* শওকতআলী *
চাঁদপুর জেলার ৮৯টি ইউনিয়নের সর্বত্র এখন নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই শীত উপেক্ষা করে প্রতিদিন বিভিন্ন প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের সাথে কুশলাদি বিনিময় করছেন, চেয়ামর্যান-মেম্বার পদে প্রার্থী হিসেবে ভোটারদের দোয়া চাচ্ছেন। প্রার্থীদের অধিকাংশ এক বছর আগে থেকেই বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে জনগণকে শুভেচ্ছা জানানো শুরু করেছেন। ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড স্থাপন করেও অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। তাছাড়া মিলাদ, জানাজা, ওয়াজ মাহফিল, বিয়ের অনুষ্ঠান, বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠনের ক্রীড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি অতিথি হওয়া কিংবা সরব উপস্থিতি সবই তাদের প্রার্থিতা প্রকাশে প্রচারণার অংশ হিসেবে নিয়েছেন। তবে এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ে আ’লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনেক এগিয়ে। ইউপি চেয়ানম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে এমন ঘোষণার পর আ’লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা উপজেলায়, জেলা এমনকি কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথেও জোর লবিং করছেন। চাঁদপুর জেলা মূলত বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত। গত ২০১১ সালের সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে মতলব উত্তর, দক্ষিণ এবং কচুয়ায় আ’লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী বেশি জয়ী হয়েছেন। বাকি ৫টি উপজেলায় ২/১ জন ছাড়া সবই বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান জয়ী হয়েছেন। সেসময় স্থানীয় এমপি, উপজেলা ও জেলা আ’লীগ নেতৃত্ব ইউপিতে একক প্রার্থী দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। দেখা গেছে কোন কোন জনপ্রিয় প্রার্থী শুধুমাত্র স্থানীয় এমপির পছন্দের না হওয়ায় তাকে হারিয়ে দিতে দলের একাধিক প্রার্থী তার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে কিংবা পুলিশি হয়রানি করে তাকে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়েছে। চাঁদপুর সদরের বাগাদীতে বেলায়েত হোসেন বিল্লাল, শাহমাহমুদপুরে কামাল হোসেন লালু, চান্দ্রায় খান জাহান আলী কালু পাটওয়ারীর বিরুদ্ধে একাধিক প্রার্থী দাঁড় করিয়ে পরিকল্পিতভাবে হারানো হয়। এবার অবশ্য প্রেক্ষাপট ভিন্ন। দলীয় প্রতীক পাওয়ার জন্য আ’লীগ বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন এখন থেকেই। প্রতিটি ইউনিয়নে আ’লীগের প্রার্থী ৮/১০ জন করে দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপির চেয়ারম্যান প্রার্থী ২/৪ টি ইউনিয়ন ছাড়া বাকি সব ইউনিয়নে একাধিক প্রার্থী নেই বললেই চলে। তাছাড়া বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মী বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার আসামী হওয়ায় এবং আগামী ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা এ আশঙ্কায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চাচ্ছেন না। তারপরও বিএনপি ইউপি নির্বাচনে আ’লীগকে ফাঁকা মাঠে চেয়ারম্যান হতে ছাড় দিতে রাজি নয় এমনটি জানালেন জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিমুল্লা সেলিম। চাঁদপুর সদরের আশিকাটি, শাহমাহমুদপুর, হাজীগঞ্জের বাকিলা সদর, কচুয়ার সদর, আশ্রাফপুর, পূর্ব সহদেবপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা রয়েছে। এদের কাউকে অপসারণ করা হলেও উচ্চ আদালত থেকে তাদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বের বৈধতা পেয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। তারাও এবার প্রার্থী হচ্ছেন। চাঁদপুর সদরের কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যাচ্ছে মৈশাদীতে মোখলেছুর রহমান মিজি (আ’লীগ), আবু জাফর মোঃ অলি পাটওয়ারী (বিএনপি), নুরুল ইসলাম পাটওয়ারী (আ’লীগ), মনিরুজ্জামান মানিক (বিএনপি) ও বোরহান বেপারী (আ’লীগ)। শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নে স্বপন মাহমুদ (বিএনপি), কামাল হোসেন লালু, ইঞ্জিনিয়ার আক্তার, মাহফুজ খন্দকার, আঃ হান্নান সবুজ ও আঃ হান্নান মিলন (আ’লীগ)। কল্যাণপুর ইউনিয়নে দেলোয়ার হোসেন খান, সাইফুল ইসলাম, নান্নু গাজী (বিএনপি), আলহাজ্ব মান্নান মাল (জাপা), সাখাওয়াত হোসেন রনি, মহসিন পালোয়ান, সফিকুল ইসলাম সফু (আ’লীগ), রামপুর ইউনিয়নে জাকির হোসেন তালুকদার (বিএনপি), মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারী, ইঞ্জিনিয়ার পলাশ, আবু তাহের ভূইয়া, মামুন পাটওয়ারী (আ’লীগ)। বিষ্ণুপুরে শামীম খান, বাবুল হাজরা, চুন্নু মাস্টার (আ’লীগ), হাবিবুর রহমান মন্টু (বিএনপি)। ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নে খান জাহান আলী কালু পাটওয়ারী, ব্যবসায়ী হাজী জসিম উদ্দিন মিয়াজী, হারুন মেম্বার, রহমান বেপারী, ইউসুফ শেখ (আ’লীগ), ইউসুফ কেরানি (বিএনপি) ও শাহজাহান খান (জামায়াত)। বাগাদী ইউপিতে বেলায়েত হোসেন বিল্লাল, মোরশেদ আলম, গিয়াস উদ্দিন নান্নু, ফারুক আহমেদ কাকন (আ’লীগ), মোহাম্মদ আলী পাঠান (বিএনপির) নাম জোরালোভাবে শুনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এসকল প্রার্থী রাজনৈতিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি নানাভাবে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রকাশ করেছেন। চাঁদপুরে এবার নির্বাচনে ইউপিগুলোতে কেন্দ্রীয় আ’লীগের ৪ হেভিওয়েট নেতা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, ডাঃ দীপু মনি ও সুজিত রায় নন্দীর একটা প্রভাব কাজ করবে বলে জানান আ’লীগের নেতাকর্মীরা। ১৭ হাজার ৪শ’ ৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় ৮৯টি ইউনিয়নে মোট ভোটার প্রায় ১১ লাখ।