চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশে সরকারের রক্ষিত জিও ব্যাগ চুরি করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন সংশ্লিষ্টরা। পানি সম্পদ মন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং টাস্কফোর্সের বিশেষ উদ্যোগে এ চুরির রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে। এতে করে রক্ষা পেলো সরকারের প্রায় কোটি টাকা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পানি উন্নয়ন বোর্ড জুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। দেশের আরও কোথাও এমন ঘটনা ঘটছে কিনা সে বিষয়টিও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় টাস্কফোর্সকে খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত রিপোর্ট জাতীয় কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
অভিযোগ উঠে, চাঁদপুর পাউবো’র গোডাউনে দীর্ঘ দিন যাবৎ জরুরি কাজের জন্যে সংরক্ষিত ৬ হাজার জিও ব্যাগ আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে ঠিকাদারদের বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। চাঁদপুরে দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যরা এর সাথে জড়িত বলে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রফিকুল্লাহর বাসার বাবুর্চি মফিজ, হিসাব কর্মকর্তা মাসুম খান এবং ওয়াপদা মসজিদের আশপাশের দোকানদাররা গোডাউন থেকে জিও ব্যাগ বের করে নেয়ার সময় দেখে ফেলে। তারা বিষয়টি স্থানীয় লোকজনের কাছে বলাবলি করলে জিও ব্যাগ চুরির ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়। এ সংবাদ পানি সম্পদ মন্ত্রীর কাছে পৌঁছলে তিনি এবং পানি সম্পদ সচিব বিষয়টি টাস্কফোর্সকে পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন। টাস্কফোর্সের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট রেজিস্টার ও নথিপত্র জব্দ করেছেন। অভিযোগ করা হয়, পাউবো’র গোডাউনে ২০১০ সাল থেকে জরুরি কাজের জন্যে সংরক্ষিত জিও ব্যাগগুলো ছিলো আকারে বড়। বর্তমানে এই সাইজের জিও ব্যাগ বাজারে পাওয়া যায় না। যেসব জিও ব্যাগ পাওয়া যায় তা আকারে ছোট। গত ১৬ মার্চ চাঁদপুরের পাউবো’র তৎকালীন কর্মকর্তারা (যাদের অধিকাংশই অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে বিভাগীয় শাস্তি ভোগ করছেন এবং তাদের নামে দুদকেও অভিযোগ দায়ের রয়েছে) এসব জিও ব্যাগ বুঝিয়ে দেন। সম্প্রতি জরুরি কাজের সময় ঠিকাদারদের সাথে পরস্পর যোগসাজশে গোডাউনে সংরক্ষিত সরকারি জিও এসব ব্যাগই ট্রাকের পর ট্রাক ভর্তি করে প্রকাশ্য দিবালোকে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় নিয়ে ডাম্পিং করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী রফিক উল্লাহর বক্তব্য হচ্ছে, তাকে একটি মহল ফাঁসানোর জন্য এমন চক্রান্তে লিপ্ত। তিনি বলেন, ওই সময়কার নির্বাহী প্রকৌশলী জীবন বাবুর নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছে পাউবো। তাছাড়া তিনি এখান থেকে যাওয়ার সময় আমাকে কোনো জিও ব্যাগ বুঝিয়ে দিয়ে যাননি।
এ ব্যাপারে পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, দুর্নীতি ও অনিয়মের ব্যাপারে তার মন্ত্রণালয় বরাবরই জিরো টলারেন্স দেখিয়ে আসছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. জাফর আহমেদ খান সংবাদ মাধ্যমকে জানান, এই ঘটনায় যারা অপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এডিজি পূর্বাঞ্চল গিয়াস উদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগ পাবার পর টাস্কফোর্স ঘটনাস্থলে গিয়ে কাগজপত্র জব্দ করেছে। আগে যারা এখানে ছিলেন, তারা বলেছেন জিও ব্যাগ রেখে গেছেন। আর বর্তমান প্রশাসন বলছে তারা কোনো জিও ব্যাগ বুঝে পায়নি। কোন্টা সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর ঠিকাদার যদি সত্যিই এই ব্যাগ ব্যবহার করে থাকেন, তবে এর বিল তিনি পাবেন না।
জানা যায়, চাঁদপুর পওর বিভাগের আওতায় চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেডে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ভাঙ্গন রোধে জরুরি ভিত্তিতে ৩০ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং কার্যক্রম চলছে। শুক্রবার পর্যন্ত সেখানে ৮ হাজার ৭৯১টি বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্পের মাধ্যমে যে কাজ করিয়েছে তাতে পুকুর চুরি করা হয়েছে। কাজ না করে অনেকে বিলও নিয়ে গেছে। প্রকল্প কাজে নানা পন্থায় এবং প্রভাবশালী মহলের চাপে কাজের নামে শুভঙ্করের ফাঁকি দেয়া হয়েছে।