চাঁদপুর : চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা, স্বেচ্চাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, বদলি বাণিজ্য, হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্বক ও মানহানির অভিযোগে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) সকাল ১০ টায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, শ্রমজীবী শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও এলাকাবাসির পক্ষে উক্ত মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনের সময় এলাকাসীর পক্ষে মোঃ ইউনুছ উল্যা পাটাওয়ারী, অভিভাবকের পক্ষে ফরিদা আক্তার, সেলিনা আক্তার, জরিনা বেগম, রাবেয়া বেগম, ছাত্র জিহাদ বক্তব্য রাখেন।
চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধন শেষে সংক্ষুব্ধরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়ক পদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিসের মাধ্যমে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় চাঁদপুর শহরের লঞ্চঘাট, স্টিমার ঘাট, রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় শ্রমজীবী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের আধিক্য থাকায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০০৬ সালে চাঁদপুর পৌরসভাধীন উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত একটি টিনশেড ঘরে চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু করা হয়। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, শ্রমজীবী শিশুদের এই বিদ্যালয়টি প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাসের হার, প্রাথমিক সরকারি বৃত্তি এবং শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট বৃত্তি অর্জনের মাধ্যমে অদ্যাবধি সফলতার সাথে এগিয়ে চলছে।
গত ১৬ অক্টোবর ২০১১ খ্রিঃ তারিখে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের টাইপ প্ল্যান অনুযায়ি চারতলার ভিত্তি প্রদান করে প্রকল্প কমিটির মাধ্যমে চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় প্রকল্প কমিটির আহ্বায়ক করা হয় চাঁদপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে এবং সদস্য সচিব করা হয় চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে। ৩১ লাখ টাকার কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ ফান্ডে ৪ লাখ ১৭ হাজার চারশত পাঁচ টাকা গচ্ছিত থাকার পরও অজানা রহস্যে ২০১৬ সাল থেকে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। অজানা কারণে বিদ্যালয়টির ভবন নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার মধ্যে দিয়ে গত ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে আরো ছয় লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাহাব উদ্দিন গত তিন বছরে নির্মানাধীন ভবনের কোন কাজ করেননি। চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বার বার অনুরোধ করা সত্বেও তিনি বিগত দিনে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি একটি সভাও আহবান করেননি এবং একবারও বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেনি। যার জন্য দির্ঘ দিন নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ রাখার কারণে বর্তমানে ভবনের গুণগত মান অনেক নষ্ট হয়েছে। মাদকসেবী এবং দুবৃর্ত্তরা নির্মানাধীন ভবনের গ্রীল, টয়লেট, দেয়াল, গভীর নলকূপসহ অনেক অবকাঠামো ভেঙ্গে এবং চুরি করে বিদ্যালয়ের কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি করেছে। গচ্ছিত অনেক অর্থই ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলা, স্বেচ্চাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম, বদলি বাণিজ্য, হিংসাত্মক, ধ্বংসাত্বক ও মানহানির আরো ৭টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
স্মারক লিপি প্রদানের সময় আন্দোলনকারীগণ জেলা প্রশাসককে বলেন, চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এবং চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প কমিটি আহবায়ক মোঃ সাহাব উদ্দিন ২০১৮ সালে চাঁদপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চাঁদপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ধ্বংসের এজেন্ডা বাস্থবায়ন করছেন। দ্রুত এর যথাযত ব্যবস্থা না নিলে আগামিতে তারা বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিবেন। জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস আন্দোলনকারিদের এব্যপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
চাঁদপুরনিউজ/এমএমএ/