শাহরিয়ার খাঁন কৌশিক ॥
চাঁদপুর পৌর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়ায়, পৌর কর্মচারীদের সাথে অবৈধ দখলদার ও সন্ত্রাসীদের কয়েক দফা সংঘর্ষে ঘটনা ঘটেছে। এতে পৌর কর্মচারীরসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় পর পৌর মেয়র নিজে সাহসী ভূমিকা নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক খোকন মজুমদারসহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২ টা হতে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ২ দফা এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে পৌরসভার ভাান্ডার রক্ষক ফয়সাল আহমেদ বাদী হয়ে বিষ্ফোরক ও সরকারী কাজে বাধা প্রদান উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পৌর কর্মচারী ও প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, গতকাল বুধবার চাঁদপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে শহরে ফুটপাতে ও বিভিন্ন স্থানে অবৈধস্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চলছিল। পৌর কর্মচারীদের উচ্ছেদ অভিযানকালে দুপুর সাড়ে ১২ টায় শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান করতে আসলে, অবৈধভাবে দোকানপাট নির্মাণকারীরা ও পার্শ্ববর্তী লেংটা বাড়ির একদল সন্ত্রাসী প্রকৃতির যুবক দেশীয় অস্ত্র/শস্ত্র সজ্জিত অবস্থায় পুলিশের উপস্থিতিতে পৌর কর্মচারীদের উপর অতর্কিত হামলা চালানোর চেষ্টা করে। পরে সেখান থেকে পৌর কর্মচারীরা স্বর্ণখোলা রোডে গিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শেষ করে ফেরার পথে লেংটা বাড়ির সন্ত্রাসীরা শহীদ মিনারের সামনে পৌরসভার গাড়িটি গতিরোধ করে তাদের পিঠিয়ে ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে ৫ জন কর্মচারী মারাত্মক আহত হয়। আহতদের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাা করানো হয়। পৌর কর্মচারীদের উপর হামলা করার খবর শুনে পৌর কর্মচারীরা শহীদ মিনার এলাকায় দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালাতে পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদকে সাথে নিয়ে আসে। উচ্ছেদ অভিযান চলা কালীন পৌর কর্মচারীদের সাথে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় আদালত পাড়া এলাকা ও লেংটা বাড়ির খোকন মজুমদারের ভাই সুমন মজুমদারের নেতিত্বে ৪০/৫০ সন্ত্রাসী যুবক দেশীয় অন্ত্র নিয়ে পৌর কর্মচারীদের উপর ব্যাপক হামলা চালায়। প্রায় আধা ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে পৌর কর্মচারী ও পথচারীসহ কমপক্ষে ১৫ জন দেশীয় অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়। একপর্যায়ে পৌর স্বেচ্ছা সেবকলীগের আহ্বায়ক খোকন মজুমদারসহ একদল যুবক মেয়রের সাথে বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হয় এবং উচ্ছেদ অভিযানে বাধা প্রদান করে। এসময় মেয়র নিজে চাঁদপুর পৌর স্বেচ্ছা সেবকলীগের আহ্বায়ক খোকন মজুমদার (৩৫), ছাত্রলীগ নেতা রাব্বি (২৫) ও ছাত্রদল কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন (৩০) আটক করে পিটুনী দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি এএইচ এনায়েত উদ্দিন একদল পুলিশসহ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। সংঘর্ষে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তিকৃতরা হচ্ছে, আঃ খালেক (৩৫), সোহাগ (২৮), মঞ্জিল (১৫), মোঃ খসর আখন্দ (৩২), খোকন মল্লিক (২৭), মামুন (২৬), জাকির (২৮), সাইফুল (২৮), বাবুল (৪০), হাসানাত (২৯), জাকির হোসেন (৩৮) ও পৌর গাড়ির ড্রাইভার মজিবুর রহমান (৪৫)। এসময় শত শত উৎসুক জণতা পৌর মেয়ররের উদ্যোগের স্বাগত জানায় এবং হাত তালি দিয়ে তাকে ধন্যবাদ জানায়। এ ব্যাপারে পৌর উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব দানকারী পৌর কর আদায়কারী প্রধান তৌাহিদুল ইসলাম চপল জানান, শহীদ মিনার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে লেংটা বাড়ির সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। এতে ১০/১২ জন পৌর কর্মচারী আহত হয়। এসময় ২০/২৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এ ব্যাপারে পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, উচ্ছেদ অভিযানে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে একদল সন্ত্রাসী উচ্ছেদ বাধা প্রদান করে। এসময় চিহ্নিত ৩ জনকে সন্ত্রাসীকে আটক করা হয়। বর্তমানে শহীদ মিনার এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং ওই এলাকায় থম থমে ভাব বিরাজ করছে। পৌরসভার উচ্ছেদ অভিযানে বাধা প্রদান ও কর্মচারীদের উপরে হামলার ঘটনায় পৌরসভার ভান্ডার রক্ষক ফয়সাল আহমেদ বাদী হয়ে খোকন মজুমদার, জাহাঙ্গীর মজুমদার, রাব্বি মজুমদার, সুমন মজুমদার, রাশেদ, মনির ৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০-৬০জনের নামে চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা দায়ের করে। মামলা নং-৫১ তারিখ ২৪-০৬-১৫। আটকৃত শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহ্বায়ক খোকন মজুমদার সহ ৩জনকে পুলিশ আদালতে প্রেরণ করলে আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়।