চাঁদপুর মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মঞ্চে ৬ষ্ঠ দিনে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ৬ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় এ স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা বিজয় মেলার স্মৃতিচারণ পরিষদের সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা ইয়াকুব আলীর সভাপতিত্বে এবং আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মহসিন পাঠানের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে প্রধান স্মৃতিচারকের বক্তব্য রাখেন, সদর এএসপি সার্কেল মুক্তিযোদ্ধা কাজী হেলাল উদ্দিন। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আমি চাঁদপুরে যোগদানের পর প্রথমে চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে চেষ্টা করি। মুক্তিযুদ্ধেল ইতিহাস নিয়ে তেমন কোন বই না থাকলে দেলোয়ার হোসেনের লেখা একটি বই থেকে চাঁদপুরের অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের নাম জানতে পারি। যারা যুদ্ধের সময় জীবন দিয়েছে এবং আহত হয়েছেন। তাদেরকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। মুক্তিযোদ্ধের সময় আমি ব্রাক্ষণব্রাড়িয়ায় যুদ্ধ করেছি। ২৫ মার্চের পর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তখন আমি পাবনায় এ্যাডওয়ার্ড কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলাম। প্রথম দফায় পাবনায় পাকিস্তানি হানাদাররা ১শ’ খানেক মানুষ হত্যা করে। পরে আমি ব্রাক্ষণবাড়িয়া উদ্দেশ্যে রওনা হই। আমি এলাকায় আসার পরে বঙ্গবন্ধু সিলেটে আসেন একটি জনসভায় । আর সেখানে আমার চোখে পড়ে একটি পোষ্টার। যাতে দেখা যায় গরু ঘাষ খাচ্ছে পূর্ব পাকিস্থানে আর পাইপ দিয়ে দুধ চলে যাচ্ছে পশ্চিম পকিস্থানে। সে থেকেই আমার কিশোর মনের দাগ কাটে যুদ্ধের বাসনা জন্য। পরে যখন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলে যুদ্ধে অংশ নেই। যুদ্ধে অংশ নিতে ভারতে যাই প্রশিক্ষণ নিতে। বর্ডার দিয়ে ভারতে যাবার সময় দেখলাম পাকিস্তানি হানাদার ও রাজাকাররা পাহারা দিচ্ছে। আমরা তখন জনপ্রতি রাজাকারদের ৫০ টাকা করে দিয়ে বর্ডার পার হই। পাকিস্তানি হানাদাররা তা টের পেয়ে যায়। পরে তারা গাড়ি নিয়ে এস এলোপাথারি গুলি ছোড়তে থাকে। তখন ছিলো রাত। আমরা একটি ডোবায় নেমে সকলের নাক উঁচু করে কয়েক ঘন্টা অপেক্ষা করি। পরে যখন তাদের গাড়ি চলেগেল তখন আমরা সাঁতার কেটে নৌকায় উঠে আগরতলায় গিয়ে পৌঁছালাম। তখন ভোর হয়ে গেছে। আমাদের পড়নের কাপর চোপর ভিজা এবং সাথে থাকা টাকা পয়সা ভিজে গেছে। রাস্তার পাশে বসে কাপড় চোপড় শুকাচ্ছি। তখন আমার এক ভাইয়ের সাথে দেখা হলো। তার সাথে কথা বলে আগরতলায় প্রশিক্ষণ স্থানে গেলে নাগাল্যান্ডের এক অফিসার আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষণ শেষে আমরা দেশে ফিরে আসি। তার পর থেকে শুরু হয় দেশ রক্ষার যুদ্ধ। তিনি আরো বলেন, যুদ্ধের সময় গ্রামের সাথে যাদের সম্পর্ক ছিলো তারাই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধে গ্রামবাংলার কৃষক শ্রমিক সাধারণ মানুষের অংশ গ্রহণ ছিল সব চেয়ে বেশী। ১৬ ডিসেম্বরের পূর্বে আমরা বি-বাড়িয়া জেলাকে হানাদার মুক্তকরে ফেলি। আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রক্ষায় আপোষ করবো না।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত সহকারী কমান্ডার কাজী নেছার উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা বিজয় মেলার স্মৃতিচারণ পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা রঞ্জিত রায়, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সহকারী কমান্ডার সাধন সরকার।
শিরোনাম:
বুধবার , ১৬ জুলাই, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১ শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।