চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের বেহাল দশা গত ক’মাস ধরে চলছে। এই বেহাল দশার সাথে নতুন করে মৃত্যুফাঁদ তৈরি হয়েছে শোল্ডারের মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায়। বিশেষ করে গত এক মাসে উক্ত সড়কে যে ক’টি দুর্ঘটনা ঘটেছে তার অধিকাংশ ঘটেছে শোল্ডারে মাটি না থাকার কারণে। উক্ত সড়ক উন্নয়নের কাজ শেষ না করা পর্যন্ত এবং শোল্ডারের জন্যে অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ঠিক এ সময়ে শোল্ডারের কাজ করার সুযোগ থাকছে না বলে চাঁদপুর সড়ক বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৬৮ কিলোমিটার। এই ৬৮ কিলোমিটারের মধ্যে চাঁদপুর শহরের চেয়ারম্যানঘাটা এলাকা থেকে শুরু করে ফিশারী গেট পর্যন্ত, হাজীগঞ্জ পশ্চিম বাজার এলাকার বেশ কিছু অংশ, হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার শেষ প্রান্ত এনায়েতপুরের অধুনালুপ্ত সিটিসেল টাওয়ারের সামনে থেকে শুরু হয়ে একেবারে কুমিল্লা বর্ডার পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা চলছে। বেহাল দশার মধ্যেও সকল পরিবহন চলাচল করছে নিরূপায় হয়ে। এরই মধ্যে আবার নতুন করে শোল্ডারের মাটি ক্ষয়ে গিয়ে মৃত্যুফাঁদ তৈরি হয়ে আছে সড়কটিতে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, উক্ত সড়কের চাঁদপুর সদর এলাকার কুমারডুগী এলাকার দক্ষিণ পাশ, দেবপুর বাজার এলাকা থেকে শুরু হয়ে পূর্বে একেবারে বাকিলা পশ্চিম বাজার এলাকা, কৈয়ারপুল এলাকা থেকে শুরু করে বলাখাল পশ্চিম বাজার এলাকা পর্যন্ত কয়েক বছর ধরে সড়কের পাশের মাটি (শোল্ডার) ক্ষয়ে গেছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শোল্ডারে মাটি না থাকার কারণে উক্ত স্থানগুলো দিয়ে যে কোনো ধরনের যানবাহনকে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয়। এজন্যে প্রায় ঘটছে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এতে করে প্রতিটি দুর্ঘটনায় যাত্রীদের জীবনহানিসহ অঙ্গহানি হয়ে আসছে। শোল্ডারে মাটি না থাকার কারণে শুধুমাত্র দেবপুর এলাকায় চলিত মাসে বড় ধরনের দুটি দুর্ঘটনায় কমপক্ষে তিনজন যাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন। সর্বশেষ গত রোববার সন্ধ্যার পর বসুন্ধরা সিমেন্টের ঊর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তা বাকিলা পশ্চিম বাজার এলাকায় শোল্ডারের গর্তে পড়ে মারাত্মক আহত হন।
স্থানীয় দেবপুর এলাকার মহসিন খান ও পার্শ্ববর্তী চতন্তর এলাকার শুকুর আলম বেপারী চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, কিছুদিন পূর্বে বোগদাদ পরিবহনের একটি বাস ও সিএনজি স্কুটারের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বোগদাদ বাসটি শোল্ডারে মাটি না থাকার কারণে মাটিতে নামতে পারে নি। যদি শোল্ডারে মাটি থাকতো তাহলে বোগদাদ বাসটি শোল্ডারে চলে গেলে দুর্ঘটনাটি ঘটতো না আর সিএনজি স্কুটারের যাত্রীদের মধ্যে দু’জন মারা যেতো না এবং অন্য যাত্রীরা মারাত্মক আহত হতো না।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে হিলশা পরিবহনের একটি বাস একই স্থানে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ঠিক পূর্বের ঘটনার মতো শোল্ডারে মাটি না থাকায় বাসটি এক পথচারীকে চাপা দিয়ে সড়কের পাশের গাছের সাথে আটকে যায়। পরে চাপা পড়া সেই পথচারী মারা যান।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সড়কের মান উন্নতিকরণ ও দু’পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট বর্ধিতকরণের কাজ একনেকে অনুমোদন ও টেন্ডার হয়ে গেছে। সেই কাজ শুরু হবে সহসাই। তার আগে সড়কে কোনো কাজ হবে না। বর্ষা মৌসুমে কাজ করার জন্যে এমনকি শোল্ডারে কাজ করার মতো বরাদ্দ আসে নি বা এ জাতীয় কিছু করার ইচ্ছে এখন আর সওজের নেই।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের চাঁদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত জানান, যেহেতু সহসাই সড়কের কাজ শুরু হবে সেখানে আপাতত শোল্ডারে মাটি দেয়ার পরিকল্পনা আমাদের নেই। তবে যে যে স্থানে বড় ধরনের সমস্যা রয়েছে সেখানে আমরা মাটি দিয়ে ভরাট করে দেবো।