মিজানুর রহমান রানা
চাঁদপুরে হাসপাতাল ভাংচুর ও চিকিৎসক লাঞ্ছনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সমাবেশ ও প্রতিরোধ সভায় বক্তারা বলেছেন, অন্যসব সেবামূলক পেশার মতো চিকিৎসকরাও জাতির সুযোগ্য সন্তান হিসেবে জাতিকে বিপদে-আপদে, সময়-অসময়ে নিজেদের সব সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাকে বিসর্জন দিয়েও রোগীদের সেবাদান অব্যাহত রাখে। নিজেরা অসুস্থ থাকলেও তারা তাদের রোগীদের অসুস্থ থাকতে দেয় না, বরং সমস্ত প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে তারা রোগীদের বাঁচানোর জন্যে, সুস্থ করে তোলার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। সভায় তারা আরো বলেন, যারা ধর্ম বিশ্বাস করেন তারা জানেন যে, চিকিৎসক রোগীদের সুস্থ করার চেষ্টা করেন, রোগ নিরাময় ও যন্ত্রণা লাঘবের চেষ্টা করতে পারেন কিন্তু তারা রোগীর জীবন দান বা জীবন নিতে পারেন না। তাই যারা বলেন, ডাক্তার রোগীর জীবন দান করেন বা ডাক্তার রোগীর জীবন নিয়েছেন তারা নাস্তিক তথা ধর্ম বিশ্বাস করেন না। এদের বিচার করা উচিত। প্রকৃত অর্থে কোনো ডাক্তারই রোগীর জীবন দান বা বিনাশ করতে পারেন না। ডাক্তারের কাজ হচ্ছে রোগীর সেবা করা, যন্ত্রণা লাঘবে এগিয়ে আসা। আর সেই চেষ্টাই করা হয়েছিল চাঁদপুর রয়েল হাসপাতালে। সেখানে রোগীর যে আত্মীয়স্বজনরা রোগীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডাক্তারকে চিহ্নিত করে হাসপাতাল ভাংচুর এবং ডাক্তারের ওপর অমানবিকভাবে আক্রমণ করে ডাক্তারকে রক্তাক্ত করেছেন তারা প্রকৃত অর্থে ভালো কাজ করেননি। সেখানের কর্তব্যরত ডাক্তার রোগী ভর্তির সাথে সাথেই রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকা প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু রোগীর আত্মীয়স্বজনরা সেই সময় রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার অনুরোধ জানান। রোগীর আত্মীয়স্বজনদের ডাক্তার যে ঔষধ আনার কথা বলেছেন, সেই ঔষধ প্রয়োগ করার আগেই পূর্বে বাইপাস অপারেশনের ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে। ফলে সেখানে রোগীর আত্মীয়-স্বজনরা ডাক্তারের ওপর যে অমানবিক আচরণ করেছেন, তার প্রতিবাদে এই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ সভা। আমরা ডাক্তার, হাসপাতালের মালিক, জেলা ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক অ্যাসোসিয়েশনের মালিকরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছি, তা যে কোনো মূল্যেই অব্যাহত থাকবে। আজ (গতকাল রোববার) সন্ধ্যা নয়টা পর্যন্ত হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিচারের জন্যে যে আলটিমেটাম প্রদান করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত না হলে আমরা ঐক্যবদ্ধ বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলবো।
গতকাল রোববার সকালে জেলা বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুন নবী মাছুমের সঞ্চালনায় চাঁদপুর সিভিল সার্জন হলরুমে আয়োজিত প্রতিরোধ সমাবেশ ও প্রতিরোধ সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা বিএমএ’র সভাপতি ডা. হারুনুর রশিদ সাগর। বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা ডা. বদরুন নাহার চৌধুরী, চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. প্রদীপ কুমার দত্ত, জেলা বিএমএ’র সেন্ট্রাল কাউন্সিল মেম্বার ডা. ফরিদ আহমেদ, ডা. সালেহ আহমেদ, ডা. মনিরুল ইসলাম, জেলা বিএমএ’র সাহিত্য সম্পাদক ডা. পীযূষ কান্তি বড়–য়া, স্বাচিপ চাঁদপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. নূরুল হুদা, স্বাচিপ নেতা ডা. মো. ইলিয়াছ, চাঁদপুর ডায়াগনস্টিক ওনার্স মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, চাঁদপুর ক্লিনিক মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল ফারুক, ফরিদগঞ্জ মেডিকেল সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান, হাজীগঞ্জ উপজেলা ক্লিনিক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, মতলব ক্লিনিক মালিক সমিতির প্রতিনিধি মো. মোজাম্মেল প্রমুখ। এছাড়াও চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ডা. সফিকুল ইসলাম মণ্টু, ডা. মনোজকান্তি মজুমদার, ডা. সিরাজুম মুনীর, ডা. আসিফ ইকবাল, গাইনী কনসালটেন্ট ডা. ফাতেমা বেগম, ডা. উম্মে কুলসুম, ডা. মাহমুদা সুলতানা, ডা. সুজিত কুমার সহ চাঁদপুর বিএমএ, স্বাচিপ-এর সদস্য ডাক্তারবৃন্দ, বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্যবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চাঁদপুর জেলা বিএমএ ও বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন চাঁদপুর জেলা শাখার সদস্যবৃন্দ চাঁদপুর আড়াইশ’ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সামনে ডাক্তারের ওপর হামলা ও হাসপাতাল ভাংচুরের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেন।
শিরোনাম:
শনিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।