চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদিতে গৃহবধূকে অপহরন করে নিয়ে ঘরে আটকে রেখে প্রতিবন্ধীর সাথে বিয়ের খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে বাগাদী ইউনিয়নের পশ্চিম সকদি গ্রামের মো. রফিকুল ইসলামের বাড়িতে। লোমহর্সকর এ ঘটনায় গৃহবধূর পরিবার প্রতিবাদ করলে হত্যার হুমকি দিয়ে প্রতিবন্ধির বাড়িতে পান্না বেগমকে জোরপূর্বক আটকে রেখে বিয়ের কার্যক্রম শেষ করেছে বলে জানা গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রতিবন্ধী তাজুল ইসলাম অপুর ঘরের একটি রুমে গৃহবধূ পান্না বেগমকে ৩জন মহিলা পাহারা দিয়ে রেখেছে। সাংবাদিকরা আসার খবর শুনে প্রতিবন্ধীর বাবা রফিকুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে প্রকৃত ঘটনাটি আড়াল করার চেষ্টা করে।
জানা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার ১১নং ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের পশ্চিম জাফরাবাদ এমদাদিয়া মাদ্রাসার পিছনে গফুর আলী শেখ বাড়ির আবু তাহের শেখের মেয়ে পান্না বেগমের সাথে মানিকগঞ্জ জেলার পাল্লা গ্রামের শহর আলীর ছেলে করিমের সাথে ২ বছর পূর্বে বিয়ে হয়। পশ্চিম সকদি গ্রামে প্রতিবন্ধী অপুর বাড়ির পাশে গৃহবধূ পান্না বেগমের বড় বোন সুমির শশুর বাড়ি। বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসলে রফিকুল ইসলামের প্রতিবন্ধী ছেলে অপুর কু-নজর পড়ে তার দিকে। গত ৩ দিন পূর্বে পান্না বেগম চাঁদপুর এসে খালার বাড়ি হয়ে বোনের বাড়িতে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে প্রতিবন্ধী অপু তার সহযোগীদের নিয়ে সিএনজি স্কুটার যোগে বাবুরহাট নিয়ে তার বন্ধুর বাড়িতে আটকে রাখে। এ খবর জানাজানি হলে প্রতিবন্ধীর বড় ভাই বাগাদি ইউনিয়নের চেয়াম্যান প্রার্থী রাজনৈতিক দলের নামধারী নেতা মানিক মিয়া বাবুরহাট থেকে গৃহবধূকে এনে তার বাড়িতে ৩ দিন যাবৎ আটকে রাখে। সেখানে রেখেই প্রতিবন্ধী ভাইয়ের আবদার রক্ষায় গৃহবধুকে জোর করে ১ম স্বামীকে তালাক দেওয়ার কাগজে স্বাক্ষর করায়।
খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে গৃহবধুর বাবা আবু তাহের পশ্চিম জাফরাবাদের সালিসী আওয়ামীলীগ নেতা লিলু হাওলাদার সহ বেশ কয়েকজন প্রতিবন্ধীর বাড়িতে যায়। এসময় প্রতিবন্ধীর বড় ভাই মানিক মিয়া খারাপ আচরন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মানিক মিয়া ও তার বাবা রফিকুর রহমান রফিক এলাকার সন্ত্রাসী যুবকদের নিয়ে পাহারা দিয়ে গৃহবধুকে বাড়িতে আটকে রেখে প্রতিবন্ধির সাথে বিয়ে শেষ করার পায়তারা করে।এই ঘটনা পরো এলাকাবাসি জানতে পেরেও তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেনি।
বৃহস্পতিবার রাতে প্রতিবন্ধির বাড়িতে বিয়ের প্যান্ডেল বসিয়ে এক সাথে গায়ে হলুদের কাজ শেষ করে। এর পূর্বে এ ধরনের ঘটনা আগে পরে ঘটেনি। গৃহবধু পান্না বেগম বিয়েতে রাজি না থাকলে ও তাকে জোর করে বাড়িতে আটকে রেখে বিয়ের কার্যক্রম শেষ করছে বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।
এ ঘটনায় প্রতিবন্ধী অপুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,এখন ও বিয়ে হয়নি,তবে শুক্রবার জুম্মা নামাজের পর বিয়ের কাজ শেষ হবে। তাকে ভালোবাসি বিধায় পান্নাকে বাড়িতে এনে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দু দিন পূর্বে পশ্চিম সকদির মোয়াজ্জেম আরশাদ মিজির মাধ্যমে পান্নার ১ম স্বামীকে তালাক দেওয়ার কাজ শেষ করেছি। এলাকাবাসীরা জানায়, পরের স্ত্রীকে বিয়ে করতে হলে ১ম স্বামীকে তালাক দেওয়ার ৩মাস পুনরায় বিয়ে করতে পারবে। তা না হলে বিয়ে বৈধ নয়, অবৈধ। ঠিক সে কাজটি পশ্চিম সকদি গ্রামের রফিকুর রহমানের ছেলে প্রতিবন্ধী তাজুল ইসলাম অপু করেছে। গৃহবধু পান্নার বড় বোন সুমিকে হুমকি দিয়ে তার ছোট বোনকে আটকে রেখে এ ঘটনা ঘটায়। সাংবাদিক আসার খবর শুনে প্রতিবন্ধীর ভাই মানিক মিয়া মুঠোফোনে ও শশরীরে এসে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করে। এসময় তিনি বলেন,পরের বিচার আমরা করি, আমাদের বিচার কেউ করার নেই। ইউপি নির্বাচন করবো বিধায় ভাইয়ের এ খবর জানতে পেরে কাউকে না জানিয়ে মেয়েকে বাড়িতে রেখেই বিয়ে দিচ্ছি।
এদিকে গৃহবধু পান্নার ১ম স্বামী করিম ও তার বাবা ঘটনা জানতে পেরে তাকে ঐ বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ ব্যপারে এ নরপশুদের হাত থেকে গৃহবধূকে রক্ষা করতে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী।
শিরোনাম:
রবিবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৪ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।