শওকত আলী ঃ
চাঁদপুরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলিত জনগোষ্ঠী অংশ গ্রহন করার সাহস পাচ্ছেনা । যার ফলে তারা পিছিয়ে রয়েছে বলে মত প্রকাশ করেছেন,দলিত ও হিন্দু নেতারা । অনেক নেতা আবার ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। এছাড়া বর্তমান নির্বাচনী মাঠে ব্যক্তি বা সততার বিচার হচ্ছেনা বলে তাদের মতামত। নির্বাচনী মাঠে নেমে নির্বাচনী ব্যায় ভার বহন করার মত তাদের অবস্থান নেই বলে নেতারা জানান। নির্বাচন করতে হলে জনবল প্রয়োজন রয়েছে । তার পাশাপাশি বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রচুর অর্থেরও প্রয়োজন। তাদের সেই পরিমান জনবল ও অর্থ নেই বলে তাদের মধ্যেও আতংক কাজ করে । যার ফলে শত ইচ্ছা ও নির্বাচিত হওয়ার মত যোগ্যতা যাচাই করার মত মানষিকতা তারা দেখাতে পারেনা বলে তাদের পঞ্চায়েত কমিটির অভিমত। এদের পিছনে শক্তি সাহস ও পৃষ্টপোষকতা করার ব্যক্তি বা গোষ্ঠি থাকলে এরা জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ করতে পারত। সরেজমিনে চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার স্বর্ণখোলা হরিজণ কলোনী,বড়ষ্টেশন,রেলওয়ে হরিজণ কলোনী,পুরান বাজার হরিজণ কলোনী,নতুন বাজার সি.এস.ডি গোডাউন সংলগ্ন মুচি বাড়ী, শহরের কাঁচ্চা কলোনী এলাকা ও রেলওয়ে গেংকোয়াটার এলাকায় বসবাসরত দলিতদের সাথে ব্যাপক আলোচনা সাপেক্ষে তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার ইচ্ছা পোষন করার ক্ষেত্রে অর্থের অভাব ও জনবল সংকটের কথাই বলেছেন বেশীরভাগ দলিত পরিবারের সদস্যরা । এদের মধ্যে অনেকে তাদের মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, নির্বাচন ছাড়াই এদেশে বসবাস করা আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ চলছে। নির্বাচন করলে এদেশে অন্য সম্পদায়ের মানুষের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে জীবন হারাতে হবে অথবা দেশ ত্যাগ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। এদেশে ভোটের অথিকার তাদের রয়েছে বলে তারা জানান । দলিতদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের প্রকৃত অধিকার থেকে আমরা বঞ্চিত রয়েছি। শুধুমাত্র বাসস্থানের সমস্যার জন্য দীর্ঘ ৩০টি বছর চেষ্টা চালিয়ে বাসস্থান সংকট নিরসন করতে পারেনি বলে তারা জানান। তার মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সকল প্রকার কার্যক্রম থেকে সরে গিয়ে জীবন কাটাতে হবে আরও কষ্টে। তাই বাধ্য হয়ে তারা নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করার মত মনমানুষিকতা থাকলেও বিভিন্ন কারনে নিচ্ছুপ হয়ে যেতে হয় বলে তাদের অভিমত। এ ব্যাপারে রেলওয়ে হরিজন কলোনীর শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ মন্দিরে সাধারণ সম্পাদক বিধান চন্দ্র দাস হরিজন(জনি) স্থানীয় নির্বাচনে দলিতদের অংশগ্রহণ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন,বর্তমান সরকারের দেওয়া স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে আমরা ইচ্ছুক রয়েছি। আমরা দলিতরা সঠিকভাবে এদেশের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভোটও দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তুু নির্বাচনী ইস্তেহার অনুযায়ী দলিত তাদের কোন অধিকার পাচ্ছে না। তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করতে ভয় পাচ্ছে । রাজনৈতিক কর্মকান্ডে দলিতরা জড়িত রয়েছে। কিন্তুু ফোকাসে আসতে চাচ্ছেনা। এদেশের দলিতরা বর্তমানে এদেশের রাজনীতিকে শ্রদ্ধা করে । বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী তারা চলছে এবং সংবিধান ও রাজনিতীতে শ্রদ্ধা করে গেলেও রাজনৈতিক পয্যায় থেকে তাদের প্রতি সু-দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না। যার ফলে তারা পিছিয়ে পড়া একটি জাতি হিসাবে গন্য রয়েছে। বর্তমান পেক্ষাপটে নির্বাচন করতে হলে অর্থের প্রয়োজন। দলিতরা অতি কষ্টে জীবন যাপন করছে এদেশে। নির্বাচন করলে তাদের অর্থের প্রয়োজন । কিন্তুু তাদের সেই পরিমান অর্থের অভাব রয়েছে। নিজেরা প্রতিদিন কষ্ট স্বীকার করে নিজেদের জীবন যাপনের জন্য অর্থ উপার্যন করে জীবিকা নির্বাহ করছে। নির্বাচন করে তারা শত্রুতার স্বীকার হতে তারা চায়না। তবে দলীয়ভাবে তাদরেকে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার সুযোগ করে দিলে তারা নির্বাচিত হতে পারে। সেই অবস্থা দলিতদের আছে ও রয়েছে। নতুন বাজার তালতলা স্বর্ণখোলা হরিজণ কলোনীর হরিজন নেতা ও চাঁদপুর পৌরসভার পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের সুপার ভাইজার নন্দ কিশোর হরিজণ তার মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলিতদের পক্ষ থেকে কেউ নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে নাই। এরা মনে করে কে ভোট দিবে আমাদের নেতা বানানোর জন্য । এছাড়া দলিতরা যে পরিমান উপার্যন করে তা দিয়ে তারা নিত্য দিন চলতেই কষ্ট হয়। তার মধ্যে নির্বাচন করলে টাকা পয়সা পাবে কোথায় । এছাড়া তাদের মধ্যে ভয় ভীতিও রয়েছে প্রচুর। নির্বাচনে দাড়ালে কোন সমস্যায় পড়ে কিনা এ ধরনের আতংক কাজ করে তাদের মধ্যে । দলিতরা ভোটে দাড়ালে ভোট পাবে। কিন্তুু তারা নির্বাচিত হবেনা। টাকা পয়সা খরচ করে ভোটে জয়লাভ করতে না পারলে নির্বাচনে দাড়িয়ে লাভ কি? । নিরপেক্ষ ভোট হলে দলিতরা বিজয়ী হওয়া সম্ভব । বর্তমানে দেশের যে অবস্থা তাতে ভোটে কেউ দাড়াতে সাহস পাচ্ছে না। ভোটে দাড়ানোর মত পরিবেশ নেই বলে তাদের ধারনা। তাদের জনবল আছে। নির্বাচনে দাড়ালে নির্বাচিত হওয়াও সম্ভব। দলিত হওয়ায় এমনিতেই ভালো আছি। নির্বাচনে দাড়িয়ে অন্য সম্প্রদায়ের সকলের চোখের কাটা হতে চায়না দলিতরা। নির্বাচনে দাড়ালে দেশ ছাড়তে হয় কিনা এধরনের সংঙ্গা কাজ করে তাদের মধ্যে । এজন্য দলিতরা নিরিবিলিভাবে বসবাসে বিশ্বাসী। তারা নির্বাচনে দাড়িয়ে জামেলায় যেতে চায়না। শান্তিতে বসবাস করতে চায়। এ ব্যাপারে নতুন বাজার সিএসডি গোডাউন সংলগ্ন মুচি বাড়ীর রবি দাস সম্প্রদায়ের নেতা , রবি দাস ঐক্য পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি নারায়ন রবি দাস তার মত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন,স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার মত দলিত জনগোষ্ঠির সবারই ইচ্ছা আছে। নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার পর নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ভয়ে অনেকে ইচ্ছা থাকলেও প্রকাশ করছেনা। বর্তমান সরকার দলীয়ভাবে যদি দলিতদের নির্বাচনে দাড়ানোর সুযোগ করে দেয়, তাহলে তারা নির্বাচন করার সাহস রয়েছে। স্বতন্ত্রভাবে কেউ স্থানীয় নির্বাচনে দাড়াতে চায়না। দলীয় সহযোগিতা পায়না বলেই তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনা। কেননা নির্বাচনে দাড়ালে যদি দলীয়ভাবে বসে যেতে বলে এজন্য তারা ইচ্ছা পোষণ করেনা। দলিতদের শুধু এদেশে অন্যদেরকে ভোট প্রয়োগ করার অধিকার দেওয়া হয়েছে। তাই তারা ভোট দিতে পারে। নির্বাচন করতে হলে বর্তমান পেক্ষাপটে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। অর্থ ছাড়া নির্বাচনে দাড়িয়ে লাভ নেই। সকলের সহযোগিতা থাকলে দলিতরা এদেশে জনপ্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন। তাদের নিজস্ব জাতীগত সহযোগিতা ও একতা রয়েছে বলে জানান। বর্তমানে চাঁদপুরে যে পরিমান দলিত আছে তা দিয়ে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন করা সম্ভব । এতে করে তারা মেয়র থেকে শুরু করে সকল পর্য্যায়ের প্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা রাখে বলে জানান। দলীয়ভাবে তাদেরকে নির্বাচনে দাড় করালে তাদের জন্য ভালো হয়। জাতীয় সংসদের দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসন থাকলে দলিতদের আরও অগ্রগতি হতো। প্রধান মন্ত্রীর কাছে তাদের আকূল আবেদন। জাতীয় সংসদে দলিতদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা হউক। এ ব্যাপারে হাজীগঞ্জ উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা সত্য ব্রত চন্দ্র মিঠুন,দীলিপ কুমার ও নিহার রঞ্জন মিলন এ তিন নেতার সাথে দলিত সম্প্রদায়ের স্থানীয় নির্বাচনে অংশ গ্রহন সম্পর্কে আলাপকালে তারা জানান,এদেশে বর্তমানে নির্বাচন হচ্ছে দলীয় ব্যানারে । এখানে ভালো এবং ভদ্র এধরনের ব্যাক্তি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করে কোন ফলাফল পাওয়ার অবস্থান নেই। দলীয় টিকেটে নির্বাচন করলে তাদের পক্ষে প্রচার প্রচারণা করার মত নেতা কর্মী পাওয়া সম্ভব। স্বতন্ত্রভাবে কেউ নির্বাচন করে ফলাফল আসা করা যায়না। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা জনবল ও অর্থ থাকার পরও নির্বাচনে অংশগ্রহন করে জনগনের সঠিক বিবেচনায় আসতে পারে না। সেক্ষেত্রে দলিত সম্প্রদায়ের লোকদের একদিকে জনবল সংকট অপরদিকে অর্থের অভাব রয়েছে। এছাড়া তাদের প্রতি এদেশের মানুষের ভিন্ন চিন্তা চেতনা রয়েছে। হরিজন,ডোম,সুইপার,রবি দাস সহ নিন্মবর্ণের লোকদের এদেশে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মত সুযোগ দেখা যাচ্ছে না। আগামী ৫০ বছরেও সুযোগ হয় কিনা তা নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে।