মিজান লিটন ॥ চাঁদপুরের শহর ও গ্রামাঞ্চলের খেজুর এখন বাণিজ্যিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। শহরের ফলের দোকানগুলোতে অন্যান্য ফলের সাথে শোভা পেয়েছে দেশীয় খেজুর। এসব খেজুর আরবের খেজুরের তুলনায় আকারে ছোট হলেও গায়ের রঙ অনেকটা ক্রেতাদের নজর কাড়ে। পূর্বে এসব খেজুর ছিলো বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের আহার। কিন্তু এখন কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী গ্রাম থেকে এসব খাজুর সংগ্রহ করে শহরের ফলের দোকানগুলোতে বিক্রি শুরু করেছে। শহরের কালিবাড়ীতে ফলের দোকানে দেখাগেছে এসব খেজুর।
শহরতলীর বাসিন্দা ও ফলের দোকানীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, আরবের খেজুরের তুলনায় এসব খাজুরের মূল্য একই রকম। প্রায় ১শ’ ২০ থেকে দেড়শ’ টাকা ধরে বিক্রি হয় প্রতি কেজি খেঁজুর। এক আঁটিতে (আঞ্চলিক ভাষায় থোকনা) প্রায় ৪ থেকে ৫ কেজি খেঁজুর পাওয়া যায়। ভালো মানের একটি খেজুর গাছে ২৫-৩০ কেজি খেঁজুর ফলন হয়। প্রতিবছর রসালো ফলের মৌসুমে পাকতে শুরু করে এসব খেজুর। এখন কাটা শুরু হয়েছে এসব খেজুরের আটি। কাঁচা থাকলে কয়েকদিন ঘরে রাখলেই পেকে চমৎকার রঙ হয়।
চাঁদপুর সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের সাপদি গ্রামের শরীফ জানায়, তাদের প্রায় ২০টি খেজুর গাছ রয়েছে। তবে এসব খেঁজুর গাছ কেউ রোপন করেনি। রাস্তার পাশে ছোটবেলা থেকে থেকেই দেখে আসছে খেজুর গাছগুলো। গাছগুলোর তেমন যতœও নেওয়া হয়না। তবে রস কাটার সময় গাছের ঢালগুলো কেটে পরিস্কার করা হয়। তারা খেজুর বিক্রি করে না। পাখি আর এলাকার ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা গাছ থেকে পেকে খেঁজুর পড়লে খাওয়ার জন্য কুড়িয়ে নেয়। খুব ভোরে খেজুর কুড়িয়ে নেয়ার প্রতিযোগিতা থাকে ছোটদের মধ্যে। তবে ইদানিং যারা ডাব ব্যবসায়ী গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডাব ক্রয় করে, তারাই খেজুর ক্রয় শুরু করেছে। তবে নির্দিষ্ট কোন দামে বিক্রি হয় না। পুরো গাছে যা আছে তা একেবারে দরদাম করা হয়।
সদর উপজেলার বিষ্ণুপুরেও দেখাগেছে রাস্তার পাশে অনেক বড় বড় খেঁজুর গাছ। তবে এসব খেজুর গাছগুলো কোন যতœ নেই। অনেক ঢাল পালার ভিতরেই চমৎকার রঙে খেজুরগুলো ঝুলতে দেখা যায়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুর বাগান না থাকলেও এলোমেলো ভাবে বেড়ে উঠা অনেক খেজুর গাছ রয়েছে। মাটির উর্বরতার উপর নির্ভর করে অনেক খাজুরের চামড়া মোটা আবার অনেক ক্ষেত্রে ছোট ও চামড়া পাতলা হয়।
বাগাদী ইউনিয়নের বাসিন্দা কৃষক জাহাঙ্গীর পাটওয়ারী জানায়, আমরা অনেক ফলগাছই এখন বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করি। কিন্তু খেজুরগাছ ওইভাবে লাগানো হয়। তবে জমিতে না লাগালোও উঁচু স্থানে সারিবদ্ধভাবে খেজুর গাছ রোপন করলে রসের স্বাধগ্রহন, ডালগুলো জ্বালানি কাজে ব্যবহারসহ বেশ লাভজনক হয়ে উঠবে খেজুরগাছ।
চাঁদপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পয়েজ উদ্দিন বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত খেঁজুরের বাণিজ্যিক চাষ হয় না। তবে ইশ্বরদী জেলায় সৌদি আরবের খেঁজুরের কিছু বীজ রোপন করা হয়েছে। ওই সব চাষিরা কিছুটা সফলতা পেয়েছে। সাধারণত সারাদেশের আবহাওয়ার কারণে বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের গাছ লাগানো সম্ভব হয়ে উঠে না। তবে এসব খেজুরের কোন জাত নেই। সাধারণত দেশীয় জাতের খেজুরই বলা হয়ে থাকে।