মিজান লিটন
ভোটার তালিকায় ক্রটির কারণে চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনে অন্তবর্তী অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। গতকাল রোববার মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের দায়েরকৃত এক মামলার প্রেক্ষিতে চাঁদপুরের সহকারী সিনিয়র জজ মোঃ ইব্রাহীম মিয়া এ আদেশ দেন। (দেওয়ানি মোকাদ্দমা নং-৭১/২০১৪)। আদালতে বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডঃ আব্দুর রহমান। উক্ত আদেশের প্রেক্ষিতে আপাতত চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ও ৮টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিট কমান্ডের নির্বাচন ৪ জুন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।
জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা, উপজেলা ও দেশের বিভাগীয় শহর তথা মহানগরগুলোর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে। সে নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা। এ নির্বাচনে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষাণা করার নিয়ম রয়েছে। এ হালনাগাদ ভোটার তালিকা যাচাই-বাছাই করে মৃত ও দ্বৈত ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে সম্পূর্ণরূপে একটি পূর্ণাঙ্গ সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার নির্দেশনা রয়েছে। এই নির্দেশনাকে অমান্য করে চাঁদপুর জেলা ও ৮টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ভোটার তালিকা চূড়ান্ত না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন। চাঁদপুরের জেলা রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ঘোষিত তফসিলকে চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান মিয়া, পিতা মোঃ আব্দুল কাদের মিয়া, সাং-বিষ্ণুপুর, ডাকঘর : বরদিয়া, উপজেলা ও জেলা : চাঁদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে দেওয়ানি মোকাদ্দমা নং-৭১/২০১৪ দায়ের করেন। তিনি দায়েরকৃত আরজিতে উল্লেখ করেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে সেটি সঠিক নয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিয়ম অনুযায়ী ভোটার তালিকাকে হালনাগাদ করতে হবে। কিন্তু বর্তমান ভোটার তালিকায় মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা ২টি স্থানে ভোটার হয়েছেন এমন নামও তিনি ঘোষিত ভোটার তালিকায় উপস্থাপন করেছেন। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ইউনিটের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ৩টি প্যানেলের মধ্যে ১টি প্যানেলের ডেপুটি কমান্ডার পদে ওয়ারেন্ট অফিসার (অবঃ) আব্দুল হাফিজ খান, পিতা : মৃত-আব্দুল মান্নান খান, সাং-মাদ্রাসা রোড, চাঁদপুর শহর, তিনি ২টি জায়গায় ভোটার হয়েছেন। এটি হচ্ছে চাঁদপুর সদর (ভোটার নং-৪৫৩) ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা (ভোটার নং-৪৬৩)। একজন প্রার্থী দু স্থানে ভোটার হয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। এটি আইনের পরিপন্থী। তাই আগামী ৪ জুনের নির্বাচনকে স্থগিত করে জেলার সকল উপজেলা ও জেলা ইউনিট সংসদের ভোটার তালিকা পুনরায় হালনাগাদ করে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে পুনঃ তফসিল ঘোষণা করার অনুরোধ জানান। এ প্রেক্ষিতে বাদীর আরজি অনুযায়ী বিজ্ঞ আদালত এর নির্বাচন স্থগিতের পূর্বে জেলা রিটার্নিং অফিসারকে কেনো নির্বাচন স্থগিত করা যাবে না, এ মর্মে জবাব চান। সেটি সন্তোষজনক না হওয়ায় গত ২২/০৫/২০১৪ তারিখে বিজ্ঞ আদালত পুনরায় ভোটার তালিকা সংশোধন করে হালনাগাদ অনুযায়ী ভোটার তালিকা করে পুনঃ তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন করার আদেশ দেন এবং আগামী ৪ জুন জেলা ও চাঁদপুরের ৮টি উপজেলা ইউনিটের নির্বাচন অর্ন্তবর্তীকালীন সময়ের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে মুঠোফোনে নির্বাচন স্থগিত আদেশের বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন একটি আদেশ আমরা পেয়েছি তবে আগামীকাল (আজ সোমবার) আদালতে এ বিষয়ে জবাব দেবো। উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলায় ৩,৩৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধা ভোটার। এর মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলায় ৫৫৫ জন, এতে ভোটার তালিকায় একজন নিখোঁজ, একজন মৃত এবং ১ জন দ্বৈত ভোটার রয়েছেন, মতলব উত্তর উপজেলায় ৬২৯ জন ভোটার, ঘোষিত তালিকায় মৃত ভোটারের সংখ্যা ৩১ জন, দ্বৈত ভোটার ৫ জন, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় মোট ভোটার ৩৫২, মৃত ভোটার ৪ জন, হাজীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ৪৮৩ জন, মৃত ১১ জন, দ্বৈত ২ জন, ফরিগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ৬৬০, মৃত- ৩ জন, দ্বৈত ১ জন, হাইমচর উপজেলায় মোট ভোটার ১০৫ জন, শাহ্রাস্তিতে ৩৬৮ জন, কচুয়ায় মোট ভোটার ১৯৭ জন ও মৃত-৫ জন। জেলায় ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী হালনাগাদ ভোটার তালিকায় ৫৪ জন মৃত, ৮ জন দ্বৈত ও একজন নিখোঁজ ভোটার রয়েছেন।
এদিকে জেলার ডেপুটি কমান্ডার পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোঃ আব্দুল হাফিজ খান চাঁদপুর সদর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় দ্বৈত ভোটার হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারের দেয়া ডাবল সম্মানী ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা বহন করায় সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, যেখানে বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হচ্ছে সে অবস্থায় একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জাতির সাথে বেঈমানী করে ডাবল ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নেয়ায় তার বিচার চান এবং এ নির্বাচন স্থগিত করায় তারা খুশি।