প্রতিবছর চাঁদপুর শহরের একটি বিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী বিজয় মেলা আয়োজন করায় স্থানীয় লোকজন নানাভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ওই বিদ্যালয়সহ চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও। এ অবস্থায় এলাকাবাসী মেলা অন্য কোনো স্থানে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
ওই বিদ্যালয়টির নাম চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়। আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে ওই বিদ্যালয়ের মাঠে মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হতে যাচ্ছে।
মাসব্যাপী এই মেলার কারণে শহরে প্রতিদিন টানা সাত-আট ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। মেলায় লোকজনের সমাগম, মাইকের শব্দ ও লোকজনের শোরগোলের কারণে হাসান আলী উচ্চবিদ্যালয় ছাড়াও চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে পাঠদান এবং বার্ষিক পরীক্ষা নিতে সমস্যা হয়।
চাঁদপুর হাসান আলী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী প্রধান শিক্ষক হাফেজ আহমেদ বলেন, জেলার মধ্যে হাসান আলী একটি শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়। বর্তমানে স্কুলটিতে এক হাজার ৬২৬ শিক্ষার্থী রয়েছে। মেলার কারণে টানা দেড় মাস শিক্ষার্থীদের শরীরচর্চার ক্লাস ও খেলাধুলা বন্ধ থাকে।
চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁর কলেজ থেকে মেলার মাঠটি মাত্র ১০ গজ দূরে। মেলা আয়োজন করায় তাঁদের কলেজের পাঠদান ও হোস্টেলের প্রায় আড়াই শ মেয়ের লেখাপড়া ব্যাহত হয়।
চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘আমরাও চাই মেলা হোক। তবে সেটা ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস থেকে ১৫ দিনের জন্য।’
মেলা উদ্যাপন কমিটির চেয়ারম্যান ও চাঁদপুর শহর বিএনপির সভাপতি সলিমুল্লাহ সেলিম বলেন, নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মেলাটি করা হচ্ছে। এতে করে লোকজনের কিছুটা কষ্ট হতেই পারে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ওই মাঠের চারপাশে চারটি সরকারি স্কুল ও কলেজ, ২৫০ আসনের ছাত্রীনিবাস, ৩০ শয্যার হাসপাতাল, মসজিদসহ শতাধিক বসতবাড়ি রয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, মেলা চলাকালীন শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কে বিকেল চারটা থেকে রাত ১২টা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে আবদুর করিম পাটওয়ারী সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে ওই সময় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় শহরবাসীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা লঞ্চ, বাস ও ট্রেনের যাত্রীদের।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আমির জাফর জানান, ১৬ নভেম্বর মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় ত্রাণ ও দুর্যোগমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরীর কাছেও স্কুলমাঠ থেকে মেলাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার এম এ ওয়াদুদ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য অঙ্গীকারের কাছে হওয়ায় আমরা এই স্থানে মেলা আয়োজনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। তবে জনগণের দাবি উঠলে আমরা ভবিষ্যতে এটি সরিয়ে নেব।’
চাঁদপুর পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি অনেকবার বিজয় মেলা কমিটিকে মেলা আউটার স্টেডিয়ামে নেওয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু তারা শোনেনি।’ জেলা প্রশাসক মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘বিজয় মেলা কমিটির অনুরোধে আমরা এবারও সেখানে মেলা করার অনুমতি দিই। তবে ভবিষ্যতে আর দেওয়া হবে না।’