স্টাফ রিপোর্টার:
মূল ভবনের দক্ষিণ পাশের নিচে প্যাথলজি বিভাগ। উপরে লাল রংয়ে লেখা ‘রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়।’ ঠিক তার সামনেই পুরানো একটা চাদর মোড়ানো বৃদ্ধের লাশ পড়ে আছে। লাশের উত্তর পাশে সর্বোচ্চ দশ হাত দূরে হাড্ডিসার একজন মুমূর্ষু বৃদ্ধ পাতলা ছেঁড়া কাপড় প্যাঁচিয়ে শুয়ে আছেন। শুয়ে আছেন বললে ভুল হবে, পড়ে আছেন! থরথর করে কাঁপছেন। অনেকেই আসছেন, দেখছেন, কোনো মন্তব্য না করে ফিরে যাচ্ছেন। কিছু সময় উৎসুক জনতা ভিড় করলেও সন্ধ্যার পর থেকে সে ভিড় কমে যায়। কেউ তাদের চেনেন না, জানেন না।
এটা চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ভেতরের একটি চিত্র। এ বাস্তব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারেন যে কেউ। তবে ততক্ষণে যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় তবে এ মর্মান্তিক দৃশ্য দেখা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
অন্তত দুই সপ্তাহ ধরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের নিচ তলায় পড়ে থাকতে দেখা যায় রুগ্ন দুজন বৃদ্ধকে। এদের মধ্যে একজন শুক্রবার দুপুরের দিকে অনাহারে এবং বিনা চিকিৎসায় মারা যান। অপর জনের দম যায় যায় অবস্থা। রাত ৮টা পর্যন্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেশ কিছুদিন ধরে এই দুই ব্যক্তিকে হাসপাতালের করিডোরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখা যায়। কখনো কিছু খেতে দেখেননি কেউ। শোয়া থেকে উঠতেও দেখেননি। কেউ তাদের খোঁজ-খবরও নেননি। এমনকি কেউ তাদের চেনেনও না। গত কয়েকদিন তাদের নড়াচড়া থাকলেও একজনের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায়। পরে এক ব্যক্তি লাঠি দিয়ে শরীরে স্পর্শ করলে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান। ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ গোলাম রহমান। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে চাঁদপুর মডেল থানায় বিষয়টি অবগত করা হলে ডিউটি অফিসার এসে মৃত্যু সনদে স্বাক্ষর করে যান। তারপর রাত ৮টা পর্যন্ত লাশের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
মেডিকেল অফিসার নাজমুল আবেদীন বিষয়টি আরএমও এবং তত্ত্বাবধায়ক দেখবেন বলে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে যান। এদিকে আরএমও বেলায়েত হোসেন ছুটিতে আছেন বলে জানা গেছে।
বিএমএ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মাহমুদুন্নবী মাসুম জানান, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। যেহেতু বিষয়টি এখন জেনেছি এ ব্যাপারে এখনই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মামুনুর রশিদ জানান, একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। আমাদের জানা মতে, তারা মানসিক রোগী। মৃতের দাফনের ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামন বলেন, বিষয়টি আমি যখন শুনেছি, অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অপরদিকে মুমূর্ষু অপর ব্যক্তিকে রাত ৮টা পর্যন্ত ওই একই স্থানে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে চিকিৎসা করানোর ব্যপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।