রফিকুল ইসলাম বাবু, ॥ জন্মদাতা বৃদ্ধ বাবাকে পাগল সাব্যস্ত করে হাত-পা বেঁধে নয় দিন ধরে শিকল বন্দী করে ঘরের মধ্যে আটকে রেখেছে তার স্ত্রী ও সন্তান। অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদগঞ্জ উপজেলার শাশিয়ালী গ্রামে। রাতের আঁধারে আবার ওই বৃদ্ধ বাবাকে ছেলের এলোপাতাড়ি মারধরে চিৎকার চেচাঁমেচিতে ওই গ্রামে এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। শনিবার ভোরে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলের হাতে শিকলবন্দী বৃদ্ধ শরাফত উল্লা বলেন, ‘ভাই আমারে বাঁচান, আমারে মুক্ত করেন। আমি পাগল না।’নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাড়ীর এক যুবক জানায়, এক সপ্তাহ আগে মহসিন তার ক’জন সহযোগী নিয়ে বাবা শরাফত উল্লাকে আটক করে। এক পর্যায়ে শরাফত উল্লার হাত-পা বেঁধে ৮টি তালা লাগিয়ে তাকে শিকলবন্দী করে ঘরের এক কোণে আটকে রাখে। আটক অবস্থায় শরাফত উল্লার চাহিদা মতে খাবার না দেয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু তাই নয়, শরাফত উল্লাকে দুর্বল করে রাখতে ঘুমের ইনজেকশন এনে ঘরে রাখা হয়েছে। শরাফত উল্লার বসতঘরে গিয়ে দেখা যায়, হাত-পা বাঁধা অবস্থায় তালাবদ্ধ শিকল নিয়ে চৌচালা টিনশেড বসতঘরের এক কোণে তিনি বসে আছেন। আর তাকে পাহারা দিচ্ছেন স্ত্রী মনোয়ারা ও সন্তান মহসিন। পারিবারিক ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, শাশিয়ালী গ্রামের শরাফত উল্লার (৬৫) সাথে তার স্ত্রী ও সন্তান মহসিনের পারিবারিক বিরোধ শুরু হয়। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ক’ মাস পূর্বে শরাফত উল্লাকে তার ছেলে মহসিন বাড়ির পাশে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে এলাকাবাসী শরাফত উল্লাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়। চিকিৎসা শেষে শরাফত উল্লা বাড়ি এসে এবার তারই ছেলে মহসিনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তার ডান হাতের দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলে। এরপর থেকেই শুরু হয় বাবা-ছেলের তুমুুল যুদ্ধ। শরাফত উল্লার ৬ ছেলে ১ মেয়ের মধ্যে মহসিন ৫ম। বাকি সন্তানরা নিজেদের কর্মের স্বার্থে ঢাকায় রয়েছেন। কথা হয় শরাফত উল্লার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের সাথে। তিনি জানান, তার স্বামী শরাফত উল্লা মানসিক রোগী, এছাড়াও তার রয়েছে কিছু চরিত্রগত দোষ। তাকে বেঁধে না রাখলে আমরা আতঙ্কে থাকতে হয়। মানসিক রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনো ব্যবস্থা পত্রের প্রমাণ আছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মনোয়ারা বেগম এ মুহূর্তে তা নেই, তবে সহসাই শরাফত উল্লাকে ডাক্তারের কাছে নেয়া হবে বলে জানান।ওইসময় মহসিন নিজের জখমকৃত হাত দেখিয়ে বলেন, ‘এখানে আপনারা কার কথায় এসেছেন। আমার বাবা একজন মানসিক রোগী। যে কারণে বাধ্য হয়ে তাকে শিকলবন্দী করে রাখতে হয়েছে।’তবে ছেলের হাতে শিকলবন্দী বৃদ্ধা শরাফত উল্লা বলেন, ‘ভাই আমারে বাঁচান, আমারে মুক্ত করেন। আমার স্ত্রী আর সন্ত্রাসী সন্তান মহসিন আমার বিরুদ্ধে যা বলছে সবই মিথ্যা কথা। আমি কোনো পাগল নই, আমাকে পাগল বানানো হয়েছে।’উপজেলার সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল ইসলাম সাউদ বলেন, আমিও বৃদ্ধকে শিকল মুক্ত করতে মহসিনকে অনুরোধ করে ব্যর্থ হয়েছি।’জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন পাটওয়ারী বলেন, ‘শরাফত উল্লা কোনো পাগল কিংবা মানসিক রোগী নন। এরা বাবা ছেলে দুজনই উগ্র স্বভাবের।’উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যাস রিনা নাছরিন বলেন, জন্মদাতা বাবাকে শিকলবন্দী করে রাখার বিষয়টি জেনে আমি তাকে শিকল মুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়ে ঘটনাস্থলে আমার স্বামীকে পাঠিয়েছি। কিন্তু সফল হতে পারিনি। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল হক বলেন, ‘বিষয়টি জেনেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে শীঘ্রই বৃদ্ধকে শিকলমুক্ত করবো।’
শিরোনাম:
বুধবার , ১৪ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।