প্রতিনিধি
চাঁদপুর শহরের স্টেডিয়াম রোড এলাকায় মাদ্রাসা রোডে বসবাসকারী এক মাল্টিপারপাস কর্মকর্তা স্ত্রী’র সাথে বাক্বিতণ্ডার একপর্যায়ের তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। স্ত্রী’র মৃত্যু হয়েছে ভেবে নিজের গলা নিজে দা দিয়ে কেঁটে ফেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। ঘটনার খবর জানতে পেরে, চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ-এর নেতৃত্বে সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স বাসার দরজা ভেঙ্গে উভয়কে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসাতালে এনে ভর্তি করে।
ঘটনাটি ঘটেছে, গতকাল ১৯ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ৯টায়। ঘটনাসূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর শহরতলীর মঠখোলা ওয়াপদা গেইট এলাকার জমাদার বাড়ির আব্দুর রব জমাদারের ছেলে আলাউদ্দিন আজাদ (৪৫) এক সময় চাঁদপুর শহরের স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করতো। সে দীর্ঘ ১৫/২০ বছর পূর্বে চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার উকিল পাড়ার এলাকার আলি আহাম্মদ খার বড় মেয়ে আলিমুন নেছা (৩৫)-কে বিবাহ করে। তাদের সংসারে এক কন্যা সন্তান রয়েছে। বর্তমানে ওই কন্যা সন্তানটি ঢাকায় স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছে। আলাউদ্দিন আজাদ সাংবাদিকতার পেশা ছেড়ে দিয়ে কয়েক বন্ধু মিলে মঠখোলায় বন্ধুজন মাল্টিপারপাস নামে একটি সংস্থা খুলে সুদের ব্যবসা শুরু করে।
মাল্টিপারপাসে লাগানো সকল অর্থ হচ্ছে তার স্ত্রী আলিমুন নেছার। স্ত্রী’র দেয়া মাল্টিপারপাসে লাগানো অর্থ ফেরৎ চাইলে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে বাক্বিতণ্ডা চলতে থাকে। এমনকি ঘটনার দিনও উভয়ে বাক্বিতণ্ডায় লিপ্ত হয়।
গত কয়েক মাস যাবৎ তাদের এই মাল্টিপারপাসে লোকশানের পাল্লা চলছিল। আলাউদ্দিন আজাদ যাদেরকে বন্ধুজন মাল্টিপারপাস থেকে লোন দিয়েছিল ওই সব ব্যক্তির কাছ থেকে সঠিকভাবে টাকা উত্তোলণ করতে পারছিলো না। এর ফলে যে ক’জন পার্টনার রয়েছে, তাদের সাথে আলাউদ্দিন আজাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর পর থেকে আলাউদ্দিন আজাদ মানষিকভাবেই ভেঙ্গে পড়েন। ঘটনার দিন সকালে স্ত্রী আলীমুন নেছার সাথে আলাউদ্দিন আজাদের পারিবারিকভাবে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর পর আলাউদ্দিন আজাদ ক্ষীপ্ত হয়ে রান্নাঘর থেকে হলুদ মরিচ বাটার পূতা এনে আলীমুন নেছার মাথায় আঘাত করলে তার মাথার বাটি সম্পূর্নভাবে আলাদা হয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় আলীমুন নেছা ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে স্বামী আলাউদ্দিন আজাদ আলীমুন নেছার মৃত্যু হয়েছে ভেবে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে পূনরায় রান্না ঘর থেকে বটি দা এনে নিজের গলা কেঁটে ফেলে। মাদ্রাসা রোড এলাকার ‘‘স্বাগতম’’ নামক বাসার তৃতীয় তলায় এই ঘটনা ঘটলে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন টের পেয়ে আলীমুন নেছার বাপের বাড়ি উকিল পাড়ায় মোবাইলে খবর দেয়া হয়। তখন আলীমুন নেছার ছোট ভাই মহনসহ অন্যান্যরা দ্রুত স্বাগতম বাসায় ছুটে গিয়ে দরজা ভেঙ্গে রক্তাক্তবস্থায় আলীমুন নেছা ও তার স্বামী আলাউদ্দিন আজাদকে উদ্ধার করে চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সার্জিকেল চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন ও মনিরুজ্জামান জানান, আহত দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে আহত স্ত্রী’র অবস্থা খারাপের দিকে ধাবিত হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। অপর আহত আলাউদ্দিন আজাদের অবস্থাও একই। তার গলার সব রগ কাঁটা গেলেও কন্ঠ নালিতে আঘাত না পাওয়ায় এখনো তার অবস্থা আশঙ্কাজন ধরা হচ্ছে। আলীমুন নেছার ছোট ভাই মোহন জানায়, তার ভগ্নিপতি আলাউদ্দিন আজাদ মাল্টিপারপাসের ব্যবসায় লোকশান হওয়ায় বেশ কিছুদিন যাবৎ মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। যার জন্য স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হওয়ায়।