নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুর মাছ ঘাটে ইলিশের ব্যাপক আমদানি অব্যাহত রয়েছে। দামও আগের তুলনায় কমেছে। ভাদ্র মাস থেকে আশ্বিনের গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত রূপালী ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুর মাছ ঘাটে রেকর্ড পরিমাণ মাছ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর মাছঘাটে ইলিশ আর ইলিশ। মাছের চাপ বেশি হওয়ায় ঘাটে বরফ সঙ্কট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত বরফ না পাওয়ায় মাছে পচন ধরেছে। সবাই ব্যস্ত বোট থেকে মাছ আনলোড করে আড়তে তোলা, ওজন দেয়ার কাজে। হাজী মালেক খন্দকার, শবে বরাত কোম্পানি, গফুর জমাদার, মেজবাহ মাল, সিরাজ চোকদার (বড়), দুলাল গাজী, বাবুল হাজী, কালু ভূঁইয়া, উত্তম দাস, হযরত আলী বেপারী, কুদ্দুছ খা নামে বড় বড় মৎস্য আড়ৎগুলোতে ইলিশের স্তূপ আর স্তূপ। সেখানে পা ফেলার জায়গা নেই। প্রকাশ্যে দাম হাঁকা হচ্ছে পাইকার তা সবর্োচ্চ দাম দিয়ে মাছ কিনে নিয়ে যার যার মোকামে প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দিচ্ছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী কালু ভূঁইয়া জানান, প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার মণ ইলিশ এ ঘাটে আমদানি এবং বিক্রি হচ্ছে। প্রতি মণ ইলিশ আকার ভেদে অর্থাৎ ৫শ’ গ্রাম থেকে ৬-৭শ’ এবং ৮-৯শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৬ হাজার টাকায়। একটাই ১ কেজি ও তার উপরে ইলিশের মণ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি ইলিশ আকারভেদে ৩শ’ টাকা থেকে ৪-৫শ’ টাকা এবং ৭শ’ থেকে ৭৫০ টাকা। লোকাল মাছের দাম একটু বেশি। আড়ৎদাররা জানিয়েছেন, চাঁদপুর ঘাটে যা মাছ আসছে সবই সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার। ভাদ্র মাস থেকে এ যাবৎ ভোলার চরফ্যাশন, ডালের চর, পটুয়াখালীর লেতরা, দেইরচর, নোয়াখালীর হাতিয়াসহ দক্ষিণ অঞ্চলে এবার ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। সরকার দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করায় ওই এলাকার কিছু ইলিশ চাঁদপুর আসে। নামার ইলিশ আসায় মাছ ঘাট এখন সরগরম দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি ফিশিং ট্রলারে চাঁদপুরের ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ এমনকি কোটি টাকা দাদন রয়েছে।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী গাজী জানান, তুলনামূলক মাছের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। আগের পর্যায়ের ইলিশ আসেনি। এবার মৌসুমের শেষ পর্যায় কিছু ইলিশ দেখা দিয়েছে। এ মাছ আরো ২ মাস আগে ধরা পড়ার কথা ছিল। ভরা মৌসুম থেকে ইলিশ ধরা পড়লে মাছের দাম আরো কম হতো। তিনি আরো জানান, চাঁদপুর মেঘনা অববাহিকায় ইলিশ খুবই কম ধরা পড়ছে। মাছ না পাওয়ার কারণ হিসেবে প্রজনন মৌসুমে কারেন্ট জালের ব্যাপক ব্যবহার, জাটকা নিধন, নদীর গভীরতা হরাস, বর্ষায় পানি কম হওয়া এবং ডিম ওয়ালা (মা) ইলিশ নিধনের জন্য দায়ী। তিনি মা ইলিশ রক্ষায় অভিযান ১০ দিন না রেখে ১ মাস এ অভিযান দেয়া হলে ইলিশের উৎপাদন আরো বহু গুণে বৃদ্ধি পেতো বলে মতামত ব্যক্ত করেন।
মৎস্য ব্যবসায়ী ও চাঁদপুর জেলার শীর্ষ আয়কর দাতা হাজী আব্দুল মালেক খন্দকার জানান, দেরিতে হলেও মোটামুটি ভালো মাছ ঘাটে এসেছে। তিনি বলেন, সরকার এলসি বন্ধ করেছে ঠিকই কিন্তু সাগর এলাকা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ প্রাচার হয়ে যাচ্ছে। তা না হলে আরো ব্যাপক ইলিশ আমরা পেতাম। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত মাছ ঘাটে অবস্থান করে দেখা যায়, ফিশিং বোট থেকে আড়তে মাছ উঠানো হচ্ছে। শুধু ফিশিং বোটেই নয়, চতুর্দিক থেকে নদী ও সড়ক পথে শত শত মণ ইলিশ এখানে বিক্রির জন্য আনা হয়। এদিকে আড়তে ইলিশের দাম কম হলেও হাট-বাজারে ইলিশের দাম বেশি। দামের এই তফাৎ কী কারণে জানতে চাইলে মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল খায়ের গাজী, আব্দুর রব চোকদার ও মিজান জমাদার জানায়, মাছের সাইজ অনুযায়ী বড় মাছের বড় দাম, ছোট মাছের ছোট দাম। উদাহারণস্বরূপ বলেন, আড়তে ১ মণ ইলিশ পাইকারি দরে কেনা হলে তার মধ্যে ২০ কেজি ইলিশ ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ওজনে ১০ কেজি ৮০০ গ্রাম এবং ১০ কেজি মাছ পাওয়া যায় ১ কেজি সাইজের। ছোট বড় মিলিয়ে পাইকারী দরে মাছ কেনা হয়। বিক্রির সময় বাছাই মাছের দাম বেশি পড়ে। পাইকারী ও খুচরা বাজারে এখন তেমন পার্থক্য নেই বলে জানায়।