মিজানুর রহমান রানা
বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টিতে চাঁদপুর শহরের বেশ কিছু এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ক’দিন কখনো থেমে থেমে আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস এ ক’দিন চাঁদপুরে ৩২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। টানা এ বর্ষণে শহরের বিভিন্ন মসজিদ ও শাখা সড়কগুলো জলমগ্ন অবস্থায় রয়েছে। হাঁটু পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। এতে করে জনসাধারণ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।
গতকাল চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন জায়গায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মসজিদ প্রায় এক ফুট পানির নিচে। মসজিদের মুসল্লিরা জানান, ফজর থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত কোনো ওয়াক্তের নামাজ মসজিদে এসে পড়তে পারিনি। তারা জানান, কলেজ রোডে প্রবেশপথের পাশেই সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাবিবুর রহমানের বড় ছেলে ছয়তালা ভবন নির্মাণ করছে। ঐ ভবনের নির্মাণ সামগ্রী রাস্তায় ফেলে রাখার দরুণ বৃষ্টির পানির সাথে সে সবের বর্জ্য পৌরসভার আন্ডারগ্রাউন্ড ড্রেনে গিয়ে পড়ে ড্রেন ভরাট হয়ে যায়। যার কারণে মসজিদসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ ব্যাপারে কথা হয় মসজিদের খতীব হাফেজ মাওঃ নিজামুল হকের সাথে। তিনি জানান, পৌরসভার ড্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মসজিদে বৃষ্টির পানি জমে নামাজের ব্যাঘাত ঘটছে। মসজিদ কমিটি পানি নিষ্কাশনের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষ ও হাবিব চেয়ারম্যানকে অবগত করেছে। এদিকে মুসল্লিরা মসজিদ কমিটির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। দীর্ঘদিন মসজিদের উন্নয়ন কাজ হয় না কেনো জানতে চাইলে ইমাম সাহেব বলেন, আসলে এটা তো সরকারি কলেজের আওতাধীন। মসজিদের কোনো উন্নয়ন করতে হলে কর্তৃপক্ষই করবে। আর বহিরাগত কোনো মুসল্লি অনুদান দিতে চাইলে কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করলেই ভালো হয়। এছাড়া তিনি আরও জানান, রমজানের পরেই সিটু ফাইলিং করে বহুতল বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
নাজিরপাড়ার একাধিক বাসিন্দা জানান, এ এলাকায় যোগ্য জনপ্রতিনিধি না থাকায় এলাকাবাসী জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুক্তভোগী হয়ে আছে। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর নির্মাণ করার কারণে এ জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে দেখা দিয়েছে। চাঁদপুর পৌরসভা এ এলাকায় ড্রেন ও রাস্তা কার্পেটিং করেছে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের জন্য যেভাবে করা দরকার সেভাবে রাস্তা ও ড্রেন করা হয়নি।
কোড়ালিয়া ও প্রফেসর পাড়া এলাকার হাজী ইসহাক ও মোঃ সফিকুর রহমান জানান, গত কয়েকদিন হলো পৌরসভর পক্ষ থেকে ড্রেনে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু বাড়ির মালিকগণ ট্রাক্টরে করে রাতের আঁধারে ইট, বালি, কংক্রিট রাস্তায় ফেলে রাখার দরুণ ঐ সব নির্মাণ সামগ্রীর বর্জ্য বৃষ্টির পানির সাথে ড্রেনে পড়ে একাকার হয়ে যায়। এতে করে ড্রেনগুলো আবার ভরে যাচ্ছে।
বিষ্ণুদী ও জিটি রোডের বাসিন্দা কামরুল পাটোয়ারী ও কবির তালুকদার এ প্রতিনিধিকে জানান, গত কয়েক মাস হলো বিষ্ণুদী রোডের কার্পেটিং কাজ হয়েছে। অথচ এ রাস্তায় বৃষ্টি হলেই বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে যায়। জিটি রোডে কয়েক মাস হলো নতুন করে ড্রেন করা হয়েছে। যেই ড্রেনে রাস্তার জমাট পানি নিষ্কাশন হওয়ার কথা তা না হয়ে হয়েছে উল্টো। বর্তমানে ঐ ড্রেনে পানি নিষ্কাশন না হয়ে পানি সড়কেই আটকে থাকে। ঐ রাস্তা থেকে ড্রেন অনেক উঁচু করায় সবসময় রাস্তায় পানি জমে থাকে। যার ফলে মানুষজনের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এছাড়া চাঁদপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠ, চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, লেডী দেহলভী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, বিষ্ণুদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও পীর মোহসিন উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাঁটু পানি দিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে আসতে হয়। ভুক্তভোগীরা জানান, পৌরসভার ড্রেনের উপরে ও আশপাশে নির্মাণ সামগ্রী রাখায় পানি নিষ্কাশনের মুখে জমাট বেঁধে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে ঐ সব এলাকার পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় চরম জনদুর্ভোগ দেখা দেয়।