স্টাফ রিপোর্টার:
চাঁদপুরে বিভিন্ন স্থানে যমুনা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ১০টি শাখা খুলে প্রায় ৫ হাজার গ্রাহকের জমাকৃত প্রায় ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েগেছে। এতে একদিকে যেমন সর্বস্বান্ত হয়েছে তেমনি সংশ্লিষ্ট শাখার ম্যানেজাররা পড়েছেন চরম বিপাকে। গ্রাহক অসন্তোষ থেকে বাঁচতে তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
এক বছর পূর্বে যমুনা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যানঘাটা, সাহেব বাজার, হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও, কৈয়ারপুল, ফরিদগঞ্জের টোরামুন্সিরহাট, ফরিদগঞ্জ, গোয়ালভাওর, বালিথুবা, চান্দ্রাবাজার, গৃদকালিন্দিয়া বাজারে তাদের শাখা খুলে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে রেজিঃ নাম্বার নিয়ে সংস্থাটি এসব শাখায় স্থানীয় পর্যায়ে ম্যানেজার নিয়োগ করে তাদের মাধ্যমে গ্রামের সহজ সরল, সাধারণ মানুষদেরকে লোভনীয় অফার দিয়ে গ্রাহক সৃষ্টি করে। গ্রাহকদের মাসে মাসে মোটা অংকের লভ্যাংশ দেয়ার চুক্তিনামা করে গ্রাহকদের এককালীন ও ফিক্সড ডিপোজিটের নামে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে। গ্রাহকদের কেউ ১০ লাখ, কেউ ৫ লাখ, কেউ ২/৩ লাখ, কেউ ৫০ হাজার কিংবা ১ লাখ করে টাকা জমা দেয়। প্রথমত ২/১ মাস জমাকৃত টাকার লভ্যাংশ দেয়ার পর হঠাৎ করে তা বন্ধ করে দেয়। পরে গ্রাহকদের লভ্যাংশ দেওয়াতো দূরের কথা, বিনিয়োগকৃত আসল টাকাও প্রদান বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি। গ্রাহকরা সংশ্লিষ্ট শাখায় ধর্ণা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে অফিস তালাবদ্ধ করে উধাও হয়ে যায়। সম্প্রতি চাঁদপুর সদরের সাহেব বাজার এলাকায় কয়েশ নারী পুরুষ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম মিজির বাড়িতে বিক্ষোভ করে। তখন তিনি গ্রামের বাড়ি ছিলেননা। বাড়িতে থাকা বৃদ্ধ বাবা-মা বিক্ষুব্ধ গ্রাহকদের আশ্বস্ত করলে তখন পরিস্থি শান্ত হয়। পরে ২/৪ জনের টাকা ফেরত দিলেও বাকিরা আজও তাদের জমাকৃত টাকা পায়নি। এব্যাপারে হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও শাখার ম্যানেজার ফজলুর রহমান বলেন, ‘আমার শাখার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩শ’ গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা তুলে আমি হেড অফিসে জমা করি। ৬/৭ মাস পর সংস্থার ঢাকা প্রধান কার্যালয় গুটিয়ে সংস্থার চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তারা গা ঢাকা দেয়। বিপাকে পড়ি আমরা যারা স্থানীয়ভাবে শাখার ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছি। একই অভিযোগ ফরিদগঞ্জ শাখার ম্যানেজার সাইফুল ইসলামের। তিনিও তার শাখার মাধ্যমে ৬শ’ গ্রাহকের প্রায় ২ কোটি টাকা হেড অফিসে জমা দিয়ে এখন সে টাকার দেনার বোঝা নিয়ে তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জানা যায়, সংস্থাটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন কুষ্টিয়া জেলার মোহিনি মিলস এলাকার মোঃ আঃ কাইয়ুমের ছেলে মোঃ আক্তার হোসেন। তিনি ঢাকা ৬৭/৩/বি উত্তর গোলাপবাগ (৪র্থ তলা) বিশ্বরোড স্থানে প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে এরকম শাখা খুলে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। সংস্থাটির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তার মোবাইল নাম্বার অনেক আগে থেকে বন্ধ রয়েছে। রাজারগাঁও এলাকার মোসাঃ সোহেলি আক্তার বাড়িতে থাকা তার ছাগল, হাঁস-মুরগিসহ সর্বস্ব বিক্রি করে জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ ৫ বছরের জন্য উক্ত সংস্থায় ফিক্সড ডিপোজিট করেন বলে জানান। কিন্তু সব হারিয়ে এখন সে পাগল প্রায়। সংস্থাটির অফিস বা কর্মকর্তা কাউকে সে খুঁজে পাচ্ছে না। কার কাছে কোথায় অভিযোগ করবে তারও কোন সঠিক সমাধান পাচ্ছে না সে। এ ব্যাপারে জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, উক্ত সংস্থাটির কার্যক্রম সম্পর্কে তার কোন কিছুই জানা নেই। তাছাড়া কেউ তার কাছে এব্যাপারে কোন অভিযোগও নিয়ে আসেনি।
চাঁদপুরে যমুনা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন ১৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও