শওকত আলী॥
ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুর মৎস্য আড়তে মৌসুম ছাড়াই ছোট সাইজের ইলিশের প্রচুর আমদানি হচ্ছে। অন্য সময়ের চাইতে গত ২ দিন যাবৎ ৪ গুন বেশী ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। ইলিশ আমদানির কারণে জেলে, মৎস্য ব্যবসায়ী, দাদনদার ও শ্রমিকদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখা দিয়েছে। তারা কর্মচাঞ্চল ও ব্যস্ততা সময় কাটাচ্ছে। আড়ৎ গুলোতে ইলিশের যে দাম হাকা হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
সোমবার (৮ ফেব্রুয়ারী) বিকেলে চাঁদপুর মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ভোলা, চরপ্যাশন, দৌলতখাঁন, হাতিয়া, রামগঞ্জ ও নোয়খালীর জেলার নি¤œঞ্চাল থেকে প্রতিদিন এসব আড়ৎগুলোতে সহ¯্রাধিক মন ইলিশ আসছে। আর এসব ইলিশ বাক্সের মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকা, গাজীপুর, সিলেট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী আলী আকবর প্রধানিয়া জানান, দক্ষিনাঞ্চল থেকে ইলিশ আমদানি হলেও চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা-মেঘনা নদীতে তেমন ইলিশ ধরা পড়ছে না। আর ছোট সাইজের যে সব ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, সেসব ইলিশ চওড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।
অপর ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন খান জানান, এ বছর ইলিশের প্রকৃত মৌসুম বৈশাখ হতে কার্তিক পর্যন্ত কাংখিত ইলিশ পাওয়া যায়নি। তবে মৌসুম না হলেও প্রাকৃতিক ভাবেই এখন ইলিশ ধরা পড়ছে। জেলে, আড়ৎদার ও দাদনদারা ইলিশ মৌসুমে লক্ষ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে নদীতে ও সমুদ্রে ইলিশ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। ওই সব ব্যবসায়ীরা এখন ইলিশ আমদানির কারনে তাদের ওই সময় খরচ অনেকটা পুষিয়ে নিতে পারছেন বলে এই ব্যবসায়ী জানান।
তিনি আরো জানান, ভর মৌসুমে ইলিশের আকাল থাকায় প্রতিকেজি বড় সাইজের ইলিশ ৪/৫ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। আর এখন ১ কেজি ওজনের ইলিশ দাম কমে তার অর্ধেক হয়েছে।
প্রবীন মৎস্য ব্যবসায়ী সিরাজ চোকদার জানান, জীবনের ৫০ বছরেও শীতের সময় এ ধরনের ইলিশ আমদানি হতে দেখেনি। তবে ইলিশ আমদানি হচ্ছে প্রচুর, দামও তুলনামূলক কম। যেস ইলিশ আসছে চাইজে অনেক ছোট। ২শ’ ৫শ’ গ্রামের ইলিশেই আমদানি বেশী।
মাছ ক্রয় করতে আসা ক্রেতা আলম ও আবুল খায়ের মো. রুহুল আমিন জানান, গত বছর শীতে ইলিশ পাওয়া যায়নি। ইলিশ আমদানির খবর পেয়ে ক্রয় করতে এসেছি। ইলিশ সাইজ যেমন ছোট, দামও তূলনা মূলক কম।
মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন জমাদার (বাবুল হাজী) জানান, এ বছর শীতে যে ইলিশ ধরা পড়ছে, তা ছোট হওয়ায় প্রতিকেজিতে ৫টি থেকে ৩টি পাওয়া যাচ্ছে। ৩শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশের মন ১৪হাজার, ৫/৬শ’ গ্রাম ২৪ হাজার , ৭/৮শ’ গ্রাম ৩৫ হাজার, ১ কেজি ইলিশ ৬০/৬৫ হাজার টাকা। প্রতিদিন ৪৫টি আড়তে এসব সাইজের ইলিশ আমদানি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫শ’ মন। অন্য সময় আমদানি হতো ৪/৫শ’ মন।
ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন গাজী জানান, এখন চাঁদপুর মাছঘাট ঈদের উৎসবের মত লাগছে। শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা দিন-রাত কাজে ব্যস্ত। ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের আয় বেড়েছে। পূর্বে শ্রমিকরা প্রতিদিন ৫শ’ রোজাগার করলেও এখন ১৫শ’ থেকে ২হাজার টাকা আয় করছে। ওই ব্যবসায়ী জানান, মৌসুমী ইলিশের যে স্বাধ পাওয়া যেতো বর্তমানে আমদানি হওয়া ইলিশের স্বাদ অনেকটা কম হবে। অসময়ে ইলিশ দেখে ব্যবসায়ীরা অনেক আত্মহারা হয়ে পড়েছে। এখন তারা থাকতো অনেকটা বিশ্রামে। আর অলস সময় কাটাতো। ইলিশ আমদানির কারণে মনের আনন্দে কাজ করছে।