ফাহিম শাহরনি কৌশিক খান
চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে মডেল থানার ৪তলা ভবনের নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভবনের কাজ চলা অবস্থায় অস্থায়ী ব্যারাকের পিলার ধ্বসে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে অল্পের জন্য রক্ষা পায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও বিচারপ্রার্থী কয়েকজন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে ও গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্ববধানে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চাঁদপুর মডেল থানায় ৬তলা ফাউন্ডেশনের ৪তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। আর এ কাজ টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নেওয়াজ ট্রেডার্স পায়। পরবর্তীতে সাব ঠিকাদার হিসেবে নাহার ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী বিপ্লব পাটওয়ারীসহ বেশ কয়েকজন কার্যক্রম শুরু করে। প্রথম অবস্থায় নবনির্মিত ভবনটির কাজের মান ভালো থাকলেও পরবর্তীতে তার মান হ্রাস পেতে থাকে। পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের কোয়ার্টার ভেঙ্গে ফেলায় তাদের বসবাসের জন্য অস্থায়ীভাবে মডেল থানার মূল ভবনের উপরে ও ট্রাফিক কার্যালয়ের উপরে অস্থায়ী ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। যাতে ব্যয় হয় ১২ লাখ টাকা। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে নিয়োজিত ঠিকাদার বিপ্লব পাটওয়ারী অস্থায়ী ব্যারাকটি নির্মাণ করলেও তার গুণগত মান ভালো না থাকায় একটি নির্মাণাধীন পিলার হঠাৎ করে ভেঙ্গে মডেল থানার এএসআই আওলাদের গায়ের উপরে পড়ে। এ সময় তিনি সরে যাওয়ার অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পায়। ঘটনাটি ঠিকাদার ও গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণকে অবগতি করালেও তারা ঠিকাদারের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা পিলার ভাঙ্গার দৃশ্য ধারণ করে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরেও এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি। ঘটনাটি ধামা-চাপা দেয়ার জন্য ঠিকাদার বিপ্লব পাটওয়ারী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা যায়, ভবন তৈরিতে নি¤œমানের পাথর, সিমেন্ট ও বালু দেয়ার কারণে এর স্থায়ীত্ব নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। পুরাতন ভবনের পুরানো ইট ও ইটভাটা থেকে নি¤œমানের ইট এনে নতুন ভবনের কাজে লাগাচ্ছে।
গিয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে এ দৃশ্য দেখা যায়। নবনির্মিত ভবনে নিযুক্ত কয়েকজন শ্রমিক জানায়, ঠিকাদার নি¤œমানের ইট আনার কারণে আমরা তা ব্যবহার করছি। ইটভাটা থেকে ২নং ও ৩নং ইট মিশিয়ে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। নবনির্মিত ভবনের কাজ এ ধরনের ইট দিয়েই করা হয়েছে। এদিকে মডেল থানার নবনির্মাণাধীন ভবন সার্বক্ষণিক পরিদর্শন করার জন্য গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ ভৌমিকসহ আরো কয়েকজনকে দায়িত্ব দেয়া হলেও ঠিকাদারের সাথে আঁতাত করে নি¤œমানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, মডেল থানার নবনির্মিত ভবনের ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলেও নিয়োজিত ঠিকাদার গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বরত প্রকৌশলীর সাথে যোগাসাজসে নি¤œমানের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া এর সাথে সম্পৃক্ত যারা রয়েছে, তাদেরকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে কাজ করানো হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঠিকাদার বিপ্লব পাটওয়ারীর কাছে নি¤œমানের ইট ব্যবহার ও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, নবনির্মাণাধীন ভবনটি কাজ কম দরে নেয়া হয়েছে। ইটভাটা থেকে ১নং ইটই এনে লাগানো হচ্ছে। ব্যারাকের পিলারটিতে আস্তর না দেয়ায় তা ভেঙ্গে পড়েছে। এ সময় ভাঙ্গা ইট ও নি¤œমানের কাজের দৃশ্যটি দেখানোর পর তিনি এ প্রতিবেদককে সংবাদ প্রচার না করার জন্য অনুরোধ জানায়।
এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী নূরুল হক জানান, মডেল থানা ব্যারাকের ফিলার ভাঙ্গার বিষয়টি জানা নেই। নবনির্মিত ভবনটি কাজের তদারকির জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী জীবন কৃষ্ণ ভৌমিককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। নি¤œমানের কাজ হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তবে মুন্সীগঞ্জ থেকে ১নং ইট এনে ভবনের কাজ করার জন্য বলা হয়েছে।