অতিরিক্ত যাত্রী বহনে বন্দর কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদা গ্রহণের অভিযোগ
চাঁদপুরে বন্দর কর্মকর্তার পিটুনিতে যাত্রী-সুপারভাইজারসহ আহত-১৫
স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরে অতিরিক্ত যাত্রী বহনে বন্দর কর্মকর্তাকে চাঁদা না দেওয়ায় বন্দর কর্মকর্তা কর্তৃক সুপারভাইজার, ক্যানভাচারসহ ১৫ জনকে পিটিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার সকাল পৌনে ১১ টায় চাঁদপুর নৌ-টার্মিনাল পল্টুনে। এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এমভি প্রিন্স অব রাসেল-৩ কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানালেন বন্দর কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান। আহতরা স্থানীয়ভাবে ও চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়। এ ঘটনায় চাঁদপুর সদর ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পঙ্কজ বড়–য়া ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে ২০ টাকা জরিমানা করেন।
চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালের বিভিন্ন লঞ্চের সুপার ভাইজার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চাঁদপুর নৌ-বন্দর কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান রবিবার চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঈদের চতুর্থ দিনে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের জন্য ৫ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ করেছেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। এর বিনিময়ে লঞ্চগুলোকে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অতিরিক্ত বার্ডিং সময় দিয়েছেন বলে বিভিন্ন লঞ্চের সুপারভাইজার ও মালিক প্রতিনিধিরা অভিযোগ করেন। গতকাল রবিবার চাঁদপুর-ঢাকার মধ্যে চলাচলকারী এম.ভি প্রিন্স অব রাসেল-৩ চাঁদপুর নৌ-বন্দর এসে যাত্রী উঠাতে থাকে। লঞ্চটি নির্ধারিত সময় ১১ টায় ঘাট ত্যাগের পূর্বে পৌনে ১১ টায় ছেড়ে যেতে বলেন বন্দর কর্মকর্তা। এ সময় প্রিন্স অব রাসেল-৩ লঞ্চের স্থানীয় সুপার ভাইজার ও মালিক প্রতিনিধিরা ক্যানভাচারের মাধ্যমে যাত্রী উঠাতে থাকে। এ সময় হঠাৎ বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান উত্তেজিত হয়ে পুলিশ, কোষ্টগার্ড ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে না বলে নিজেই আইন হাতে তুলে নিয়ে কাঠের রুলার দিয়ে এলোপাথাড়ি যাত্রী, সুপারভাইজার, মালিক প্রতিনিধি ও ক্যানভাচারদের পিটিয়ে আহত করেন। এ সময় ঘাট সুপারভাইজার ফয়সাল হোসেন বাবু, মালিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন দেলু, মনির চোকদার ও যাত্রীসহ কমপক্ষে ১৫ জন পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেন বলে তারা জানান। এ সময় সকলের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করে লঞ্চটিকে ঘাট ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। আহত যাত্রীরা স্থানীয়ভাবে ও লঞ্চে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন বলেন লঞ্চ কর্তৃপক্ষ জানান। এছাড়া বাকি আহত রুহুল আমিন হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন দেলু, মনির চোকদার, ফয়সাল হোসেন বাবু, বিপ্লব সরকার এদেরকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয় বলে মালিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন হাওলাদার জানান। পরে নৌ-টার্মিনালে অবস্থানরত যাত্রীরা বন্দর কর্মকর্তার উপর চওড়া হলে যাত্রীদের তোপের মুখে বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে কোষ্টগার্ড ও পুলিশ বাহিনীর সহায়তায় ঐ স্থান ত্যাগ করে। পরে মুঠো ফোনে জেলা প্রশাসককে ঘটনাটি জানিয়ে চাঁদপুর সদর ভূমি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পঙ্কজ বড়–য়াকে ১ ঘন্টা পর ১২ টায় নৌ-টার্মিনালে নিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত দেখিয়ে লঞ্চ কর্তৃপক্ষকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে তার রশিদ মালিক প্রতিনিধি রুহুল আমিন হাওলাদারকে ধরিয়ে দেন। এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ-বন্দর কর্মকর্তা উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, লঞ্চটি ধারন ক্ষমতার ৩ গুণ যাত্রী বহন করায় তিনি যাত্রীদেরকে লঞ্চ থেকে নামানোর জন্য লাঠি চার্জ করেছেন। এছাড়া তিনি সুপারভাইজারদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করলেই মালিকরা নত হয়ে প্রশাসনের কথা শুনবে। কোন লঞ্চ থেকে চাঁদা গ্রহণ করে সে লঞ্চকে অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়নি। এছাড়া তিনি আরো বলেন, যারা নৌ-বন্দরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার বিষয়টি আমার মাথায় রয়েছে। চাঁদপুর নৌ-বন্দরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। পল্টুন এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।