চাঁদপুরে শুরু হয়েছে ২ দিনব্িযাপী বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার গণসঙ্গীত উৎসব। গতকাল ২১ মার্চ বিকেল ৫টায় চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে গণসঙ্গীত উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও চাঁদপুর সদর আসনের সংসদ সদস্য ডাঃ দীপু মনি। ��ছিড়ে ফেলো দৃঢ় হাতে চক্রান্তের জাল��-এ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর সহযোগিতায় গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ বাংলাদেশ এ উৎসবের আয়োজন করে।
কেন্দ্রীয় গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের (একুশের পদক প্রাপ্ত) সভাপ্রধানে বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, আঞ্চলিক সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান পাখি, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী, গণসঙ্গীত সমন্বয় কেন্দ্রীয় পরিষদের সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য মানজার চৌধুরী সুইট। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা গণসঙ্গীত উৎসব উদযাপনব পরিষদ চাঁদপুরের আহ্বায়ক রূপালী চম্পক, যুগ্ম আহ্বায়ক রফিক আহমেদ মিন্টু ও মোঃ মনির হোসেন (ব্রাহ্মণবাড়িয়া)। সদস্য সচিব শরীফ চৌধুরী অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর আগে চাঁদপুরের গণসঙ্গীত শিল্পী মনোজ আচার্যী একক তিনটি গান পরিবেশন করেন। আলোচনা পর্বে প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিদের বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের পক্ষ থেকে সভাপতি ফকির আলমগীর ফুলেল শুভেচ্ছাসহ ক্রেস্ট তুলে দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্য ডাঃ দীপু মনি এমপি বলেন, সকল আন্দোলন-সংগ্রামে গণসঙ্গীত মানুষের চেতনাকে শানিত করার জন্য সাহস ও শক্তি যুগিয়েছে। এখনো �৭১ ও �৭৫-এর খুনিরা দেশকে পিছিয়ে দিতে তৎপর রয়েছে, চক্রান্ত করছে। স্বাধিকার, �৫২-এর ভাষা আন্দোলন, �৭১ মুক্তিযুদ্ধ �৭৫ পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে গণসঙ্গীত উৎসর্গ করেছিলো। তাই এ উৎসব সব সময় দরকার। সমাজে অনেক অন্যায় অবিচার প্রতিবাদের জন্যই গণসঙ্গীত। গণসঙ্গীত অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে আবারো এক জায়গায় নিয়ে আসবে। সঙ্গীতের ভাষা গণ মানুষকে উজ্জীবিত করবে।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিলো অনেকগুলো চেতনা ও স্বপ্ন নিয়ে। সে চেতনা ও স্বপ্নকে লালন করে যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তখন সে অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করার জন্য �৭১ ও �৭৫-এর খুনিরা আবারো মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এ পর্যন্ত ১৯ বার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে মারার চেষ্টা করা হয়। ২০০৪ সালে গ্রেনেড মেরে শুধু শেখ হাসিনাকেই নয়, পুরো নেতৃত্বকে শূন্য করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। দেশ এগিয়ে যাক, তাদের পছন্দ না। সে অপশক্তি বারবার আঘাত হানছে। সে আঘাতে আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, নারীর জাগরণের উপরও হানা হচ্ছে।
ডাঃ দীপু মনি বলেন, সংবিধান থেকে আমাদেরকে বের করে আনার জন্য সেনা শাসকের পকেট থেকে জন্ম দেয় বিএনপি রাজনৈতিক দল। জেনারেল জিয়াউর রহমানের পুরো শাসন কার্ফু দিয়ে করা হয়েছিলো। তাই গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে গণসঙ্গীত আমাদের সাথী ও সঙ্গী ছিলো। অন্ধকারের সকল অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াতে ঘৃণ্য অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে দীপু মনি এমপি গণসঙ্গীতের মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা এগিয়ে যাবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
উদ্বোধনী দিনে গণসঙ্গীত পরিবেশন করে সুর সম্রাট দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পথিকৃৎ কালচারাল একাডেমী কুমিল্লা, সঙ্গীত নিকেতন চাঁদপুর, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক সংগঠন কুমিল্লা, সপ্তসুর সঙ্গীত একাডেমী চাঁদপুর। এ ছাড়া ফকির আলমগীর একক গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জীবন কানাই চক্রবর্তী, প্রেসক্লাব সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জীবনসহ ঢাকা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গণসঙ্গীত শিল্পীবৃন্দ, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুধীজন এবং সংস্কৃতিমনা বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং গণসঙ্গীত উৎসব অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
ফকির আলমগীর তাঁর বক্তব্যে চাঁদপুরের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, গণসঙ্গীত প্রতিবাদের ভাষায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হবার প্রতিবাদ। দেশের ১৯টি বৃহত্তর জেলায় এ গণসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় সমন্বয় পরিষদ।