শরীফুল ইসলাম ॥
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের ৮০ ভাগ যাত্রী ছাউনী অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত হয়েছে। যার কারণে এগুলো বর্তমানে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে। মাত্র ৫ থেকে ৮ ভাগ ছাউনী ব্যবহার হচ্ছে যাত্রীদের কাজে আর বাকিগুলো রয়ে গেছে অব্যবহৃত। যাত্রীরা বলছেন, যাত্রী ছাউনী অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ, আর এগুলো যাত্রী উপকারে না এসে ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য অনেকটা দায়ী জেলা পরিষদ। আর এ ছাউনীর দোকানগুলোর দিকে তাকালে অনায়াসে বুঝা যায় এগুলো যাত্রীদের জন্যে নয়, দোকান বরাদ্দ ও বাণিজ্যের জন্যেই নির্মাণ করা হয়েছে।
সড়ক বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের মোট ৩৭ কিলোমিটার অংশ দুটি ভাগে ভাগ করেছে সড়ক বিভাগ। এর মধ্যে চাঁদপুরের তালতলা অংশ থেকে হাজীগঞ্জের কৈয়ারপুলের ঠেঙ্গারবাড়ি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দেখাশুনা করে চাঁদপুর সড়ক অফিস। আর ঠেঙ্গারবাড়ি থেকে কুমিল্লা অংশের পশ্চিম মাথা খাজুরিয়া পর্যন্ত এই ২২ কিলোমিটার দেখাশুনা করে হাজীগঞ্জ সড়ক অফিস। আর এই ৩৭ কিলোমিটারের মধ্যে যে কয়টি যাত্রী ছাউনী রয়েছে তা নির্মাণ করে জেলা পরিষদ। শুধুমাত্র যাত্রী ছাউনীর জমিটুকু সড়ক বিভাগের।
এ সড়কে চলাচলকারী বেশ ক�জন যাত্রী চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ছাউনীগুলো আসলে যাত্রীদের জন্য তৈরি করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য নয়, মূল উদ্দেশ্য ছাউনী সংলগ্ন দোকান ভাড়া, যা বাণিজ্যিক বিষয়। আর এ দোকানগুলো ভাড়া দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলা সন হিসেবে গণনা করে ভাড়া পরিশোধ করা হয়। আর এ ভাড়া বর্তমান সময়ের সাধারণ বাজার দরের ৮/১০টা দোকান ভাড়ার চেয়ে অনেক কম। ছাউনী একটি আর দোকান অনেকগুলো�এ রকম ছাউনীর সংখ্যা নেহাত কম নয়। সম্প্রতি এ রকম ছাউনী তৈরি হচ্ছে বলাখাল বাজারে। আর কয়েক বছর আগে এ রকম আরেকটি ছাউনী তৈরি হয়েছে আলীগঞ্জের হজরত মাদ্দাহ খাঁ (রঃ)-এর মাজার গেটের উত্তর পাশে।
সরজমিনে এ সড়কের ৩৭ কিলোমিটার অংশ ঘুরে দেখা যায়, এ সড়কের যাত্রী ছাউনীর মধ্যে হাজীগঞ্জ অংশের মধ্যে রয়েছে খাজুরিয়া, জগৎপুর, কাকৈরতলা, কালিয়াপাড়া, দোয়াভাঙ্গা, মওতাবাড়ি, ওয়ারুক বাজার, এনায়েতপুর, আলীগঞ্জ, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার, ধেররা, বলাখাল ও কৈয়ারপুল। অপরদিকে চাঁদপুরের অংশে রয়েছে বাকিলা, দেবপুর, মহামায়া, কুমারডুগি, বাবুরহাট ও চাঁদপুর তালতলা বাসস্ট্যান্ড।
সরজমিনে ঘুরে আরো দেখা যায়, খোদ চাঁদপুর শহরের তালতলা বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনীটি অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। ফয়সাল শপিং কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে সড়কের উত্তর পাশের এ ছাউনীটি পুরোপুরি অব্যবহৃত ও অনেকটা বেদখলে রয়েছে। বাবুরহাট পূর্ব বাজারের ছাউনীটি ব্যবহার হলেও কুমারডুগি ছাউনীটি এমন এক স্থানে করা হয়েছে যেখানে কখনো কোনোদিন কোনো বাস-গাড়ি থামেনি। এ ছাউনীটির দোকানটি বন্ধ আর যাত্রী বসার অংশে পাটখড়ি রাখা আছে। মহামায়া বাজারের ছাউনীটি নির্মিত হয়েছে একেবারে অপরিকল্পিতভাবে। এ বাজারের ছাউনীটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে সেই অংশে কখনো বাস-গাড়ি থামেনি আর থামবে কিনা বলা মুশকিল। এই ছাউনীর দোকান অংশটি ভাড়া থাকলেও যাত্রী বসার অংশে বাড়ি করার উপকরণ গ্রিলের দরজা জানালাসহ বিভিন্ন লোহাসামগ্রী রেখে দিয়েছেন পার্শ্ববর্তী ওয়ার্কসপের মালিক লোধেরগাঁও গ্রামের মুজিব। এছাড়া পার্শ্ববর্তী মুদি ব্যাবসায়ী আবুল হোসেনের তেলের ড্রাম সবসময় পড়ে থাকে এ ছাউনীর যাত্রীদের বসার স্থানে। মহামায়া ও কুমারডুগী এলাকার ছাউনীর মতো অপরিকল্পিতভাবে ছাউনী করা হয়েছে দেবপুরে। এই ছাউনীতে কোনো দিন কোনো গাড়ি থামেনি। আর যাত্রীদের বসার স্থান স্থানীয় মিরন ডেকোরেশনের সামগ্রী জমা রাখার জন্যে কাজে লাগানো হচ্ছে।
বাকিলা বাজারে ৩টি যাত্রী ছাউনী ঠিক কী কারণে কার স্বার্থে নির্মাণ করা হয়েছে তা কারো বোধগম্য নয়। এ বাজারের পশ্চিম মাথায় ১০ গজের মধ্যে দুটি ছাউনী নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে পুরাতনটি ব্যবহার হলেও পার্শ্ববর্তী ছাউনীটি ব্যবহৃত হয় না। আর মধ্য বাজারে গত কয়েক বছর আগে একটি ছাউনী নির্মাণ করা হলেও এখানে কোনো দিন যাত্রী উঠানামা করেনি কিংবা বাস থামেনি। আর সম্প্রতি এই ছাউনীর ভেতরে স্থানীয় এক ব্যক্তি চায়ের দোকান দিয়েছেন।
কৈয়ারপুল ছাউনীতে যাত্রী বসার স্থানে বিভিন্ন ব্যবসায়ীর মালামাল পড়ে থাকে। বলাখাল ছাউনীর সামনে বাস থামলে এখানে সবমসয় ছাগল ঘুমাতে দেখা যায়। সম্প্রতি এর ৫ গজের মধ্যে আরেকটি ছাউনী তৈরি হচ্ছে। ধেররা ছাউনীর সামনে রীতিমতো কচু বাগান সৃষ্টি হয়ে আছে। হাজীগঞ্জ চৌরাস্তা বিশ্বরোড এলাকায় মা ও শিশু হাসপাতালের উত্তর পাশ ঘেঁষে ছাউনীটি তৈরি করা হলেও এটির ভেতরে এক দোকানী চা বিক্রি করে থাকেন। আলীগঞ্জে একই স্থানে সড়কের উভয় পাশে দুটি ছাউনী নির্মাণ করা হলেও যাত্রীরা এগুলো ব্যবহার করছে না। এনায়েতপুর, মওতাবাড়ি যাত্রী ছাউনী দুটিতে সাধারণত ছাগল ঘুমাতে দেখা যায়। আর এরপরের অংশের ছাউনীগুলোর বেশ কয়েকটির উপরোক্ত ছাউনীগুলোর মতো হালহকিকত।
এ সড়কের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ছাউনী এলাকায় ঘুরে জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্তাব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতায় স্থানীয় চক্র এই ছাউনী নির্মাণে সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। কারণ ছাউনী নির্মাণ স্থানে যে দোকানগুলো নির্মিত হয় সেগুলো অনেক বেশি দামে হাত বদল হয়ে থাকে। সাধারণতঃ এগুলো বিক্রয়ের কোনো বিধান না থাকলেও সমঝোতার ভিত্তিতে এ দোকানগুলো হাত বদল হয়ে থাকে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সড়ক বিভাগের হাজীগঞ্জ উপ-বিভাগীয় কার্যালয়ের সেকশন অফিসার উপ-সহকারী প্রকৌশলী সফিকুর রহমান বলেন, ছাউনীর জমিগুলো আমাদের, আর এর আয়-ব্যয় সব কিছু করে জেলা পরিষদ।
অপরিকল্পিত ছাত্রী ছাউনী নির্মাণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, আমরা সমীক্ষা করেই এগুলো করেছি। আরেক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে অফিসে এসে কথা বলেন।