পৌষের শুরুতেই চাঁদপুরসহ সারাদেশে শীত জেঁকে বসেছে। বুধবার সারাদিন শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকায় সন্ধ্যার পর থেকে শীতের প্রকোপ বাড়তে থাকে। গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদিন সূর্যের কোনো দেখা মিলেনি। আর বাতাসে বাড়তি আর্দ্রতায় শীতকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই শীতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চাঁদপুরবাসীকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে যে, সকাল থেকে গরম কাপড় গায়ে দিয়ে, চাদর, কানটুপি ও গলায় মাফলার পেঁচিয়ে সব বয়সের মানুষকে ঘর থেকে বের হতে হয়েছে। অথচ একদিন আগেও তারা সাধারণ পোশাকেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা কমে তিন ডিগ্রি নীচে নেমেছে। অর্থাৎ বুধবার চাঁদপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল এই তাপমাত্রা ছিলো ১৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বুধবার থেকে শুরু হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল বৃহস্পতিবার এর তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায়। অনুভূত হতে থাকে শীতের তীব্রতা।
শীত বাড়ায় শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় দুর্ভোগ বাড়ছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষের। সেই সাথে সর্দি-কাশি, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত রোগের প্রকোপও বাড়ছে। হাসপাতাল ও ক্লিনিক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
তীব্র শীতে ছিন্নমূল ও গরিবের কষ্টের সীমা থাকে না। বেড়েছে শীতবস্ত্রের দাম। শহরের চৌধুরী জামে মসজিদের সামনে এবং চৌধুরী ঘাট এলাকায় ও চাঁদপুর ডিসি অফিসের পশ্চিম পাশে গরম কাপড় বিক্রির ভাসমান দোকানগুলোতে গতকাল সারাদিনই মানুষের ভিড় দেখা গেছে।
চাঁদপুরের এনডিসি মোঃ মেহেদী হাসান মানিক জানান, এবার শীত শুরুর আগে থেকেই আমাদের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান স্যার শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে এবং নদীর পাড়ের বেদে পল্লীতে গিয়ে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেছেন। উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওগণ কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছেন। আজ বড় স্টেশন ও লঞ্চঘাট এলাকায় ডিসি স্যার নিজেই যাবেন এবং পর্যবেক্ষণ করে শীতবস্ত্র বিতরণ করবেন।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শীতের শুরুতে অর্থাৎ পৌষের প্রথমদিন রাতের তাপমাত্রা কম থাকলেও সকালে সূর্য ওঠায় সেভাবে শীত অনুভূত হয়নি। তবে গত দু’দিনের আবহাওয়া একেবারেই ভিন্ন। সেভাবে সূর্যের দেখা মিলছে না। সঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশা। বিকেল থেকেই মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করে। রাতভর বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়ে। আর ভোর থেকে চারপাশে থাকে ঘনকুয়াশা। রাস্তাঘাট ও হাটবাজারে মানুষের চলাচল কম। কুয়াশার জন্য যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করেছে।
পৌষের শুরুতেই শীত জেঁকে বসায় গরিব লোকজন দুর্ভোগে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশার কারণে তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। খড়কুটো জ্বালিয়ে লোকজন শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। কাজে যেতে না পারায় শ্রমজীবী মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে। স্বল্প আয়ের মানুষ ভিড় করছেন পুরান মার্কেটে মোটা কাপড়ের জন্যে।
শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার গ্রাম ও শহরের মানুষ। আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী গতকাল ১৯ ডিসেম্বর ৫ পৌষ বৃহস্পতিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একদিন আগে এই তাপমাত্রা ছিল ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৩.৩ ডিগ্রি, যা মঙ্গলবার ছিল ১৬.৮ ডিগ্রি।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, ১৬ ডিসেম্বর চাঁদপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৬.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ ছিলো ২৭ ডিগ্রি, ১৭ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন ছিলো ১৭.৪ ডিগ্রি আর সর্বোচ্চ ছিলো ২৬.৭ ডিগ্রি, ১৮ ডিসেম্বর সর্বনিম্ন ছিলো ১৬.৬ ডিগ্রি, আর সর্বোচ্চ ছিলো ২৩.৪ ডিগ্রি এবং গতকাল ১৯ ডিসেম্বর ছিলো সর্বনিম্ন ১৩.৬ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ ছিলো ১৬.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যেমনি কমেছে, তেমনি সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পরিমাণও অনেক কমেছে। তাই গতকাল শীতের তীব্রতা খুব বেশি অনুভূত হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, জানুয়ারিতে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিম ও মধ্যমাঞ্চলে এক থেকে দুটি মাঝারি ও তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।