চাঁদপুর:
চাঁদপুরে বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। অব্যাহত লোডশেডিংয়ে জনজীবন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শহরে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামের মানুষ সারাদিনে বিদ্যুৎ পাচ্ছে মাত্র ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা। পিডিবি ও পল্লী বিদু্যতের চাহিদা অনুযায়ী চাঁদপুরে প্রায় ১শ’ মেগাওয়াট বিদু্যৎ প্রয়োজন। গ্রীডের হিসেব অনুযায়ী বর্তমানে প্রতিদিন পিক আওয়ারে পাওয়া যাচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ মেগাওয়াট। অপ-পিকে ৬০ থেকে ৬৫ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ বিভাগও অতিষ্ঠ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের দাবি, জেলার দু’ কৃতি সন্তান স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী চাইলেই তাদের বিশেষ ক্ষমতাবলে চাঁদপুরের জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বরাদ্দ আনা সম্ভব।
এদিকে বিদু্যৎ বন্টন নিয়ে পিডিবি ও পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে পাওয়া গেছে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য। পিডিবি বলছে, পল্লী বিদ্যুতের নিজস্ব পর্যাপ্ত লোড ট্রান্সফরমার না থাকায় তারা কম বিদ্যুৎ নিতে পারছে। অন্যদিকে পল্রী বিদু্যৎ সমিতি বলছে, পিডিবির রিলে সেটিং পরিবর্তন না করার কারণে তারা তাদের লোড বাড়াতে পাড়ছে না।
পিডিবি জানায়, গ্রিড থেকে চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ, মতলব এবং লক্ষ্মীপুর নামে ৪টি ফিডারে বিদ্যুৎ বিতরণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে চাঁদপুর শহর, চাঁদপুর সেচ প্রকল্প এবং ধনাগোদা সেচ প্রকল্প মিলিয়ে ১টি গ্রীড। এই ফিডারে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় ২০ মেগাওয়াট। এ ফিডারে বর্তমানে দেয়া হচ্ছে পিক আওয়ারে ১২/১৩ মেগাওয়াট। অপ-পিকে ৮/৯ মেগাওয়াট। সবচেয়ে বড় ফিডার হচ্ছে হাজীগঞ্জ। এই ফিডারের আওতায় রয়েছে হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি এবং কচুয়ার কিছু অংশ। এখানকার মোট চাহিদা ৪৫ থেকে ৪৭ মেগাওয়াট। পিডিবি বলছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এ ফিডারে তারা সর্বোচ্চ ২৩ মেগাওয়াট লোড নিতে পারে। এর বেশি কোনো দিন ক্ষমতাসম্পন্ন লোড ট্রান্সপার থাকলে তাদেরকে আরো বিদ্যুৎ দেয়া যেতো। তৃতীয় ফিডারের নাম মতলব। এ ফিডারের আওতায় রয়েছে মতলব উত্তর এবং কচুয়া উপজেলা। তাদের চাহিদা হচ্ছে ১৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে এরা নিতে পারছে সর্বোচ্চ ১০ মেগাওয়াট। একই অবস্থা লক্ষ্মীপুর ফিডারে। ফরিদগঞ্জ এবং হাইমচর মিলিয়ে লক্ষ্মীপুর ফিডার। এদের চাহিদা ১৩ মেগাওয়াট। তারা লোড নিতে পারে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট।
চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম (ইঞ্জিনিয়ার) বিরোধিতা করে বলেন, পিডিবির বক্তব্য সঠিক নয়। তিনি বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত লোড ট্রান্সফরমার রয়েছে। পিডিবি তাদের রিলে সেটিং পরিবর্তন করলে বর্তমান পরিস্থিতিতে হাজীগঞ্জ ফিডারে ৩০ মেগাওয়াট, মতলব ফিডারে ২৫ মেগাওয়াট এবং লক্ষ্মীপুর ফিডারে ১৫ মেগাওয়াট লোড নেয়া সম্ভব। তাঁর দাবি, পিডিবি এ যাবৎ কখনোই তাদেরকে সর্বোচ্চ ৪০ মেগাওয়াট লোড দেননি।
তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে হাজীগঞ্জ ফিডারের প্রায় সকল তার পরিবর্তন করা হয়ে গেছে। মতলব উত্তরে লোড ট্রান্সফরমার স্থাপনের ব্যবস্থা হচ্ছে। এছাড়া মহামায়া, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, হাজীগঞ্জ এবং মতলব উত্তর সাব-স্টেশনের মেঘা ভোল্ট এম্পিয়ার বাড়ানো হয়েছে। এ অবস্থায় পলস্নী বিদ্যুৎ সমিতি পর্যাপ্ত লোড নিতে প্রস্তুত।
পিডিবি এবং পলস্নী বিদ্যুতের অভ্যন্তরীণ ভাগ-বাঁটোয়ারা যাই হোক, লোডশেডিং কমানোর জন্য জেলাবাসীর ভরসা দু’ মন্ত্রী। তারা মনে করেন তাদের দু’ মন্ত্রী বর্তমান সরকারের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাঁদের আনত্দরিকতা ও সদিচ্ছা থাকলে চাঁদপুরবাসীর বিদ্যুৎ সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হবে। অনেকে বলেন, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সংক্রানত্দ সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভূঁইয়া ক্ষমতা বলে তাঁর এলাকায় বাড়তি ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ নিয়েছেন। একইভাবে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) এনামুল হক তাঁর এলাকায় বাড়তি ৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ নিয়েছেন। চাঁদপুরবাসীর দাবি, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের সভাপতি এবং প্রতিমন্ত্রীর চেয়ে আমাদের দু’ মন্ত্রী আরো বেশি ক্ষমতাবান। তারা অবশ্যই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবেন।
তাছাড়া বর্তমান সরকার চাঁদপুরে ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ করেছেন। সেই কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ থেকে ৮৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে। এ কেন্দ্রটি জাতীয় সম্পদ হলেও চাঁদপুরে এটি নির্মাণ করায় জেলাবাসী এর ন্যূনতম অধিকারের দাবিদার। তাদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী সহসাই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। সেদিন তিনি অবশ্যই চাঁদপুরবাসীকে বাড়তি বিদ্যুতের সুবিধা দিয়ে যাবেন।