দেড়টায় চাঁদপুর পৌঁছার কথা। তার স্থলে শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ৪টায় চাঁদপুর আসে এবং ভোর ৫টায় ছেড়ে যায়। অপরদিকে আন্তঃনগর মেঘনা একদিন পর গতকাল রোববার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম হয়ে চাঁদপুর এসে পৌঁছায়। রাত ১০টায় মেঘনা চাঁদপুর পৌঁছে পরের দিন ভোর ৫টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা। গাড়ি ছাড়ার আগে পাইলট ইঞ্জিনের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে ট্রেন চালানো হয়। লাইন চেক করার পর ট্রেন চলতে হয় এ কারণে রেলওয়ের ট্রেন সিডিউল বিপর্যয় হচ্ছে।
চাঁদপুর রেলওয়ে বড় স্টেশন অফিস সূত্রে জানা যায়, ভোর ৫টায় আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস, সকাল ১০টা ১০ মিনিটের সময় ডেম্যু ট্রেন, ২টা ২৫ মিনিটে সাগরিকা এক্সপ্রেস, বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ডেম্যু এবং রাত ৯টায় লাকসাম লোকাল ট্রেন সিডিউল অনুযায়ী চাঁদপুর ছেড়ে যেতো। তার স্থলে এখন অবরোধের কারণে শুধুমাত্র মেঘনা ও সাগরিকা চলাচল করলেও এ দু�টি ট্রেনের সিডিউল দিন-রাত তফাৎ। নৌ-পথে আসা যাত্রীরা বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা না পেয়ে ট্রেনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। যাত্রীরা ট্রেনের জন্য চাঁদপুর এসে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। সময় মতো ট্রেন চলাচল না করায় অনেক যাত্রীকে রেল স্টেশনে রাত কাটাতে হচ্ছে।