๏কর্মকর্তার নেতৃত্বে দালাল, টাউট, বাটপাররা সক্রিয়
๏প্রতিমাসে অবৈধ আয় ২৫ লাখ টাকা !!
মেসিন রিডেবল পাসপোর্ট (এম আর পি) নিতে এসে চাঁদপুরবাসীর হয়রাণীর যেন অন্ত নেই। নতুন পাসপোর্ট করতে আসা একজন ব্যক্তিকে প্রতি পদে পদে হয়রাণীর শিকার হতে হয়। চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নেতৃত্বে দালাল, টাউট, বাটপারদের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে। বিশেষ করে বর্তমান এ ডি জাহিদুল হক যোগদানের পর থেকে পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। প্রকাশ্যে এল আর ফান্ডের নামে প্রতিটি পাসপোর্ট থেকে অতিরিক্ত আদায় করছে ১ হাজার ৩ শ’টাকা। যারা কোন প্রতিবাদ না করেই দালালের চাহিদানুযায়ী ঘুষ দিচ্ছে তাদের ওই দিনই ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়। আর যারা সহজেই টাকা দিতে চায় না তাদের নানান অজুহাত তৈরি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়। সব কাগজ ঠিক করে আনার পর ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট এর জন্য ১০ থেকে ১৫ দিন পর সময় দিয়ে বিদায় করা হয়। আবার এরাই যখন দালালের মাধ্যমে যোগাযোগ করে তখন কোন প্রশ্ন করা ছাড়াই সব কাজ পানির মতো হয়ে যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাসপোর্ট অফিসের অবস্থান হলেও এটি জেলা প্রশাসনের কোন শাখা নয়। তবুও এল আর ফান্ডের নামে টাকা তোলায় সাধারণ মানুষের কাছে জেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা দায়িত্ব নিয়েই মেঘনাবার্তাকে জানিয়েছেন, জেলায় এল আর ফান্ড পরিচালনার ক্ষমতা কেবল মাত্র জেলা প্রশাসকের। পাসপোর্ট অফিসের এমন সব অবৈধ কাজের সাথে জেলা প্রশাসনের কোন প্রকার সম্পৃক্ততা বা কোন অনুমোদন নেই।
অনুসন্ধান শেষে তথ্য মিলেছে, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে পাসপোর্ট প্রত্যাশি সাধারণ মানুষ খুব ভোরে রওনা দিয়ে চাঁদপুর পৌঁছেন সকাল ৯টার মধ্যে। এর পর সাধারণ পাসপোর্টের জন্য সরকারি ফি ৩ হাজার আর জরুরি পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার টাকা জমা দিতে প্রথমে ফরম সংগ্রহের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। এর পর ফরম পূরণ করে টাকা জমা দেয়ার জন্য ফের লাইনে দাঁড়াতে হয়। এই দু’পর্বের কাজ সেরে পাসপোর্টের আবেদন ফরম জমা দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। কখনো কখনো এমন হয় টাকা জমা দেয়ার পর আর ফরম জমা দেয়ার সময় থাকে না। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, দুপুর ১টার মধ্যে বৈধ পথে ফরম জমা নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। আর যারা দালালের মাধ্যমে জমা দেন তারা বিকেল ৫টায় এসেও ছবি তোলা সহ ফিঙ্গার প্রিন্ট এর কাজ সেরে যেতে পারেন। ফরম জমা দেয়ার পরই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য, অফিসের কর্মচারী এবং দালালরা প্রত্যেকের সাথে ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করেন। তাদের বক্তব্য এমন – ‘আজকে ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট করাবেন ? যদি জবাব আসে হ্যাঁ তবে আমাদের সাথে কথা বলুন কারণ স্যার আজ আপনাকে সুযোগ দিবেন না। ১৫ দিনের আগে সময় পাবেন না। যদি প্রশ্ন করা হয় কত লাগবে জবাব মিলবে পুলিশ ভেরিফিকেশনসহ আড়াই হাজার টাকা। দরদাম করেও পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া ১ হাজার ৩ শ’ টাকার কম কোন পাসপোর্টের ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট করা যায় না।
জানা গেছে, যারা টাকা দিতে রাজি হয় না তাদের নানানভাবে হয়রাণী করা হয়। দালাল চক্রের সহযোগিতায় বিভিন্ন কাগজ ছিঁড়ে ফেলে দেয়া, প্রত্যয়ন ঠিক নেই, জন্ম নিবন্ধন অনলাইন নেই, বয়স ঠিক নেই, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট নেই- এমন সব হাবিজাবি উদ্ভট চাহিদা দিয়ে বারবার ফিরিয়ে দেয়া হয়। সাধারণ মানুষ যাতে বাধ্য হয়েই দালালের মাধ্যমে তাদের দাবিকৃত টাকা দিয়ে ছবি তোলা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট এর কাজ করতে বাধ্য হয়। পাসপোর্ট অফিস সরকারের রাজস্ব আয়ের একটি অন্যতম প্রধান খাত হলেও এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সেই রাজস্ব প্রদানকারী সাধারণ মানুষের সাথে কুকুর বেড়ালের মতো আচরণ করেন। তাদের আচরণ দেখে মনে হয় পাসপোর্ট প্রত্যাশিরা ভিন গ্রহের কোন বাসিন্দা। এদের সাথে যা ইচ্ছে তাই করা যায়। এদের যেন বেঁচে থাকাই পাপ।
জানা গেছে, চাঁদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সরকারি জমার বাইরে প্রতিমাসে অবৈধ পথে রোজগার হয় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এই টাকা এল আর ফান্ডের নামে তোলা হলেও জেলা প্রশাসনের কারা এই টাকার ভাগ পান তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সূত্র জানিয়েছে, কয়েকজন পিয়ন ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী দালালীর সাথে জড়িত থাকলেও পাসপোর্ট অফিসের কোন টাকা এল আর ফান্ডে যাচ্ছে না। শুধু বদনামের ভাগিদার হচ্ছে জেলা প্রশাসন। যেহেতু জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাসপোর্ট অফিস সেহেতু চতুরতা করে জনগণকে ধোঁকা দিতেই এল আর ফান্ডের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে।
মানিকগঞ্জের বড় মিয়া খ্যাত জাহিদুল হক চাঁদপুরে এ ডি পদে যোগদানের পর দুর্নীতির মহোৎসব চলছে পাসপোর্ট অফিসে। সাধারণ মানুষের সাথে কুকুর বেড়ালের মতো আচরণ করে প্রতিমাসে দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও কেউ যেন কিছুই দেখছে না। কারো যেন কিছুই বলার নেই। সাধারণ মানুষ শোষণের যাতাকলে পিষ্ঠ হলেও কারো যেন কিছুই আসে যায় না। সবাই যেন নীরব দর্শক।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাহিদুল হকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কেউ অভিযোগ করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন। আনসাররা নিরাপত্তার দায়িত্ব ছেড়ে কেন ফরম জমা নেয় এমন প্রশ্নের সঠিক কোন জবাব দিতে তিনি ব্যর্থ হন। এল আর ফান্ডের নামে যে টাকা আদায় হচ্ছে তা কোথায় জমা হয় এই প্রশ্নেরও তিনি সঠিক কোন জবাব দিতে পারেননি।
পাসপোর্ট অফিসে এল আর ফান্ডের নামে যে হরিলুট চলছে এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান, এই বিষয়টি তার জানা নেই। এমন যদি হয়ে থাকে তবে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।