চাঁদপুর নিউজ
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা হওয়ায় চাঁদপুর জেলায় এ নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এখনো চাঁদপুরের উপজেলাগুলোর নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়নি। তবে যে কোনো দিন নির্বাচন কমিশন দ্বিতীয় পর্যায়ে তফসিল করবে। সে তফসিলে চাঁদপুরের ৮টি উপজেলার মধ্যে ৪/৫টি উপজেলার নির্বাচন হবে বলে জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানিয়েছেন। তবে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম তারা পেয়ে গেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসারদের কাছে মনোনয়ন ফরম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোটাররা ভোট প্রদান করবে। তালিকাভুক্ত কেন্দ্রগুলোতেই স্ব স্ব উপজেলার কেন্দ্র থাকছে। চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ এ ৪টি উপজেলার নির্বাচন আগে হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এসব উপজেলার গতবারের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা আগে শপথ নিয়েছেন এবং নির্বাচিত পরিষদ প্রথম সভা করেছে। নির্বাচন অফিসার আরো জানান, কোন্ কোন্ উপজেলার নির্বাচন আগে হবে তা বলা যাচ্ছে না। তফসিল ঘোষণা হলেই তা জানা যাবে। তবে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম পাওয়ায় উপজেলা নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত চাঁদপুর জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস। জেলা নির্বাচন অফিসার আরো জানান, চাঁদপুরের ৮টি উপজেলা পরিষদের মেয়াদ চলতি সনের মে মাসে শেষ হবে। যে কোনো দিন চাঁদপুরের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আসতে পারে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। বিশেষ করে বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যারা রয়েছেন এবং ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে সব প্রার্থী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তারা ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। ভোটারদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের তেমন আগ্রহ দেখা না দিলেও নির্বাচন যে হবে ভোটাররা তা নিশ্চিত হয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের ৫টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা এমপি নির্বাচিত হওয়ায় জেলার ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে এবং ভোট দিতে হয়নি। এখন উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলায় নতুন-পুরাতন অনেকেই এবার উপজেলা নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রতিটি উপজেলায় ৮ থেকে ১০জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগতভাবে দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান ও নতুন প্রার্থীরা কেন্দ্রীয়ভাবে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। অনেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগকে গোল দিতে চাইছে না। এ নির্বাচনে বিএনপি থাকবে এমন খবরে নির্বাচনের আমেজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা লড়াইয়ে রূপ নেবে বলে ভোটাররা মনে করছে। আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই দল থেকে বহিষ্কার। এমন সিদ্ধান্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত। চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে এবং গতবারের নির্বাচনে বিজয়ী ও নিকটতম প্রার্থীদের ভোটের পার্থক্য নিচে তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর সদর : চাঁদপুর সদর উপজেলায় গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ৪জন। এদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগের মোঃ ইউছুফ গাজী ও বিএনপির দেওয়ান সফিকুজ্জামানের মধ্যে। ইউছুফ গাজী ৮০ হাজার ৬শ’ ১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৯শ’ ৪৪ ভোট। এছাড়া ওই নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন আহসান উল্লা আখন্দ ও অ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম। দু’জনই আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে প্রার্থী হলেও পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবার ইউছুফ গাজী আবারো প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। দল থেকে আরো অনেকে সমর্থন পেতে কেন্দ্রের সাথে লবিং করছেন বলে একটি সূত্র জানায়। বিএনপির এ উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে সবার আগে মাঠে নেমে গেছেন গতবারের পরাজিত প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান। তিনি ছাড়াও জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আঃ হামিদ মাস্টার ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। চাঁদপুর সদর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮শ’ ৮জন।
হাজীগঞ্জ : গতবার এ উপজেলায় প্রার্থী ছিলেন ৫জন। আওয়ামী লীগের আঃ রশিদ মজুমদার ৫১ হাজার ৭শ’ ১৪ ভোট পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ৩শ’ ৭ ভোট। এছাড়া প্রার্থী ছিলেন সফিকুর রহমান ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের গাজী মাঈনুদ্দিন, স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর আলম। উল্লেখিতরা এবারও প্রার্থী হবেন এবং নতুন প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এ উপজেলায় হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোঃ আলমগীর কবির পাটওয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবার প্রার্থী হচ্ছেন এমন আলোচনা জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩২জন।
শাহরাস্তি : গতবার এ উপজেলায় নির্বাচনে ১০জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে বিএনপির দেলোয়ার হোসেন ৩৯ হাজার ১শ’ ৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ওয়াহিদুর রহমান বাঙালি পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ২শ’ ৩৫ ভোট। এবারও তারা লড়াইয়ে নামবেন। এছাড়া নির্বাচনী মাঠে ছিলেন সৈয়দ মোঃ জিন্নুর রহমান, অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল, এরশাদুল করিম, খিজির হায়দার, ফরিদুল্লা চৌধুরী, মোস্তফা কামাল, হুমায়ুন কবির মজুমদার। এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মিন্টুসহ অনেকেই আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এবং নতুন প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৪ ভোট।
ফরিদগঞ্জ : এ উপজেলা গতবার ১১জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিএনপি সমর্থিত হাজী মোজাম্মেল ৩৬ হাজার ৭শ’ ৪৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আলহাজ্ব মোঃ আঃ বারী মিয়াজী। তিনি পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ১শ’ ৭৫ ভোট ও আওয়ামী লীগের মাহাবুবুল বাশার কালু পাটওয়ারী পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২শ’ ৬ ভোট এবং আবুল কাশেম কন্ট্রাকটর পান ১৭ হাজার ২শ’ ৩৮ ভোট। এছাড়া মমতাজ উদ্দিন মন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী ৫ হাজার ৫শ’ ৬৪ ভোট। ওই নির্বাচনে আরো যারা প্রার্থী ছিলেন তারা হচ্ছেন এসএম মিজানুর রহমান, দুলাল মিয়া পাটওয়ারী, মাহবুবুর রহমান, আমির আজম রেজা, শরীফ মোঃ ইউনুছ ও হারুনুর রশিদ। আসন্ন নির্বাচনে পুরাতন ও নতুন অনেকেই প্রার্থী হবেন এবং দলের সমর্থন তাদের কেউ না কেউ পেয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকছেন বলে শোনা যায়।
হাইমচর : গতবার নির্বাচনে হাইমচর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৮জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মোঃ শাহজাহান মিয়া ১১ হাজার ৬শ’ ৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অ্যাডঃ মোখলেছুর রহমান ১১ হাজার ৩শ’ ৭৯ ভোট পেয়ে মাত্র ১৭৪ ভোটে হেরে যান। আলহাজ্ব কায়কোবাদ চুন্নু সরকার পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৩শ’ ৬২ ভোট এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ নূর হোসেন পাটওয়ারী পান ৬ হাজার ১শ’ ৮৬ ভোট। আরো প্রার্থী ছিলেন কাওছার মিয়াজী, নিজামুল হায়দার চৌধুরী, এসএম সালাউদ্দিন। এদের অনেকেই এবারও প্রার্থী হবেন বলে শোনা যায়। নতুন মুখ হিসেবে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করার পক্ষে নাম শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় বর্তমানে মোট ভোটার ৬৯ হাজার ৭শ’ ৮৯জন।
কচুয়া : গতবার নির্বাচনে কচুয়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৬জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মোঃ আইয়ুব আলী পাটোয়ারী ৮৮ হাজার ২শ’ ৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির শাহজালাল প্রধান ১৩ হাজার ৮শ’ ৪০ ও ওয়াহিদুর রহমান (স্বতন্ত্র) পান ৫ হাজার ৫শ’ ৫২ ভোট। ওয়াহিদুর রহমান ইন্তেকাল করায় প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তার স্থলে নতুন মুখ আসতে পারে। আরো প্রার্থী ছিলেন আবিদুর রেজা মিয়া, সৈয়দ আবদুর জব্বার বাহার, মোঃ মাইন উদ্দিন। এদের অনেকেই এবারও প্রার্থী হবেন বলে শোনা যায়। নতুন মুখ হিসেবে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করার পক্ষে নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ইসহাক শিকদার, বিএনপির সরফুদ্দিন মিয়া ও খায়রুল আবেদীন স্বপনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় বর্তমানে মোট ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ২শ� ৯৩জন।
মতলব দক্ষিণ : গতবার নির্বাচনে মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ১১জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে বিএনপির আঃ শুক্কুর পাটওয়ারী ২৭ হাজার ৬শ’ ১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একই দলের এনামুল হক বাদল ২২ হাজার ৯শ’ ৮১ ভোট পেয়েছিলেন। এনামুল হক বাদল পৌর নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় তিনি এবার প্রার্থী থাকছেন না। আরো যারা প্রার্থী ছিলেন আলী আশরাফ পাটওয়ারী, মোঃ নূরুল ইসলাম, ওচমান গনি, বিএইচএম কবির আহমেদ, মিজানুর রহমান খান, আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান বকাউল ও কাজী সুলতান আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া নতুন প্রার্থী হিসেবে অনেককে দেখা যেতে পারে। এ উপজেলায় বর্তমানে মোট ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪শ’ ৩৯জন।
মতলব উত্তর : গতবার নির্বাচনে মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান ৫২ হাজার ৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির মোঃ নুরুল হক শিকদার ৩৮ হাজার ৪শ’ ৬৬ ভোট পেয়েছিলেন। এছাড়া তাফাজ্জল হোসেন (স্বতন্ত্র) পান ৫ হাজার ৫শ’ ৮৪ ভোট। জাতীয় পার্টির এমরান হোসেন মিয়া নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। এবার আরো নাম শোনা যায় ফয়েজ আহমেদ, মনসুর আহমেদ।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি ৩য় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণায় সহসায় তা স্পষ্ট হবে।
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা হওয়ায় চাঁদপুর জেলায় এ নির্বাচনের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। এখনো চাঁদপুরের উপজেলাগুলোর নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়নি। তবে যে কোনো দিন নির্বাচন কমিশন দ্বিতীয় পর্যায়ে তফসিল করবে। সে তফসিলে চাঁদপুরের ৮টি উপজেলার মধ্যে ৪/৫টি উপজেলার নির্বাচন হবে বলে জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ আতাউর রহমান জানিয়েছেন। তবে ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাচনের জন্য প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম তারা পেয়ে গেছেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসারদের কাছে মনোনয়ন ফরম পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোটাররা ভোট প্রদান করবে। তালিকাভুক্ত কেন্দ্রগুলোতেই স্ব স্ব উপজেলার কেন্দ্র থাকছে। চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ এ ৪টি উপজেলার নির্বাচন আগে হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এসব উপজেলার গতবারের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা আগে শপথ নিয়েছেন এবং নির্বাচিত পরিষদ প্রথম সভা করেছে। নির্বাচন অফিসার আরো জানান, কোন্ কোন্ উপজেলার নির্বাচন আগে হবে তা বলা যাচ্ছে না। তফসিল ঘোষণা হলেই তা জানা যাবে। তবে প্রার্থীদের মনোনয়ন ফরম পাওয়ায় উপজেলা নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত চাঁদপুর জেলা ও উপজেলা নির্বাচন অফিস। জেলা নির্বাচন অফিসার আরো জানান, চাঁদপুরের ৮টি উপজেলা পরিষদের মেয়াদ চলতি সনের মে মাসে শেষ হবে। যে কোনো দিন চাঁদপুরের উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা আসতে পারে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে বসেছেন। বিশেষ করে বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান যারা রয়েছেন এবং ৩য় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে সব প্রার্থী নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তারা ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। ভোটারদের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের তেমন আগ্রহ দেখা না দিলেও নির্বাচন যে হবে ভোটাররা তা নিশ্চিত হয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরের ৫টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা এমপি নির্বাচিত হওয়ায় জেলার ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে এবং ভোট দিতে হয়নি। এখন উপজেলা নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দেয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, প্রতিটি উপজেলায় নতুন-পুরাতন অনেকেই এবার উপজেলা নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রতিটি উপজেলায় ৮ থেকে ১০জন সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগতভাবে দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান ও নতুন প্রার্থীরা কেন্দ্রীয়ভাবে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন। অনেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগকে গোল দিতে চাইছে না। এ নির্বাচনে বিএনপি থাকবে এমন খবরে নির্বাচনের আমেজ প্রতিদ্বন্দ্বিতা লড়াইয়ে রূপ নেবে বলে ভোটাররা মনে করছে। আওয়ামী লীগ থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেই দল থেকে বহিষ্কার। এমন সিদ্ধান্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুত। চাঁদপুর জেলার ৮ উপজেলায় চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে এবং গতবারের নির্বাচনে বিজয়ী ও নিকটতম প্রার্থীদের ভোটের পার্থক্য নিচে তুলে ধরা হলো।
চাঁদপুর সদর : চাঁদপুর সদর উপজেলায় গত নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ছিলেন ৪জন। এদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় আওয়ামী লীগের মোঃ ইউছুফ গাজী ও বিএনপির দেওয়ান সফিকুজ্জামানের মধ্যে। ইউছুফ গাজী ৮০ হাজার ৬শ’ ১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৯শ’ ৪৪ ভোট। এছাড়া ওই নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন আহসান উল্লা আখন্দ ও অ্যাডঃ জহিরুল ইসলাম। দু�জনই আওয়ামী লীগের সমর্থন পেতে প্রার্থী হলেও পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। এবার ইউছুফ গাজী আবারো প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত। দল থেকে আরো অনেকে সমর্থন পেতে কেন্দ্রের সাথে লবিং করছেন বলে একটি সূত্র জানায়। বিএনপির এ উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে সবার আগে মাঠে নেমে গেছেন গতবারের পরাজিত প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান। তিনি ছাড়াও জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আঃ হামিদ মাস্টার ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। চাঁদপুর সদর উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৯৬ হাজার ৮শ’ ৮জন।
হাজীগঞ্জ : গতবার এ উপজেলায় প্রার্থী ছিলেন ৫জন। আওয়ামী লীগের আঃ রশিদ মজুমদার ৫১ হাজার ৭শ’ ১৪ ভোট পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ৩শ’ ৭ ভোট। এছাড়া প্রার্থী ছিলেন সফিকুর রহমান ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের গাজী মাঈনুদ্দিন, স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর আলম। উল্লেখিতরা এবারও প্রার্থী হবেন এবং নতুন প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। তবে এ উপজেলায় হাজীগঞ্জ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ ড. মোঃ আলমগীর কবির পাটওয়ারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবার প্রার্থী হচ্ছেন এমন আলোচনা জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৩২জন।
শাহরাস্তি : গতবার এ উপজেলায় নির্বাচনে ১০জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাদের মধ্যে বিএনপির দেলোয়ার হোসেন ৩৯ হাজার ১শ’ ৬৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের ওয়াহিদুর রহমান বাঙালি পেয়েছিলেন ৩৭ হাজার ২শ� ৩৫ ভোট। এবারও তারা লড়াইয়ে নামবেন। এছাড়া নির্বাচনী মাঠে ছিলেন সৈয়দ মোঃ জিন্নুর রহমান, অধ্যক্ষ এমএ আউয়াল, এরশাদুল করিম, খিজির হায়দার, ফরিদুল্লা চৌধুরী, মোস্তফা কামাল, হুমায়ুন কবির মজুমদার। এদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মিন্টুসহ অনেকেই আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হবেন এবং নতুন প্রার্থী হিসেবে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৪ ভোট।
ফরিদগঞ্জ : এ উপজেলা গতবার ১১জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। বিএনপি সমর্থিত হাজী মোজাম্মেল ৩৬ হাজার ৭শ’ ৪৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আলহাজ্ব মোঃ আঃ বারী মিয়াজী। তিনি পেয়েছিলেন ২৩ হাজার ১শ’ ৭৫ ভোট ও আওয়ামী লীগের মাহাবুবুল বাশার কালু পাটওয়ারী পেয়েছিলেন ২১ হাজার ২শ’ ৬ ভোট এবং আবুল কাশেম কন্ট্রাকটর পান ১৭ হাজার ২শ’ ৩৮ ভোট। এছাড়া মমতাজ উদ্দিন মন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী ৫ হাজার ৫শ’ ৬৪ ভোট। ওই নির্বাচনে আরো যারা প্রার্থী ছিলেন তারা হচ্ছেন এসএম মিজানুর রহমান, দুলাল মিয়া পাটওয়ারী, মাহবুবুর রহমান, আমির আজম রেজা, শরীফ মোঃ ইউনুছ ও হারুনুর রশিদ। আসন্ন নির্বাচনে পুরাতন ও নতুন অনেকেই প্রার্থী হবেন এবং দলের সমর্থন তাদের কেউ না কেউ পেয়ে নির্বাচনী মাঠে থাকছেন বলে শোনা যায়।
হাইমচর : গতবার নির্বাচনে হাইমচর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৮জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মোঃ শাহজাহান মিয়া ১১ হাজার ৬শ’ ৫৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অ্যাডঃ মোখলেছুর রহমান ১১ হাজার ৩শ’ ৭৯ ভোট পেয়ে মাত্র ১৭৪ ভোটে হেরে যান। আলহাজ্ব কায়কোবাদ চুন্নু সরকার পেয়েছিলেন ৯ হাজার ৩শ’ ৬২ ভোট এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ নূর হোসেন পাটওয়ারী পান ৬ হাজার ১শ’ ৮৬ ভোট। আরো প্রার্থী ছিলেন কাওছার মিয়াজী, নিজামুল হায়দার চৌধুরী, এসএম সালাউদ্দিন। এদের অনেকেই এবারও প্রার্থী হবেন বলে শোনা যায়। নতুন মুখ হিসেবে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করার পক্ষে নাম শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় বর্তমানে মোট ভোটার ৬৯ হাজার ৭শ’ ৮৯জন।
কচুয়া : গতবার নির্বাচনে কচুয়া উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৬জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মোঃ আইয়ুব আলী পাটোয়ারী ৮৮ হাজার ২শ’ ৬০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির শাহজালাল প্রধান ১৩ হাজার ৮শ’ ৪০ ও ওয়াহিদুর রহমান (স্বতন্ত্র) পান ৫ হাজার ৫শ’ ৫২ ভোট। ওয়াহিদুর রহমান ইন্তেকাল করায় প্রতিদ্বন্দ্বীতায় তার স্থলে নতুন মুখ আসতে পারে। আরো প্রার্থী ছিলেন আবিদুর রেজা মিয়া, সৈয়দ আবদুর জব্বার বাহার, মোঃ মাইন উদ্দিন। এদের অনেকেই এবারও প্রার্থী হবেন বলে শোনা যায়। নতুন মুখ হিসেবে একাধিক প্রার্থী নির্বাচন করার পক্ষে নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ইসহাক শিকদার, বিএনপির সরফুদ্দিন মিয়া ও খায়রুল আবেদীন স্বপনের নাম শোনা যাচ্ছে। এ উপজেলায় বর্তমানে মোট ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ২শ’ ৯৩জন।
মতলব দক্ষিণ : গতবার নির্বাচনে মতলব দক্ষিণ উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ১১জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে বিএনপির আঃ শুক্কুর পাটওয়ারী ২৭ হাজার ৬শ’ ১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী একই দলের এনামুল হক বাদল ২২ হাজার ৯শ’ ৮১ ভোট পেয়েছিলেন। এনামুল হক বাদল পৌর নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় তিনি এবার প্রার্থী থাকছেন না। আরো যারা প্রার্থী ছিলেন আলী আশরাফ পাটওয়ারী, মোঃ নূরুল ইসলাম, ওচমান গনি, বিএইচএম কবির আহমেদ, মিজানুর রহমান খান, আলহাজ্ব মোঃ শাহজাহান বকাউল ও কাজী সুলতান আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া নতুন প্রার্থী হিসেবে অনেককে দেখা যেতে পারে। এ উপজেলায় বর্তমানে মোট ভোটার ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪শ’ ৩৯জন।
মতলব উত্তর : গতবার নির্বাচনে মতলব উত্তর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান ৫২ হাজার ৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বিএনপির মোঃ নুরুল হক শিকদার ৩৮ হাজার ৪শ’ ৬৬ ভোট পেয়েছিলেন। এছাড়া তাফাজ্জল হোসেন (স্বতন্ত্র) পান ৫ হাজার ৫শ’ ৮৪ ভোট। জাতীয় পার্টির এমরান হোসেন মিয়া নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন। এবার আরো নাম শোনা যায় ফয়েজ আহমেদ, মনসুর আহমেদ।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি ৩য় উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে চাঁদপুর জেলার ৮টি উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণায় সহসায় তা স্পষ্ট হবে।