শওকত আলী ঃ
চাঁদপুরে ভূল প্রশ্ন পত্রের পরীক্ষা দেওয়ায় ৩০৬ জন পরীক্ষার্থীর জীবন অন্ধকারে ধাবীত হওয়ার দিকে যাচ্ছে বলে শিক্ষকদের অভিমত।
চাঁদপুরে দাখিল বাংলা পরীক্ষায় একজন কেন্দ্র সচিবের গাফিলতিতে ৩শ’ ৬ জন পরীক্ষার্থী ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশ করার ঘটনা ঘটেছে। এ কারনে ঐ সব পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকদের মধ্যে মারাত্মক উৎকন্ঠা, উদ্বিগ্ন ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা চাঁদপুর প্রেস ক্লাবে লিখিতভাবে এবিষয়ে অবগত করেন সাংবাদিকদের। গত বৃহস্পতিবার চাঁদপুর নতুন বাজারস্থ আহম্মদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসায় নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় চাঁদপুর সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে ঐ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা জানায়, বাংলা বিষয়ের নৈবিত্তিক (এমসিকিউ) পরীক্ষায় তাদের অনিয়মিত (২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষ) প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। তারা পরীক্ষা শেষে বিষয়টি বুঝতে পেরে শিক্ষকদের ঘটনাটি জানালেও সংশ্লিষ্টরা তা সমাধানের চেষ্টা করেনি। ফলে শিক্ষার্থীরা এমসিকিউ’র ওএমআর সিটে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে বৃত্ত ভরাট করছে। কিন্তু ওই সিট মূল্যায়নের সময় নিয়মিত ছাত্র হিসেবে মূল্যায়ন করা হলে প্রায় প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর’ই ফলাফল বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।
ঐ কেন্দ্রে সদর উপজেলার পশ্চিম সকদি আলিম মাদ্রাসা, তরপুরচন্ডী আলী দাখিল মাদ্রাসা, মাদ্রাসাতুল ইসয়াতুল উলুম, মান্দ্রারী মাদ্রাসা ও বিষ্ণুদী আলিম মাদ্রাসার মোট ৩শ’ ৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে মাত্র ৩ জন অনিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে। তবে এ ধরনের ভুলের পরও কেন্দ্র সচিব মাও. মোস্তাফিজুর রহমান কোন ভূমিকা না নেয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্র্থীদের ফলাফলে সমস্যা হবে কি-না জানতে চাইলে ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলার বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, রচনামূলক পরীক্ষায় ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিলে খাতা মূল্যায়নে পরীক্ষকরা লেখার ধরন অনুযায়ী ও প্রশ্নের আলোকে নম্বর বন্টন করতে পারতেন। কিন্তু এমসিকিউ পরীক্ষায় ওএমআর সিট কম্পিউটারে দেখা হয় বারকোডের ভিত্তিতে । ফলে সব পরীক্ষার্থীই নিয়মিত হিসেবে বৃত্ত ভরাট করায় এখন অকৃতকার্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্র সচিব মাও. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, অভিযোগটি তিনি শুক্রবার জানতে পেরেছেন। এ নিয়ে বেশ কয়েকজন অধ্যক্ষের সাথে আলাপ করেছেন। তবে বিষয়টি এখনো জেলা প্রশাসনকে জানাননি। কি কারণে জানানো হয়নি জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ফলাফল কি হবে তা শিক্ষক হিসেবে তিনি’ই বেশি জানেন।
অপরদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কয়েকজন শিক্ষক জানান, কেন্দ্র সচিব তার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পুরাণবাজার ওচমানিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা নেয়ায় কেবল ঈর্ষান্বিত হয়ে কাজটি করেছেন। কারণ বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যে সব প্রতিষ্ঠানে শতভাগ অকৃতকার্য হয়, সে সব প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন বন্ধ রাখা হয়। পরে ঐ সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তবে তাদের দাবি একজন ব্যক্তির কারণে কয়েকজন শিক্ষকের বেতন বন্ধ হলে সমস্যা নেই, কিন্তু ৩ শ’ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার এখতিয়ার কারো নেই।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় যোগাযোগ করা হলে এক নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট জানান, যে কোন কেন্দ্রে অনিয়ম বা অসঙ্গতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিক প্রশাসনকে জানানোর নিয়ম। তবে কি কারণে জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়নি তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ আসলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের ফলাফলে কোন ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এমসিকিউ পরীক্ষায় নিয়মিত-অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে উত্তরপত্র ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় দেখা হয়। সেক্ষেত্রে একটা আশঙ্কা থেকে যায়।